ভরাট কণ্ঠে কবিতার মায়াজাল ছড়ালেন বাচিকশিল্পী সালেহ আহমদ খসরু

ভরাট কণ্ঠে যখন তিনি উচ্চারণ করলেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের অমর সৃষ্টি ‘বিদ্রোহী’, তখন সারা মিলনায়তনে নেমে এলো পিনপতন নীরবতা। শ্রোতারা যেন নিঃশ্বাস আটকে শুনছিলেন প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি ছন্দ।

বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় সিলেট জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে শুরু হওয়া মোড়ক উন্মোচন ও আবৃত্তি সন্ধ্যা গড়াল রাত প্রায় পৌনে বারোটায়। বিস্ময়ের বিষয়— এত দীর্ঘ আয়োজনে উপস্থিত দর্শকেরা এক মুহূর্তের জন্যও বিরক্ত হননি; বরং মুগ্ধ হয়ে সিক্ত হয়েছেন কবি ও বাচিকশিল্পী সালেহ আহমদ খসরুর কণ্ঠসুধায়।

এক পর এক কবিতা—কখনো নজরুল, কখনো তাঁর নিজের সৃষ্টি; এর ফাঁকে ফাঁকে সাহিত্যচর্চার দিনলিপি, অভিজ্ঞতার টুকরো গল্প। শ্রোতারা তন্ময় হয়ে শুনছিলেন, কখনো আবেগে আপ্লুত, কখনো বিদ্রোহে উদ্বেল।

আয়োজক ছিল সাংস্কৃতিক সংগঠন সাইক্লোন কেন্দ্রীয় সংসদ, সিলেট। অনুষ্ঠান শুরু হয় সংগঠনের সভাপতি ও ভ্রমণলেখক মোয়াজ আফসারের স্বাগত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে। সঞ্চালনায় ছিলেন কবি ইশরাক জাহান জেলী।

কবি মুহিত চৌধুরী উপস্থাপন করেন খসরুর জীবন ও কর্মভিত্তিক মূল প্রবন্ধ। তিনি সালেহ আহমদ খসরুকে এক বহুমাত্রিক নাগরিকের প্রতিচ্ছবি হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, সমকালীন সিলেটি জনজীবনে সালেহ আহমদ খসরু এক বহুমাত্রিক নাম—কবি, গীতিকার, রাজনীতিক, বাচিকশিল্পী, সাহিত্যিক এবং নাগরিক সমাজ-সচেতনতার সক্রিয় কণ্ঠস্বর। বহুমাত্রিক এই পরিচয় তাঁকে শুধু দৃশ্যমানই করেনি, বরং আঞ্চলিক সংস্কৃতির ধারাবাহিকতায়ও প্রতিষ্ঠিত করেছে এক স্বতন্ত্র সত্তা হিসেবে।

অনুষ্ঠানে উন্মোচিত হয় খসরুর ৬৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে স্থানীয় দৈনিক সুরমা মেইল-এর বিশেষ ক্রোড়পত্র। পাশাপাশি মোড়ক উন্মোচিত হয় তাঁর সদ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ “মাধবীলতার সংসার” (প্রকাশনা সংস্থা দোঁআশ)। এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন শাবিপ্রবির সহ-উপাচার্য সাজেদুল করিম, নর্থ ইস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের উপাচার্য মোহাম্মদ ইকবাল, কবি কালাম আজাদ, কেমুসাস সাধারণ সম্পাদক ও গল্পকার সেলিম আউয়াল, শাবিপ্রবির অধ্যাপক মোজাম্মেল হক, সিলেট শিক্ষা বোর্ডের সচিব চৌধুরী মামুন আকবর, কবির সহধর্মিণী খন্দকার রোমানা আহমদ, কবি আবদুল মুকিত অপি প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, সালেহ আহমদ খসরু শুধু বাচিকশিল্পী নন, তিনি নাগরিক সমাজের সক্রিয় কণ্ঠস্বর। তাঁর কবিতায় প্রেম, প্রকৃতি, বিদ্রোহ ও সমাজচেতনা সমানভাবে প্রতিফলিত হয়। কণ্ঠের জাদুতে তিনি যেভাবে শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন, ঠিক তেমনি শব্দের ভেতরেও তিনি অনন্য।

আবৃত্তির এক পর্যায়ে শিল্পী অয়ন চক্রবর্তী পরিবেশন করেন খসরুর লেখা একটি গান, সুর করেছেন সুদীপ চক্রবর্তী। গানটির সুরেলা আবহ আরও রঙিন করে তোলে সন্ধ্যাকে।

সিলেটের সাহিত্য, সংস্কৃতি, শিক্ষা ও সামাজিক অঙ্গনের বিশিষ্টজনেরা এ আয়োজনে উপস্থিত থেকে হয়ে উঠেছিলেন বিরল এক আবৃত্তি উৎসবের সাক্ষী।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন