জনপ্রতিনিধিদের প্রতি ক্ষোভ
প্রবাসীদের অর্থায়নে ভাঙা রাস্তা সংস্কার করছেন এলাকাবাসী
হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার মিরপুর ইউনিয়নের পূর্ব লাকুড়িপাড়া গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত ৩ কিলোমিটার ভাঙাচোরা রাস্তা সংস্কারে এগিয়ে এসেছেন প্রবাসীরা। দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে আবেদন-নিবেদন করেও কোনো সহযোগিতা না পেয়ে হতাশ হয়ে এলাকাবাসী নিজেরাই উদ্যোগ নেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পূর্ব লাকুড়িপাড়া গ্রামের এই রাস্তাটি দীর্ঘদিন ধরে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছিল। বর্ষা মৌসুমে কাঁদা-পানিতে পথচারীদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হতো। শিক্ষার্থী, নারী ও বৃদ্ধদের চলাফেরা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছিল। এমন পরিস্থিতিতে এলাকার প্রবাসীরা একজোট হয়ে অর্থ সহায়তা পাঠান এবং এলাকাবাসী নিজেদের শ্রম দিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে রাস্তা সংস্কারের কাজ শুরু করেন। ইতোমধ্যে সংস্কার কাজের অর্ধেকের বেশি শেষ হয়েছে। স্থানীয় জুবাইদ মিয়া জানান, আমরা বারবার জনপ্রতিনিধিদের বলেছি, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। শেষ পর্যন্ত আমাদের প্রবাসী ভাইদের সহায়তায় রাস্তাটির সংস্কার শুরু হয়েছে। আশা করি এখন অন্তত চলাচলের উপযোগী হবে।
টমটম চালক আয়াত আলী জানান, ভাঙাচোরা সড়কে গাড়ির ক্ষতি হয়, সময় ও ভাড়াও বেড়ে যায়, যা যাত্রীদের রাগিয়ে দেয়। তাই এই সড়কে যেতে মন চায় না। পথচারী রজবুন্নেছা বলেন, রোগী নিয়ে জরুরিভাবে যেতে চাইলে, ভাঙাচোরা রাস্তার কারণে সম্ভব হয় না। গাড়িও মেলে না, পেলেও ভাড়া বেশি চায়। মিরপুর এফএন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহি অসহায়ভাবে বলে, বৃষ্টি হলে রাস্তায় চলাচল করা যায় না, শার্ট প্যান্ট ময়লায় নষ্ট হয় এক কথায় যাতায়াতে আমাদের খুবই কষ্ট হয় । তাই রাস্তাটি দ্রুত পাকাকরণের দাবি জানাই। জাহেদ মিয়া নামে এক ব্যক্তি জানান, শুনেছি টেন্ডার হয়েছিল কিন্তু কি কারণে বাতিল হলো আমাদের জানা নেই। প্রবাসীরা আপাতত সংস্কার করে দিচ্ছেন, সাময়িক দুর্ভোগ লাঘব হবে, কিন্তু আমরা স্থায়ীভাবে এই সড়কের পাকাকরণ চাই। মনাফ মিয়া বলেন, ভাঙা রাস্তার কারণে আমাদের এলাকার কৃষকরা কৃষি পণ্য সঠিক সময়ে বাজারে বিক্রি করতে পারছেন না, আমরা সরকারি সহযোগীতা না পেয়ে তাই প্রবাসীদের সহযোগীতা ছেয়ে ছিলাম তারা আজ সংস্কার করছেন তবে আমরা সরকারিভাবে পাকাকরণ চাই।
স্থানীয় দুবাই প্রবাসী জালাল মিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “রাস্তার জন্য চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ সংশ্লিষ্ট সবার সাথে যোগাযোগ করে সহযোগিতার আশ্বাস পেয়েছি মাত্র, কাজের কাজ কিছুই হয়নি। অবশেষে আমি সহ পূর্ব লাকুড়িপাড়া এলাকার বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত অর্ধশতাধিক প্রবাসী ভাইয়ের টাকায় রাস্তা ঠিক করছি, অথচ আমাদের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা চুপ। এটা দুঃখজনক। এলাকাবাসী মনে করেন, যদি সরকারিভাবে নজর দেওয়া হতো তবে এমন দুর্ভোগ পোহাতে হতো না। এখনো তারা চান রাস্তাটি স্থায়ীভাবে পাকা করা হোক। দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাটি বেহাল অবস্থায় পড়ে থাকলেও সংশ্লিষ্ট কোনো জনপ্রতিনিধির দৃষ্টি না পড়ায় এলাকাবাসী তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বর্ষা মৌসুমে রাস্তাটিতে হাঁটাও দুষ্কর হয়ে পড়ে, যার ফলে স্কুল, মাদ্রাসা ও বাজারে যাতায়াত করতে গিয়ে প্রতিদিন বাহুবলের দক্ষিণাঞ্চলের ফদ্রখলা, রাউদাগাও, দত্তপাড়া, নোয়াগাও, লাকুড়িপাড়াসহ ৬-৭টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের দুর্ভোগ পোহাতে হতো শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষকে। দুর্ভোগের এক দীর্ঘ উপাখ্যান পূর্ব লাকুড়িপাড়া গ্রামের প্রধান সড়কটি যেন স্বাধীনতার পর থেকে উপেক্ষিত। স্থানীয়দের অভিযোগ, এই দীর্ঘ সময়ে কোনো জনপ্রতিনিধি সড়কটি পাকাকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেননি। এলাকাবাসীর দাবি, রাস্তাটি সরকারি বাজেটে পাকাকরণ না হওয়া পর্যন্ত এইভাবে সংস্কার চালিয়ে যাওয়া হবে। একইসাথে তারা জনদুর্ভোগ লাঘবে দ্রুত সরকারি সহযোগিতাও কামনা করেছেন। বাহুবল উপজেলা প্রকৌশলী বিভাগের সার্ভেয়ার উজ্জ্বল মন্ডল জানিয়েছেন, রাস্তার টেন্ডার হয়েছিল, তবে ঠিকাদারের মৃত্যুর কারণে বাতিল হয়েছে। এরপর রিটেন্ডারের জন্য চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে এবং বরাদ্দ পেলেই পাকা নির্মাণ কাজ শুরু হবে।