দুই সপ্তাহ পেরোলেও খোঁজ মেলেনি ১৯ জেলের

দুই সপ্তাহ পার হলেও এখনো খোঁজ মেলেনি সাগরে ইলিশ ধরতে গিয়ে ভারতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক ভোলার ১৯ জেলের। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে পরিবারগুলোর। জেলেদের প্রকৃত অবস্থা ও সরকারিভাবে বিষয়টি নিশ্চিত হতে না পেরে চরম হতাশা তারা। আটক জেলেদের ভারত থেকে ফিরিয়ে আনতে সরকারের সহায়তা চেয়েছেন স্বজনরা।

গভীর সাগরে মাছ শিকার শেষে দ্রুতই ফিরবেন বাড়িতে। সন্তানদের কথা দিয়েছিলেন ফিরে এসে দুর্গাপূজার জন্য নতুন জামা কিনে দিবেন। কিন্তু পূজা শুরু হলেও এখনো বাড়ি ফেরেনি ভোলা সদর উপজেলা কোরালিয়া গ্রামের রাজিব চন্দ্র দাস ও গৌতম চন্দ্র দাস। তাদের আয়ে কোনো রকম খেয়ে না খেয়ে দিন কাটতো পরিবারের। একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে সংকটে দিন কাটছে পরিবারগুলোর।

একই গ্রামের বাবুল মাঝিও ফিরে এসে দোচালা ভাঙ্গা ঝুপড়ি ঘরটি মেরামত করে নতুন ঘর তোলার স্বপ্ন দেখেছিলেন। বাবা কবে ফিরবে এমন অপেক্ষায় দিন গুনছে দশ বছরের সুমাইয়া।

নিখোঁজ মাঝির মেয়ে সুমাইয়া জানান, তার বাবা তাকে বলেছিল এবার মাছ ধরে এনে নতুন ঘর করবে। কবে ফিরবেন বাবা সেই অপেক্ষাতেই আছে সে।

গত ৫ সেপ্টেম্বর ভোলা সদর উপজেলার শান্তিরহাট ঘাট থেকে ১৯ জেলে নিয়ে সফিজল মাঝির ট্রলার সাগরে যায় ইলিশ শিকারে। এক সপ্তাহ পরে বাড়ি ফেরার কথা থাকলেও গত ১২ সেপ্টেম্বর মোবাইলে বাড়ি ফেরার কথা জানিয়েছিলেন ট্রলারের মাঝি। এরপর বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় যোগাযোগ। গত ১৭ সেপ্টেম্বর ভারতের একটি ইউটিউব ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যমে দেখা যায়, ইঞ্জিন বিকল হয়ে ট্রলারটি ভাসতে ভাসতে পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবনের খিরদখালি এলাকায় ঢুকে পড়ে। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে আটক হয়ে আলীপুর কারাগারে বন্দি আছেন তারা।

নিখোঁজ মাঝিদের স্বজনেরা জানান, কোনো খোঁজ খবর তারা জানেন না। তারা স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারছেন না নিখোঁজ হওয়া স্বজনদের চিন্তায়। দ্রুত ১৯জন মাঝিকে দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করতে সরকারের কাছে দাবি করেন নিখোঁজ হওয়া জেলেদের স্বজন।

বন্দি জেলেদের সকল তথ্য সংগ্রহ করে প্রশাসনকে দেয়া হয়েছে বলে জানান জেলা ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি। এছাড়াও গত ১৮ সেপ্টেম্বর ভোলা সদর থানায় ১৯ জেলে নিখোঁজ উল্লেখ করে একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে ।

রেডক্রিসেন্ট সদস্য এনায়েত হোসেন বলেন, ‘আমরা তথ্য নিয়েছি। আমরা এ তথ্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে প্রেরণ করব। পরবর্তীতে তারা এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন।’

ভোলা ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি মো. এরশাদ বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যেন আমাদের ১৯জন জেলেকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করেন।

এদিকে অসহায় পরিবারগুলোকে সহায়তার পাশাপাশি বন্দি জেলেদের ফিরিয়ে আনার আশ্বাস দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

ভোলা জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান বলেন, ‘সম্প্রতি তাদের পরিবারের থেকে একটি আবেদন পেয়েছি। আবেদনের প্রেক্ষিতে এবং বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের প্রেক্ষিতে আমি সরকারকে এ বিষয়ে অবগত করব।’

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন