শ্রমিকদের ভাতার টাকায় ইউপি সদস্য ও বাগান সভাপতির পকেটে

কুলাউড়ার বরমচাল ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য চন্দন কুর্মী ও বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি আগনু দাসের বিরুদ্ধে চা শ্রমিকদের সরকারি প্রণোদনার ভাতার টাকা আত্মসাতের প্রমাণ মিলেছে। বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দেয় তদন্ত কমিটি।

জানা গেছে, তদন্ত প্রতিবেদন বুধবার বরমচাল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও গতকাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভাতাভোগী ১৮৭ জনের মধ্যে ৩৬ জন উপকারভোগীর ভাতা ৬ হাজার টাকা করে পাওয়া যায়নি। ভাতাভোগী ৯ জনের বিকাশ নম্বর পরিবর্তন করা হয়েছে।

বরমচাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খোরশেদ আহমদ খান সুইট বলেন, গঠিত কমিটি সরেজমিন তদন্তে স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের বিষয়টির সত্যতা পেয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন ইউএনওর কাছে দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে ইউএনও মো. মহিউদ্দিন বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন পেয়েছি। জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অভিযোগের বিষয়ে বরমচাল ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য চন্দন কুর্মী বলেন, ‘আমি শ্রমিকদের ভাতার টাকা আত্মসাৎ করিনি। আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সঠিক নয়।’ বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি আগনু দাস বলেন, ‘আমি ও ইউপি সদস্য চন্দন কুর্মী ভাতাভোগীর তালিকা তৈরি করে উপজেলা সমাজসেবা অফিসে জমা দিয়েছি। প্রত্যেক শ্রমিকের বিকাশ নম্বরে টাকা গেছে। এখানে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ সঠিক নয়।’

জানা যায়, বরমচাল চা বাগানে হতদরিদ্র চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে সরকার থেকে জনপ্রতি ৬ হাজার টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা দিলে ২৪৯ জনের একটি তালিকা তৈরি করেন স্থানীয় ইউপি সদস্য চন্দন কুর্মী ও বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি আগনু দাস। এরপর অভিযোগ ওঠে, চন্দন ও আগনু দাস মিলে জালিয়াতির মাধ্যমে চা শ্রমিকদের বাদ দিয়ে নিজেদের পরিবারের সদস্য এবং বাগানের প্রায় ২৪টি পরিবারের একাধিক সদস্যের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এছাড়া বাগানের অনেক শ্রমিকের কাছ থেকে ৩০০ থেকে শুরু করে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন।

তালিকায় দেখা যায়, ইউপি সদস্য চন্দন কুর্মী ও তাঁর স্ত্রী বীণা কুর্মীর নাম রয়েছে তাতে। বাগান সভাপতি আগনু দাস ও তাঁর স্ত্রী সাবিত্রী দাস, ছেলে সাগর দাস ও সুমন দাসকে তালিকাভুক্ত করেছেন। এরমধ্যে সুমন কাতারে থাকেন বলে জানা গেছে। এছাড়া তাদের মনোনীত আরও ৪টি পরিবারের ১২ জন সদস্য তালিকায় নাম দিয়ে টাকা নিয়েছেন।

গত ১৪ আগস্ট বরমচাল চা বাগানের ভুক্তভোগীসহ সাধারণ শ্রমিকরা মানববন্ধন ও মিছিল করেন। মানববন্ধনে ছাত্র-যুবক, নারী শ্রমিক, সাধারণ চা শ্রমিক ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় বরমচাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খোরশেদ আহমদ খান সুইট বলেন, বিষয়টি প্রশাসনিকভাবে খতিয়ে দেখা হবে। তদন্তে ইউপি সদস্য চন্দন কুর্মীর টাকা আত্মসাতের অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরে ইউএনওর নির্দেশে অভিযোগ তদন্তে ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সাহানুর রহমান সাদনকে প্রধান করে ৯ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন ইউনিয়ন চেয়ারম্যান।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন