অবৈধপথে মাদারীপুর থেকে লিবিয়া হয়ে ইতালির পথে যাত্রা করে পাঁচ মাস ধরে ১৪ যুবক নিখোঁজ রয়েছেন। দালালদের খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব জেলার রাজৈরের একটি ইউনিয়নের ১৪ যুবকের পরিবার। প্রতারকরা প্রথমে যুবকদের লিবিয়ার বন্দিশালায় আটকে রেখে চালায় অমানবিক নির্যাতন। ভুক্তভোগী পরিবার ভিটেমাটি বিক্রি করে আর চড়া সুদে মুক্তিপণের লাখ লাখ টাকা এনে দালালদের হাতে তুলে দিলেও পাঁচ মাস ধরে সন্তানদের খোঁজ মিলছে না।
আদরের সন্তান খলিলের খোঁজ নেই পাঁচ মাস। সন্তানকে ফিরে পাওয়ার আশায় ছবি হাতে নিয়ে বাবা আজিজ খালাসি ঘুরছেন দ্বারে দ্বারে। তাঁর অভিযোগ, কৌশল খাটিয়ে ছেলের পাসপোর্ট নেয় দালালচক্র। পরে একে একে দালালের হাতে তুলে দেন ৩৬ লাখ টাকা।
এদিকে দিনমজুর সোহেল চৌকিদারও পড়েছেন এই ফাঁদে। বাড়ি ছাড়ার আগে স্ত্রী রুনা বেগম ও তিন মেয়েকে রেখে যান। লাখ লাখ টাকা দালালরা হাতিয়ে নিলেও সোহেলের খোঁজ না থাকায় দিশাহারা পরিবার। একই অবস্থা রাজৈরের বাজিতপুর ইউনিয়নের ১৪ যুবকের পরিবারের।
ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় ইতালির উদ্দেশে এক বছর আগে বাড়ি ছাড়েন তাঁরা। পরে তাঁদের লিবিয়ায় জিম্মি করা হয়। নির্যাতন চালিয়ে আদায় করা হয় মুক্তিপণের টাকা। কিন্তু তাঁদের কোনো খোঁজ নেই।
স্বজনদের অভিযোগ, মানবপাচারচক্রের সদস্য বাজিতপুর গ্রামের বাবুল হাওলাদার প্রলোভন দেখিয়ে প্রত্যেক পরিবারের কাছ থেকে প্রথম ১৫-২০ লাখ টাকা করে নেয়। পরে লিবিয়ায় বন্দি করে আরো ৩০-৫০ লাখ টাকা নেয়। ঘটনার পর ঘরে তালা ঝুলিয়ে পালিয়েছে অভিযুক্ত বাবুল ও তার পরিবার।
নিখোঁজরা হলেন রাজৈরের পাখুল্লা গ্রামের সালমান বেপারী, চৌরাশী গ্রামের বাবুল শিকদার, একই গ্রামের সাজ্জাদ বয়াতি, বাদল মাতবর, লিটন রায়, বাঁধন বাড়ৈ, কিসমদ্দি বাজিতপুর গ্রামের ইমন চৌকিদার, নয়ন মাতুব্বর, খলিল খালাসি, সোহেল চৌকিদার, নয়াকান্দি বাজিতপুর গ্রামের গৌতম বাড়ৈ, ইমরান সরদার, শ্রীনাথদী বাজিতপুরের আল আমিন বয়াতি ও শ্রীনদী গ্রামের আলী ঘরামী।
এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত বাবুল হাওলাদার ও তাঁর পরিবারের সদস্যরাও জড়িত আছেন।
নিখোঁজ খলিল খালাসির বাবা আজিজ খালাসি বলেন, ‘দালাল বাবুল জোর করে ছেলের পাসপোর্ট নেয়। বলেছিল ছেলেকে ইতালি পাঠাবে। কিন্তু লিবিয়ায় বন্দি করে প্রথমে ১৬ লাখ টাকা নেয়, তার চার মাস পরে নেয় পাঁচ লাখ। তবুও ক্ষান্ত হয়নি দালাল বাবুল, মাফিয়াদের কাছে বিক্রি করে ১৫ লাখ টাকা নেয়।’
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাঈমুল হাছান বলেন, ‘নিখোঁজ স্বজনদের পরিবার থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ অভিযুক্ত বাবুল হাওলাদারের মোবাইল ফোনে কল দিলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।