শালিক বন্ধু!

সকাল থেকে বৃষ্টি পড়ছে। তবে বৃষ্টির তোড় খুব একটা হলেও বাড়ির সামনের মাঠে পানি জমে গেছে। জানালার দিকে তাকিয়ে হোসাইন সব দেখছিল বৃষ্টিতে ভিজে একটা শালিক মাঠের সেই জমাকৃত পানি খাচ্ছিল। হোসাইনের ইচ্ছা করছিল তার ছাতাটা নিয়ে শালিকের মাথায় ধরে। বৃষ্টি ভেজা থেকে রক্ষা পাবে। কিন্তু বাস্তব ব্যাপার হচ্ছে হোসাইন কাছে যেতে উড়ে যাবে শালিকটা। পাখিরা আসলে মানুষদের ভীষণ ভয় পায়। তবে যারা পাখি পোষে তারা অবশ্য খাঁচায় রেখে পোষে। পাখিরা আসলে মানুষদের বন্ধু হতে চায়না।

কিন্তু হোসাইনের পাখি বন্ধু ছিল। দুটি শালিক। তখন তারা থাকত ঢাকার বাড্ডায়। সেখানে একটি পুরোনো বাড়ির দোতলায় থাকত তারা। সে বাড্ডার প্রাইমারি ইস্কুলে বড় ওয়ানে পড়ত। পুরোনো বাড়ির কারণে বাড়িতে প্রচুর গাছগাছালি ছিল যার কারণে পাখির আগমন হতো। বিশেষ করে চড়াই ও শালিক। কাকের কথা বলাই বাহুল্য। বাসায় হোসাইনের বাবা মা ছাড়া ছিল তার ছোট্ট বোন হাফসা। হাফসা কথা বলতে না শিখলেও হাঁটতে পারে। দোতলা বাড়িটির লাগোয়া একটি পরিত্যক্ত বারান্দায় অনেক পাখির আনাগোনা ছিল। সেখানে শালিক চড়াই ছাড়াও মাঝে মধ্যে টিয়া বুলবুলি পাখি আসত তবে প্রতিদিন নয়।

হোসাইন প্রতিদিন পাখিগুলো আসার আগেই খাবার ছিটিয়ে রাখত। দিনের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে তারা আসত যেত আসত। কখনো খাবার খবর পেয়ে দলবেঁধে আসত। কিচিরমিচির শব্দে মুখর করে রাখত পরিবেশটা। পাখির মধ্যে দুটি শালিক রোজই আসত, যেত সবার শেষে। সব শালিকদের মধ্যে এ দুটির ভিন্নতা ছিল। একটির পায়ের নখ ভাঙা অপরটি লেজের পালক কম ছিলো। বাড়ির মালিক বাবু ভাইয়া থেকে দুরবিন এনে হোসাইন তাদের ভালো করে লক্ষ্য করেছে। বাবু ভাইয়া হোসাইনকে খুব স্নেহ করে। পুরো ব্যাপারটা কাউকে বলেনি হোসাইন। তবে তার মা কিছুটা আঁচ করে পেড়েছে। কারণ রান্নাঘর থেকে পাখিদের জন্য খাবার আনতে গেলে বিষয়টা বুঝে ফেলে তার মা। কিন্ত এ ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করেনি তাকে।

হোসাইন শালিক দুটির নাম ঠিক করে ফেলে ঝিকি আর মিকি। প্রতিদিন তাদের সঙ্গে চোখে চোখে কথা হয়। পাখিদ্বয় কেমন জানি বুঝতে পেরে যায়। এক সন্ধ্যায় সব পাখি চলে গেলেও শালিকদ্বয় বসে ছিল মনে হচ্ছে তারই জন্য। টিউশন পড়া শেষ করে হোসাইন রোজ এসে তাদের বাড়তি খাবার দেয় কত কথা বলে তাদের সঙ্গে।

সেই দিনের পর থেকে শালিকদ্বয় আর হোসাইনকে ভয় পেত না। অতি কাছে গেলেও উড়ে যেত না। ছুঁয়ে দেখেনি তাদের। এভাবে শালিক পাখিদের সঙ্গে হোসাইনের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। রোজ শালিকদ্বয় সকালে আসত ফিরত সন্ধ্যার অনেক পর। হোসাইনের সঙ্গে দেখা হতো রোজই ইস্কুল থেকে ফেরার পর টিউশন পড়ার পর। বেশিবার বারান্দায় গেলে জানাজানি হয়ে যাবে। এইভাবে শালিক বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দে উৎসাহে দিন কেটে যাচ্ছিল।

কিন্তু হঠাৎ এক বিকালে অফিস থেকে ফিরে তার বাবা জানাল চাকরির জন্য তাকে বদলি করা হয়েছে কুমিল্লায়। এক সাপ্তাহের মধ্যে চলে যেতে হবে। খবরটায় মন ভেঙে যায় হোসাইনের। বুক ফেটে কান্না আসে। তাহলে শালিক বন্ধুদের সঙ্গে তার আর দেখা হবে না। যথারীতি সাপ্তাহ গড়িয়ে যায় তারা কুমিল্লায় চলে যাবে কাল সকালে। খবরটা শালিক বন্ধুদের জানায় হোসাইন। কেমন জানি নিশ্চুপ হয়ে যায় তারা। যেন বুঝতে পেরেছে।

সারা রাত ঘুম হলো না হোসাইনের সকালে বারান্দায় এসে দেখে সব পাখি এলেও শালিকদ্বয় আসেনি। অপেক্ষা করতে থাকে হোসাইন ওদিকে মা তাগাদা দিতে থাকে রেডি হতে। অপারগতায় সে রেডি হয়ে শেষবারের মতো বারান্দায় আসে নাহ এখনো আসেনি তারা। তাহলে তারা কি বন্ধুর বিদায় দৃশ্য অবলোকন করতে পারবেনা। হয়তো তাই।

কুমিল্লার পথে রওয়ানা হয় হোসাইনরা। বারবার ফিরে ফিরে বাড়িটা দেখে। যেনে অতিপ্রিয় কিছু ফেলে যাচ্ছে। ছোট্র তার মনের ভেতর তীব্র দহন হচ্ছে। আসার সময় ছোট্ট একটা চিরকুট লিখে বারান্দায় রেখে এসেছে সে যাতে লেখা ছিল ‘আজ থেকে আমি গডের কাছে প্রার্থনা করব। আমাকে যেন শালিক পাখি বানিয়ে দেয়। নীল আকাশের বুকে উড়ে উড়ে তোমাদের কাছে চলে যাবো। ও বন্ধুরা আমার। ভালো থেকো ঝিকিমিকি।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন