সিলেট মহানগরীর চৌহাট্টায় পুরাতন মেডিকেল এলাকার আবুসিনা ছাত্রবাস ভেঙে প্রায় ৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত আটতলা ভবন দীর্ঘদিন ধরে বেওয়ারিশ অবস্থায় পড়ে আছে। হাসপাতালের সব নির্মাণকাজ শেষ হলেও চালু করার কোনো উদ্যোগ নেই।
গণপূর্ত বিভাগের সূত্রে জানা যায়, ভবনের রঙের কাজ, ইলেকট্রিক, টাইলস, গ্লাস, দরজা-জানালা লাগানোসহ সব কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বেজমেন্টে রয়েছে কারপার্কিং, প্রথম তলায় টিকিট কাউন্টার ও ওয়েটিং রুম, দ্বিতীয় তলায় আউটডোর ও রিপোর্ট ডেলিভারি, তৃতীয় তলায় ডায়াগনস্টিক সেবা, চতুর্থ তলায় কার্ডিয়াক ও জেনারেল ওটি, আইসিসিইউ ও সিসিইউ। এছাড়া পঞ্চম তলায় গাইনি, চক্ষু, অর্থোপেডিক্স ও ইএনটি বিভাগ, আর ষষ্ঠ থেকে অষ্টম তলা পর্যন্ত রয়েছে ওয়ার্ড ও কেবিন। নতুন হাসপাতালটিতে ১৯টি আইসিইউ বেড, ৯টি সিসিইউ বেড এবং ৪০টি কেবিন থাকছে।
কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ৬ দশমিক ৯৮ একর জমির ওপর প্রকল্পটির উদ্বোধন করা হয়। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে পদ্মা অ্যাসোসিয়েশন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কাজ শুরু করে এবং নির্ধারিত সময়ে নির্মাণ শেষ করে। কিন্তু এখনো হাসপাতাল কমপ্লেক্স হস্তান্তর করা যায়নি।
গণপূর্ত বিভাগ একাধিকবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠালেও এখনো সিদ্ধান্ত আসেনি—কে পরিচালনা করবে এই হাসপাতাল। সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নাকি সিভিল সার্জন অফিস— তা নিয়ে চলছে ধোঁয়াশা। জনবল নিয়োগ, লজিস্টিক সাপোর্ট ও তদারকির বিষয়েও তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিলেট বিভাগে রোগীর তুলনায় হাসপাতালের সংখ্যা অত্যন্ত কম। এর ফলে এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিনই শয্যা সংকট মারাত্মক আকারে দেখা দিচ্ছে। হাসপাতালের ভেতরে শয্যা না পেয়ে অনেক রোগীকে মেঝে ও করিডোরে অবস্থান করতে হচ্ছে, যা চিকিৎসা সেবাকে বিঘ্নিত করছে এবং ঝুঁকির মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জনসংখ্যা ও রোগীর চাপ বিবেচনায় নতুন এই ২৫০ শয্যার জেলা হাসপাতালটি চালু হলে সিলেটের স্বাস্থ্যসেবা খাতে উল্লেখযোগ্য স্বস্তি আসবে। ওসমানীর ওপর চাপ কমবে, একই সঙ্গে বিশেষায়িত চিকিৎসা নিতে রোগীদের রাজধানীতে ছুটে যাওয়ার প্রবণতাও হ্রাস পাবে।
স্থানীয় নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও সচেতন মহল মনে করছেন, সরকারি আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় হাসপাতালটি অব্যবহৃত পড়ে থাকা দুঃখজনক। তাদের দাবি, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রয়োজনীয় জনবল ও অবকাঠামোগত সাপোর্ট নিশ্চিত করলেই হাসপাতালটি চালু করা সম্ভব হবে।
অন্যদিকে গণপূর্ত বিভাগ জানিয়েছে, অবকাঠামোগত দিক থেকে হাসপাতালটি সম্পূর্ণ প্রস্তুত। তারা আশা করছে, খুব শিগগিরই স্থানীয় কোনো প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায় হাসপাতালটি চালু হবে এবং সিলেটবাসী আধুনিক চিকিৎসা সেবার সুযোগ পাবে।