সিলেটের এক সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র রাজু আহমেদ। স্নাতক পড়ুয়া এই তরুণ আর ১০ জনের মতো চাকরির পেছনে ছোটেননি, বরং নিজের পথ তৈরি করেছেন নিজেই। ডিজিটাল মার্কেটিংকে অস্ত্র করে ফ্রিল্যান্সিং জগতে তিনি এখন এক সফল যোদ্ধা। মাসে আয় করছেন ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা এবং নিজের প্রতিষ্ঠান ‘ড্রিমস আইটি পার্ক’-এ ৫০ জনের কর্মসংস্থান তৈরি করেছেন। তার এই অদম্য অগ্রযাত্রার গল্প এখন জায়গা করে নিয়েছে প্রথমা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত রাহিতুল ইসলামের ‘সুখবর বাংলাদেশ’ বইয়ে।
পেছনের গল্প: এক প্রত্যাখ্যান এবং এক শপথ
সফলতার এই পথচলা মোটেও মসৃণ ছিল না। এর পেছনে আছে এক প্রত্যাখ্যানের গল্প, যা তাকে জেদি করে তুলেছিল। সরকারিভাবে ডিজিটাল বিপণনের ওপর একটি প্রশিক্ষণের জন্য সাক্ষাৎকার দিতে গিয়েছিলেন রাজু। কিন্তু তার কথা বলার জড়তা দেখে একজন সাক্ষাৎকারগ্রহীতা বলেন,‘আপনি ডিজিটাল বিপণনে ভালো করতে পারবেন না, বরং ওয়েব নিয়ে কাজ করুন।’
এই একটি কথাই রাজুর মনে গেঁথে যায়। তিনি সেদিনই শপথ করেন, শুধু ফ্রিল্যান্সার হবেন না, দেশের অন্যতম সেরা ডিজিটাল মার্কেটারদের একজন হয়ে দেখাবেন।
শপথ থেকে সাফল্য
সেই জেদকে পুঁজি করে রাজু কঠোর পরিশ্রমে নেমে পড়েন। ইউটিউব এবং বিভিন্ন অনলাইন কোর্স থেকে জ্ঞান অর্জন করে আন্তর্জাতিক মার্কেটপ্লেস ‘ফাইভআর’-এ নিজের অ্যাকাউন্ট খোলেন। অল্পদিনের মধ্যেই তার দক্ষতা সবার নজর কাড়ে। ফাইভআরের প্রথম পাতায় নিজের জায়গা করে নেন এবং দ্রুতই লেভেল-১ ও লেভেল-২ সেলারের ব্যাজ অর্জন করেন। ভাগ্যের কী পরিহাস, যে সরকারি প্রশিক্ষণ (এলইডিপি) থেকে তিনি প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলেন, সেই কোর্সের মেন্টর বা প্রশিক্ষক হওয়ার জন্যই ডাক পান কিছুদিন পর। সাক্ষাৎকারে ১০টি প্রশ্নের সবগুলো সঠিক উত্তর দিয়ে তিনি দেখিয়ে দেন, কঠোর পরিশ্রম আর ইচ্ছাশক্তি থাকলে যেকোনো কিছুই অর্জন করা সম্ভব।
ড্রিমস আইটি পার্ক: স্বপ্ন দেখানোর কারখানা
রাজু আহমেদের প্রতিষ্ঠানের নাম ‘ড্রিমস আইটি পার্ক’। তার লক্ষ্য, দেশের তরুণদের ফ্রিল্যান্সিংয়ে দক্ষ করে তোলা। রাজু শুরু করার পর তিন বছরে তার প্রতিষ্ঠান থেকে দেড় হাজারের বেশি শিক্ষার্থী প্রশিক্ষণ নিয়ে আজ স্বাবলম্বী। দেশের সব জেলার তরুণ-তরুণীরাই তার প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ নিতে আসেন। বর্তমানে ৫০ জন কর্মী নিয়ে তার প্রতিষ্ঠান প্রতি মাসে প্রায় ১০ হাজার মার্কিন ডলারের বিদেশি কাজ সম্পন্ন করছে।
স্বীকৃতি ও ভবিষ্যৎ স্বপ্ন
রাজুর এই সাফল্য এখন জাতীয় পর্যায়েও স্বীকৃত। ২০২২ সালে তিনি ‘রাইজিং ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড’ এবং ২০২৩ সালে ‘ন্যাশনাল টেক অ্যাওয়ার্ড’ অর্জন করেন। তার প্রতিষ্ঠানও পেয়েছে ‘ন্যাশনাল ফ্রিল্যান্সিং কার্নিভ্যাল’-এ বিশেষ সম্মাননা।
সিলেটের শিবগঞ্জ এলাকায় থাকা এই তরুণ এখন দেশের জন্য বড় স্বপ্ন দেখেন। তিনি বলেন, ‘আমার স্বপ্ন আমার প্রতিষ্ঠান থেকে দেশে ১ লাখের বেশি ফ্রিল্যান্সার তৈরি করা এবং নিজের প্রতিষ্ঠানে ১০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা।’ সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছেন স্নাতক শ্রেণির এই অদম্য শিক্ষার্থী ও সফল ফ্রিল্যান্সার।
‘সুখবর বাংলাদেশ’ এবং রাজুর গল্প
লেখক রাহিতুল ইসলামের ‘সুখবর বাংলাদেশ’ বইটি মূলত বাংলাদেশের এমন সব ইতিবাচক ও অনুপ্রেরণার গল্প নিয়ে সাজানো হয়েছে। বইটির ২৫টি গল্পের মধ্যে রাজু আহমেদের এই পথচলার গল্প অন্যতম, যা পাঠককে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শেখাবে। ৩৫০ টাকা মুদ্রিত মূল্যের বইটি প্রথমা ডটকম, রকমারি ডটকমসহ দেশের প্রধান বইয়ের দোকানগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে।