ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল এখনো ঘোষণা না হলেও চারিদিকে বইছে নির্বাচনী হাওয়া। এই হাওয়া লেগেছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের ছাড়িয়ে ভোটারদের মাঝেও। সাধারণ ভোটাররা মনে করছেন গত বছরের ৫ই আগস্ট পট পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে একটি সুন্দর নির্বাচনের দিকে দেশ এগুচ্ছে। সব ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছরের প্রথমার্ধে একটি নির্বাচনের ইঙ্গিত মিলছে সরকারের কাছ থেকেও।
প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর সিলেট-৪ (গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জ) আসনেও দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকাও একেবারে ছোট নয়। এই আসনে বিএনপির অন্তত ৮ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী মাঠে রয়েছেন।
জানা যায়, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ২৫টি ইউনিয়ন নিয়ে সিলেট-৪ আসন গঠিত। দেশের অন্যতম স্থলবন্দর তামাবিল এই আসনে অবস্থিত। প্রাকৃতিক সম্পদের আধার দেশের বৃহত্তম পাথর কোয়ারি ভোলাগঞ্জ, জাফলং, বিছনাকান্দি ও শ্রীপুর এই আসনে রয়েছে। এছাড়া রয়েছে দেশের একমাত্র মিঠাপানির জলাবন রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট। তাই সব রাজনৈতিক দলের কাছেই আসনটির গুরুত্ব বেশি।
বিগত ১২টি সংসদ নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগ ৭ বার, বিএনপি ৩ বার, স্বতন্ত্র ও জাতীয় পার্টি একবার করে বিজয়ী হয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানের পর বদলে গেছে রাজনীতির মাঠের হালচাল। আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্ররা ভোটের মাঠে নেই। ফলে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মাঠ গোছাতে ব্যস্ত বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী। তবে প্রার্থীদের প্রত্যাশা এবার গুরুত্বপূর্ণ এই আসনে বিএনপি জয়লাভ করবে।
বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম আলোচিত হচ্ছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন-বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ্ সিদ্দিকী, সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম, সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের দুই বারের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম চৌধুরী, জেলা বিএনপির সহ সভাপতি মো: ফখরুল ইসলাম, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার কামরুজ্জামান সেলিম, কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক এমপি প্রয়াত দিলদার হোসেন সেলিমের সহধর্মিণী এডভোকেট জেবুন্নাহার সেলিম, জেলা বিএনপির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হেলাল উদ্দিন আহমদ ও বিএনপি নেতা আব্দুল হক।
দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা প্রত্যেকেই দলের বার্তা ও নিজের ইশতেহার, প্রতিশ্রুতি নিয়ে জনগণের দোরগোড়ায় যাচ্ছেন। সামাজিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠানের পাশাপাশি সাংগঠনিক নানা কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরছেন। এদিক থেকে চমক দেখাতে পারেন সিলেট জেলা বিএনপির জেলা বিএনপির সহ সভাপতি মো: ফখরুল ইসলাম। জেলা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি কেন্দ্রেীয় নেতৃবৃন্দেও সাথেও রয়েছে সুসম্পর্ক। তিনি মনে করেন দল তাঁকে মনোনয়ন দিলে সিলেটের গুরুত্বপূর্ণ এই আসন তিনি দলকে উপহার দিতে পারবেন।
এ ব্যাপারে সিলেট জেলা বিএনপির জেলা বিএনপির সহ সভাপতি মো: ফখরুল ইসলামের ঘনিষ্ট এক নেতা জানান, দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা সবাই প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে আসছেন, পাশাপাশি কেন্দ্রের দিকেও লক্ষ্য রাখছেন। কেন্দ্র যাকে এই আসনে যোগ্য মনে করবে তাঁকেই মনোয়ন দিবে। তিনি বলেন, মো: ফখরুল ইসলামের ৪১ বছরের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ইতিহাস রয়েছে। বিগত সরকারের আমলে তিনি মাঠে থেকে সরকারের ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন। এরজন্য অসংখ্যবার তাঁকে কারাবরণ করতে হয়েছে। এই বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে দল তাঁকে অবশ্যই মুল্যায়ন করবে বলে তিনি মনে করেন।
বিএনপির ওই নেতা বলেন, ফখরুল ইসলাম একজন নির্যাতিত ও পরিক্ষীত রাজনৈতিক নেতা। তিনি বিগত সরকারের আমলে অনেক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাঁর বাড়িতে দলীয় প্রোগ্রামে আওয়ামী লীগের লোকজন হামলা করেছে। ওই হামলায় তিনিসহ অসংখ্য নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এখনো অনেকে পঙ্গুত্ব নিয়ে জীবন কাটাচ্ছেন। আমরা আশাকরি এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে দল তাঁকে অবশ্যই মুল্যায়ন করবে।