ড. অঞ্জন কুমার দেব রায়
টাংগুয়ার হাওরের ওয়াচ-টাওয়ার এলাকার পানি বিষাক্ত মনে হয়েছে
টাংগুয়ার হাওরের ওয়াচ-টাওয়ার এলাকার পানি আমার কাছে বিষাক্ত মনে হয়েছে। কারন পানি মারাত্মক ভালো দূষিত হয়েছে। এই হাওর কতটুকু বহন করতে পারবে তা বুঝতে হবে বলে জানিয়েছেন কৃষি,পানি সম্পদ ও গ্রামীণ প্রতিষ্ঠান বিভাগ বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশন এর অতিরিক্ত প্রধান ড. অঞ্জন কুমার দেব রায়।
রবিবার (২৯ জুন) সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের কনফারেন্স রুমে টাঙ্গুয়ার হাওর জলাভূমি বাস্তুতন্ত্র প্রকল্পের সম্প্রদায় ভিত্তিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ক কর্মশালায় প্রধান অতিথি বক্তব্যে তিনি কথা গুলো বলেন।
এসময় তিনি বলেন, আমি টাংগুয়ার হাওর ঘুরে দেখেছি শুধু এই হাওর এরই নয় গ্রামের পাশেও মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয় ঘটেছে। এই হাওর টাই শেষ, এই শেষ থেকেই শুরু করার সুযোগ আছে, সেই সুযোগ কাজে লাগাতে চাই সবাইকে সাথে নিয়ে। এই প্রকল্পে ৪৪-৪৫ কোটি টাকা ব্যয় করে আগের অবস্থানে ফিরিয়ে আনতে চাই। এই সময়টা দীর্ঘ মেয়াদী। ভালবাসা শুধু শাসন ও করতে হবে। সুন্দরবন ও শেষ হয়ে গেছে। টাংগুয়ার হাওর কে পরিবেশ বান্ধব করে পূর্বের অবস্থানে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়েই আমরা এগিয়ে যাবো তার জন্য পাশে থাকতে হবে বলে তিনি জানান।
এসময় তিনি টাংগুয়ার হাওর কে নিয়ে উদাহরণ হিসেবে বলেন, ঘোড়া গাড়ি দিয়ে ধান টানা হয়,সেই গাড়িতে একজন বসে লাঠি দিয়ে মারছে আরও দুজন গাড়িতে বসে আছে, গাড়ি দিয়ে ধান নিতেই হবে এই অত্যাচার করা হচ্ছে। ঘোড়া দুটি ধান বহন করে নিতেই হবে তার জন্য লাঠি দিয়ে আগাত করছে এবার কি চিন্তা করছে যে ঘোড়া দুটির মানুষ ধান বহন করার ক্ষমতা আছে কি নাই। টাংগুয়ার হাওরের অবস্থান সেই ঘোড়ার মতই হয়েছে। এথেকে আমাদের সবাই কে বের হতে হবে।
হাওর পাড়ের বাসিন্দাদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, টাংগুয়ার হাওরকে রক্ষা করতে হলে হাওর পাড়ের বাসিন্দাদেরকে এগিয়ে আসতে হবে। সহযোগীতা করতে হবে। পরামর্শ নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা ঢাকায় বসে অনেক কিছুই শুনি আজ এই প্রোগ্রাম করে অনেক তথ্য পেলাম যা আমাদের কাজে সহায়ক হবে।মাছ, গাছ, পাখি, প্রকৃতি, পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য ছিল আজ নেই। টাংগুয়ার হাওর টি মৃত। এটিকে আমরা পুনোজ্জিবিত করতে চাই। তা সম্ভব কেবল হাওর পাড়ে বাসিন্দাসহ সবার সহযোগীয়।
হাউজ বোডসহ নৌযান গুলোর উদ্দেশ্য তিনি আরও বলেন, হাওরে আসবেন আমাদের কোনো বাঁধা নেই তবে সকল পর্যটন নীতিমালা লঙ্ঘন করবে তা হবে না। আপনারা ছোট পরিসরে আসেন, ৪০-৫০ জন পর্যটক নিয়ে একতলা দুতল বড় বড় হাউজ বোড নিয়ে আসতে হবে কেন, হাওরে এসে পর্যটকগন হৈহল্লা করবে,হাওর ধংশ হয় তা করতে পারবে না। হাউজবোড গুলো কে অবশ্যই নিয়ম নীতি মেনে চলতে হবে। পর্যটন বিকাশে স্থানীয় জনগনের অংশীদারত্ব রাখতে হবে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বার বার নির্দেশনা দিলেও তা মানা হচ্ছে না। সবাই কে নিজ নিজ অবস্থা থেকে সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। হাওর পাড়ে বাসিন্দাদের বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে সে বিষয় নিয়ে আমরা কাজ করবো।
কর্মশালায় তাহিরপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হাসেম এর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন,প্রকল্প পরিচালক এবং ঢাকা ল্যাবরেটরি,পরিবেশ ও পরিবেশ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক শাহেদা বেগম,প্রকল্প ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন,ঢাকা ল্যাব ডিওই পরিচালক মোহাম্মদ সোলায়মান হায়দার, অতিরিক্ত সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক সমর পাল, মধ্য নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উজ্জ্বল রায়, পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন সাধারণ সম্পাদক ফজলুল করিম সাঈদ প্রমুখ।
এসময় টাংগুয়ার হাওর পাড়ের বাসিন্দা, শিক্ষক, সাংবাদিক, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান,ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য, নৌপর্যটন শিল্প সমবায় সমিতি, হাউজবোড অর্নাস এসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন সংগঠনের লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
এসময় হাওর পাড়ে বাসিন্দাগন টাংগুয়ার হাওরকে ধংশের জন্য এনজিও সংস্থাকে দায়ী করে। আর তাদের সমস্যার কথা ও টাংগুয়ার হাওর কিভাবে রক্ষা করে পূর্বের অবস্থানে নেয়া যায় তার জন্য পরামর্শ দেন।