খামারের মাছ-মাংস আর ফল-ফসলে স্বপ্নের মতো জীবন হান্নানের

গোলা ভরা ধান আর পুকুর ভরা মাছের স্বপ্ন কতজনই না দেখেন! তবে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার বাহারমর্দ্দান গ্রামের মো. আবদুল হান্নানের মতো কয়জন সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে পারেন। অবসরপ্রাপ্ত এই ব্যাংক কর্মকর্তা নিজের জমিতে প্রয়োজনীয় প্রায় সব খাদ্যপণ্য উৎপাদন করেন। লবণ-চিনি ছাড়া বাজার থেকে তেমন কিছু কিনতে হয় না তাঁর। শাকসবজি, ফলমূল, মাছ, ডিম ও মাংস—সবই আসে নিজের খেত, খামার, বাগান ও পুকুর থেকে।

আবদুল হান্নান ছিলেন একটি বেসরকারি ব্যাংকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। মাটির প্রতি টান ছিল শৈশব থেকেই। পড়াশোনার সময় ধান চাষে হাতেখড়ি। পরে ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স (এনসিসি) ব্যাংকের সিলেট অঞ্চলের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে ২০১৮ সালে অবসর নেন। অবসরজীবনে তিনি মাটির টানেই ফিরে গেছেন চাষাবাদে। শুরু করেন শাকসবজি, মসলা, দেশি-বিদেশি ফল, মাছ এবং দেশি জাতের মোরগ পালন। তাঁর বাগানে শোভা পাচ্ছে সৌদির খেজুর থেকে শুরু করে অ্যাভাকাডো, জলপাই, আতাসহ দেশি-বিদেশি নানা ফল।

সম্প্রতি এক দুপুরে বাহারমর্দ্দানে আবদুল হান্নানের বাগানে গিয়ে দেখা যায়, একজন শ্রমিক নিয়ে তিনি নিজেই গাছের পরিচর্যা করছেন। বাগানে দেশি-বিদেশি অনেক জাতের গাছ লাগানো। কোনোটাতে ফল এসেছে। কোনোটা নতুন লাগানো। বাগানের চৌহদ্দির মধ্যে পুকুর। পুকুরেই চাষ হচ্ছে রুই-কাতলা, মৃগেল, কার্ফু, পাঙাশসহ বিভিন্ন জাতের মাছ। প্রয়োজন হলেই পুকুরে বড়শি ফেলেন তিনি।

এই সৌখিন খামারি বলেন, চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর চাষাবাদের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে নেন। প্রায় ৬০ শতাংশ জমিতে শাকসবজি ও মসলার চাষ শুরু করেন। ধান চাষ আগে থেকেই করতেন। পেঁয়াজ, রসুন, আদা, হলুদ, শর্ষে, দারুচিনি, মরিচ, ধনিয়া, তেজপাতা—সবই নিজে উৎপাদন করেন। শর্ষে থেকে পরিবারের ভোজ্যতেলের চাহিদা পূরণ হচ্ছে। এবার মাছের খাবারের চাহিদা মেটাতে ভুট্টা চাষও শুরু করবেন। ৬০ শতাংশ জমিতে দেশি-বিদেশি ফলের চাষ করেছেন। সৌদি খেজুরের একটি গাছে এবার এক থোকা খেজুর এসেছে। অনেক খেজুরগাছ নিজেই চারা তৈরি করে লাগিয়েছেন। বাড়ির আশপাশের ৬০ শতাংশ জমিতেও আছে নানা প্রজাতির গাছ। ১০০ থেকে ১৫০টি দেশি জাতের মোরগ–মুরগি পালেন। সেখান থেকেই ডিম ও মাংসের চাহিদা পূরণ হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা জুলফিকার আলী ভুট্টো বলেন, যখন যে মৌসুম, তখন সেই রকম সবজি চাষ করেন আবদুল হান্নান। ফসল, ফল আর মাছে ভরা সংসার তাঁর। তেমন কিছু তাঁকে কিনে খেতে হয় না।

আবদুল হান্নান প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুরুর সময় তেমন কিছু জানতাম না। ধীরে ধীরে শিখেছি, অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি। এখন অনেকে আমার কাছ থেকে চাষাবাদের পরামর্শ নিতে আসেন। আমি নিজের মতো করে মাছের খাবার বানাই, ওষুধ দিই, জৈব সার উৎপাদন করি। বাগান ও খামারের সব কাজ নিজেই তদারক করি।’

পরিবারের প্রয়োজন মিটিয়ে উদ্বৃত্ত ফল ও পণ্য বাজারেও বিক্রি করেন আবদুল হান্নান। জানালেন, এখন পর্যন্ত পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। এখন শুধু পরিচর্যার খরচ। বেশ তৃপ্তি নিয়ে তিনি বলেন, ‘লবণ-চিনি ছাড়া আর কিছু কিনি না। মাছ-মাংস, ফল-ফসল—সব নিজেরই উৎপাদন। চেষ্টাটাই আসল। খুব বেশি টাকা খরচ না করেও অনেক কিছু সম্ভব।’

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন