তাহিরপুরে বালু উত্তোলনের দায়ে নৌকাসহ আটক ৮
সুনামগঞ্জে তাহিরপুর উপজেলার সীমান্ত ঘেঁষে ইজারাবিহিন শান্তিপুর ও মাহারাম নদী থেকে গত ১১ মাসে অর্ধশত কোটি টাকার বালু লুট করেছে বালুখেকো চক্র। গত ৫ আগষ্টের পর থেকে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অবৈধভাবে প্রতিদিন দিনে ও রাতে বালু উত্তোলন ও বিক্রি করছে বালু খেকো চক্রটি।
ঐসব বালু খেকো চক্র স্থানীয় ও প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থাকায় থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। এর ফলে সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব, অপর দিকে প্রকৃতি পরিবেশ প্রতিবেশ জীববৈচিত্র্য ও বসতবাড়ি হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। এই বিষয়ে পরিবেশ ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন সচেতন এলাকাবাসী।শান্তিপুর ও মাহারাম নদী উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নে অবস্থান। নদী দুটি যাদুকাটা নদীর শাখা নদী। যাদুকাটা নদী থেকে পূর্ব দিক দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
স্থানীয় এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, বালু খেকো চক্রটি শান্তিপুর নদী থেকে বালু উত্তোলন ও বিক্রি করে হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা। প্রশাসন মাঝে মধ্যে অভিযান চালিয়ে দু-চারটি নৌকা ও সাধারণ বালু শ্রমিকদের আটকে মামলা ও জেল জরিমানা করলেও অধরাই থেকে যায় মূল গডফাদাররা।
বুধবার(২৫ জুন) দুপুরে উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের শান্তিপুর নদীতে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে তাহিরপুর থানার বাদাঘাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই হাফিজুর রহমান।
আটককৃতরা হলেন-উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের খাসতাল গ্রামের মৃত ইসমাঈল মিয়ার ছেলে মজিবুর রহমান (২৬), একই গ্রামের আব্দুল কুদ্দুছের ছেলে আকরাম (২৫), আব্দুস সালামের ছেলে জসিম মিয়া (২০), আব্দুল করিমের ছেলে দেলোয়ার হোসেন (২৫), আলা উদ্দিনের ছেলে রুবেল মিয়া (২০), ইসমাঈলের ছেলে পাবেল মিয়া (১৯), একই ইউনিয়নের শান্তিপুর গ্রামের আব্দুল জলিলের ছেলে সাইদুল্লাহ(২০), একই গ্রামের দ্বীন ইসলামের ছেলে শাহনুর (২৩)।
পুলিশ জানায়, শান্তিপুর নদী থেকে দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞ অমান্য করে একটি বালু খেকো সিন্ডিকেট চক্র অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বিক্রি করছে। এরই ধারাবাহিকতায় সকাল থেকেই শান্তিপুর নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে নিয়ে যাচ্ছে একটি সঙ্ঘবদ্ধ চক্র। এমন সংবাদের ভিত্তিতে তাহিরপুর থানার ওসি দেলোয়ার হোসেনের দিকনির্দেশনায় বাদাঘাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই হাফিজসহ সঙ্গীয় পুলিশের একটি টিম অভিযান চালায় শান্তিপুর নদীতে। এ সময় দুটি বালু বোঝাই নৌকাসহ আটজন বালু শ্রমিককে আটক করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ রয়েছে, তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য জিয়াউর রহমান জিয়ার ছোট ভাই একই ইউনিয়নের মৎস্যজীবি লীগের সভাপতি মাসুক সরদার, একই ইউনিয়নের রামেরশ্বরপুর গ্রামের আলীনুর সরদার, বালিয়াঘাট গ্রামের এরশাদ সরদার ও উত্তর বড়দল ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য পুরানঘাট গ্রামের আবু তাহের মেম্বার, উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক চতুরভুজ গ্রামের সুরুজ আলীর ছেলে আশিকুল ইসলাম আশিক (৩৫), একই গ্রামের রমজান আলীর ছেলে সুজন মিয়া (৪২) ৫ আগষ্টের পর থেকে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও বিক্রি করছে।
উপজেলার বাদাঘাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই হাফিজুর রহমান জানান, বালু বোঝাই দুটি নৌকাসহ আটককৃতদের তাহিরপুর থানায় নিয়া আসা হয়েছে। আটককৃতদের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদি হয়ে নিয়মিত মামলার প্রস্তুতি চলছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হাসেম জানান,বালু উত্তোলন ও বিক্রি বন্ধে কঠোর নজরদারি ও আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।