ধূসর-সাদা রঙের ইগল। গোলাকার চোখ, বাঁকানো ঠোঁট। ছড়ানো ডানা ও লেজ। এর মধ্যে ডানা দুটি আবার শূকরের মাথার আকৃতি ধারণ করেছে। ইগলের শরীর একটি বৃত্ত দিয়ে খোদাই করা, যার মধ্যে আবার একটি অষ্টভুজ আঁকা। অষ্টভুজের ভেতরে খোদাই করা আরেকটি বৃত্ত।
চীনের লিংজিয়াতান প্রত্নস্থলের একটি সমাধি থেকে পাওয়া জেড পাথরের এই শিল্পকর্মটি ইগল, শূকর এবং সূর্যের প্রতিচ্ছবিকে এক করেছে, যাতে ফুটে উঠেছে আদিম জড়বাদ দর্শন। গতকাল সোমবার রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরে প্রাচীন এই নিদর্শনটির প্রতিরূপ আগ্রহ নিয়ে দেখছিলেন দর্শনার্থীরা।
প্রদর্শনীতে আরো ছিল জেড পাথরের তৈরি মানব অবয়ব বা মূর্তি, ড্রাগন, কচ্ছপ, অলংকার, কুঠারসহ নানা নিদর্শনের রেপ্লিকা (প্রতিরূপ) ও আলোকচিত্র, যেগুলোর মাধ্যমে উঠে এসেছে চীনের পাঁচ হাজার বছরের পুরনো লিংজিয়াতান সংস্কৃতির ইতিহাস।
বাংলাদেশ ও চীনের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে চীনের আনহুই জাদুঘর ও বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের যৌথ উদ্যোগে গতকাল জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তন লবিতে এই বিশেষ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়। ‘রেডিয়েন্ট স্টারস : লিংজিয়াতান কালচার ফটো এক্সিবিশন ফ্রম আনহুই, চায়না’ শীর্ষক প্রদর্শনীটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
লিংজিয়াতানের জেড পাথরের নিদর্শনগুলোকে অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও আধ্যাত্মিকতার সম্মিলন হিসেবে অভিহিত করে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “তারা (চীন) আমাদের ১৭টি বেশ উঁচুমানের ব্রোঞ্জ রেপ্লিকা দিয়েছে এবং আনহুই জাদুঘরের ‘ফোর ট্রেজার্স অব দ্য স্টাডি (চীনের ঐতিহ্যবাহী লিপিবিদ্যা ও চিত্রকলার জন্য ব্যবহৃত চারটি অপরিহার্য উপকরণ, যা জ্ঞান ও শিল্পের প্রতীক)’ বাংলাদেশ ন্যাশনাল মিউজিয়ামকে দিয়েছে।
এটা (এগুলো) আমরা এই জাদুঘরে পারমান্যান্টলি হোস্ট (স্থায়ীভাবে প্রদর্শন) করে রাখব। এটি আমাদের দুই দেশের বন্ধুত্ব ও সদিচ্ছার একটা প্রতিফলন হিসেবে চিরস্থায়ীভাবে এই মিউজিয়ামে থাকবে।”
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘গত এক বছরে (বাংলাদেশের সঙ্গে) যত সাংস্কৃতিক বিনিময় হয়েছে, তার বড় একটা বিনিময় হয়েছে চীন দেশের সঙ্গে। আমার ভালো লাগছে দেখে যে, লিংজিয়াতানের যে ঐতিহ্য দেখানো হলো, সেখানে মাটি, পানি ও কৃষিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আসলে প্রকৃতিকে অস্বীকার করে কোনোভাবে এগোনো যাবে না।
সভ্যতাকে ধরে রাখতে হলে, সমৃদ্ধ করতে হলে অবশ্যই আমাদের প্রকৃতিনির্ভর চিন্তা-ভাবনাকে আরো অনেক বেশি প্রসারিত করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন চীনের আনহুই প্রদেশের ভাইস গভর্নর সান ইয়ং, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মফিদুর রহমান, বাংলাদেশ-চীন কালচারাল ইকোনমিক অ্যান্ড মাস কমিউনিকেশন সেন্টারের সভাপতি আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা দূতাবাসের কালচারাল কাউন্সেলর লি শাওপেং। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক তানজিম ইবনে ওয়াহাব। এর আগে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে চীন ও বাংলাদেশের শিল্পীরা সংগীত, নৃত্য ও বিভিন্ন পরিবেশনার মাধ্যমে দুই দেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য তুলে ধরেন।
প্রদর্শনীর উদ্বোধন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে উপদেষ্টা ও অন্যান্য অতিথিরা জাতীয় জাদুঘরের প্রদর্শনী ও চায়না কর্নার পরিদর্শন করেন। জাতীয় জাদুঘরের ৪৪ নম্বর গ্যালারির চায়না কর্নারে ১৫টি নতুন নিদর্শন দর্শনার্থীদের জন্য সংযোজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জাদুঘর কর্তৃপক্ষ। প্রদর্শনীটি ২৫ আগস্ট থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।