সিলেটের ঐতিহ্যবাহী মুরারিচাঁদ কলেজ (এমসি কলেজ)-এ আজ বর্ণাঢ্য আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের একাদশ শ্রেণির ওরিয়েন্টেশন ও নবীন বরণ অনুষ্ঠান। কলেজের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে নবীন শিক্ষার্থীদের বরণ করে নেওয়া হয় এবং তাদের কলেজ জীবন সম্পর্কে বিস্তারিত দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়।
পুরো অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন এমসি কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শাহনাজ বেগম, আর সাংস্কৃতিক পর্বের সঞ্চালনায় ছিলেন দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী রাহুল ও অর্পা। পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আহাদ হাসান সিয়াম এবং গীতা পাঠ করেন একই শ্রেণির শিক্ষার্থী প্রাপ্তি দাস।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন উচ্চ মাধ্যমিক ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বিভূতিভূষণ দাস। পুরাতন শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন মো. আব্দুল্লাহ রিফাত। নবীন শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন ফাহমিদা সর্দার নাজু, মারিয়া হক, খালিদ আহমদ সাইফ ও দিব্যরাজ দাস।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতারাও বক্তব্য রাখেন। এর মধ্যে ছিলেন গণতান্ত্রিক ছাত্রপরিষদের সুমিত কান্তি দাস পিনাক, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি ইসমাঈল খান, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি খান মোহাম্মদ সামি, এবং ইসলামী ছাত্র মজলিসের সাধারণ সম্পাদক আহমদ সালমান।
শিক্ষকদের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর মো তৌফিক এজদানী চৌধুরী, উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ড. মো. আবুল কালাম আজাদ, বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর পান্না বসু এবং উচ্চ মাধ্যমিক ভর্তি কমিটির সদস্য জনাব শোয়েব আহমদ খান ও মো. এরশাদ হোসেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিক্ষক পরিষদ সম্পাদক প্রফেসর মো. গিয়াস উদ্দিন এবং কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর মো আকমল হোসেন নবীনদের উদ্দেশ্যে দিকনির্দেশনা দেন। উপাধ্যক্ষ প্রফেসর মো আকমল হোসেন শিক্ষার্থীদের অহংকারী না হয়ে বিনয়ী হওয়ার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন এমসি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর গোলাম আহমদ খান। তিনি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কঠোর অবস্থানের কথা জানান এবং যেকোনো বিপদে তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন। তিনি শিক্ষার্থীদের নিয়মিত উপস্থিতির ওপর বিশেষ জোর দেন।
অধ্যক্ষ তার বক্তব্যে বলেন, “তোমরা আজকে যেখানে আছো, আজ থেকে ৪৩ বছর পূর্বে আমিও এখানেই ছিলাম। তখন কে ভেবেছিলো যে এই যুগের এআইয়ের কথা? তখন মানুষ ভাবতো পড়াশোনা শেষ করে ডাক্তারী, ইঞ্জিনিয়ারী করে জীবন পার করে দিবে। কিন্তু এখন এআই এমনভাবে বিস্তৃত হয়েছে যে আমাদেরকে বাধ্যতামূলক শিক্ষা ও প্রযুক্তিগত জ্ঞান রাখতেই হবে।” এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি শিক্ষার্থীদের আধুনিক প্রযুক্তি ও শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করেন।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফারহানা জামান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর মো ফরিদ আহমেদ, দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আবু নাসের খান, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আমিনুল হক, আরবী ও ইসলামী শিক্ষা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো আব্দুল্লাহ, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শাহ মো. জুলফাজলে, গণিত বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর তপতী চৌধুরী, প্রাণীবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান বিজন কুমার চক্রবর্ত্তী এবং সংস্কৃত বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর সুনীল ইন্দু অধিকারী।
অনুষ্ঠানের শেষ ভাগে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে, যার মধ্যে ছিল গান, নাচ ও কবিতা। অনুষ্ঠান শেষে সকল শিক্ষার্থীদের জন্য নাস্তার ব্যবস্থা করা হয় এবং নবীনদেরকে ফাইল, কলম, একাডেমিক ক্যালেন্ডার ও আইডি কার্ডসহ বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ প্রদান করা হয়। দুপুরের মধ্যেই অনুষ্ঠান সফলভাবে সমাপ্ত হয়।