বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, জুলাই বিপ্লবের চেতনা এবং জাতীয় আত্মমর্যাদার প্রশ্নে আজ তরুণ সমাজ ক্রমেই সচেতন ও মূল্যবোধনির্ভর হচ্ছে।
তারা আর কেবল দলীয় পরিচয়ে রাজনীতি দেখে না, বরং খুঁজে ফিরছে আদর্শ, নীতি ও সততার রাজনীতি।
এই প্রেক্ষাপটে বিএনপি যদি সত্যিকার অর্থে জাতীয় বিকল্প শক্তি হিসেবে নিজেদের পুনর্গঠন করতে চায়, তবে প্রয়োজন আত্মসমালোচনা, নৈতিক পুনর্জাগরণ ও নেতৃত্বের সাহসিকতা।
অন্যথায়, “সতর্ক সংকেত” কেবল রাজনৈতিক উপমা নয়—বরং তাদের অস্তিত্বের প্রশ্নে বাস্তব বিপদ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
বাংলাদেশের জনগণ, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম, আজ কোনো বিদেশি আধিপত্য মানতে রাজি নয়।
তারা চায় দেশের নীতি, সম্পদ ও সিদ্ধান্ত হোক দেশের জনগণের হাতে।
যদি বিএনপি এই বিষয়ে অস্পষ্ট থাকে বা আওয়ামী লীগের অবস্থানের পুনরাবৃত্তি করে, তবে তরুণদের চোখে তারা “বিকল্প শক্তি” নয়, বরং একই রাজনীতির আরেক সংস্করণ হিসেবে বিবেচিত হবে।
এখন জনগণ খুঁজছে ‘কম খারাপ’ দল নয়, বরং প্রকৃত স্বাধীনতার রাজনীতি।
জুলাই সনদ বিএনপির জন্য কেবল ঘোষণাপত্র নয়; এটি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের অঙ্গীকার—
যেখানে আছে প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা, নির্বাচনী সংস্কার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও জবাবদিহি।
এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে দোদুল্যমানতা দেখালে জনগণ ধরে নেবে—তারা আবারও “ক্ষমতার রাজনীতি”তে ফিরতে চায়, “গণতান্ত্রিক সংস্কার”-এ নয়।
এটি বিএনপির বিশ্বাসযোগ্যতার ভিত্তিকেই দুর্বল করে দেবে।
বাংলাদেশের সমাজ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও, এটি বহু ধর্ম ও সংস্কৃতির দেশ।
ইসলামী মূল্যবোধ মানে ন্যায়, সততা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান এবং সব ধর্মের প্রতি সম্মান।
বিএনপি যদি এই ভারসাম্য রক্ষা করতে না পারে, তবে তারা ইসলামী চেতনার মানুষ ও মানবিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী উভয় গোষ্ঠীর কাছেই আস্থা হারাবে।
রাজনীতিতে নৈতিক ইসলামি মূল্যবোধ ও মানবিকতার সংমিশ্রণই হতে পারে তাদের নতুন দিকনির্দেশনা।
বিএনপির সবচেয়ে বড় সংকট—নৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতার অভাব।
জনগণ এখন পরিষ্কার নেতৃত্ব চায়, কেবল প্রতিশ্রুতি নয়।
দলে যদি দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজরা থেকে যায়, তাহলে জনগণ মনে করবে—আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ।
এই অবস্থা তরুণ সমাজকে রাজনীতি থেকে বিমুখ করবে।
দলের ভিতরে শুদ্ধিকরণ ছাড়া জনগণের আস্থা ফেরানো সম্ভব নয়।
আজকের তরুণ প্রজন্ম দল নয়—দেশ চায়।
তারা আর “এইটা বিএনপি, ওইটা আওয়ামী”—এই বিভাজনের রাজনীতি মানে না।
বিএনপি যদি সাহসিকতার সঙ্গে জাতীয় ঐক্যের নেতৃত্ব না নেয়, তবে তারা ইতিহাসের সুযোগ হারাবে।
আগামী দিনের রাজনীতি হবে না দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতা—
বরং হবে জাতীয় দায়িত্ববোধের প্রতিযোগিতা।
বর্তমান প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষা—একটি স্বাধীন, মর্যাদাসম্পন্ন ও আত্মনির্ভর বাংলাদেশ।
তারা দেখে, দেশের সম্পদ বিক্রি হচ্ছে, নীতিনির্ধারণ হচ্ছে বিদেশে, আর দেশজ সংস্কৃতি ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যাচ্ছে।
বিএনপি যদি এই আত্মমর্যাদা রক্ষার রাজনীতি না করে, তবে তারা কেবল অতীতের প্রতিধ্বনি হয়ে থাকবে—
ভবিষ্যতের নেতৃত্ব নয়।
বিএনপি যদি জাতীয় বিকল্প শক্তি হতে চায়, তবে তাদের ফিরতে হবে আদর্শ, নীতি ও নেতৃত্বের শুদ্ধতায়।
তরুণ সমাজ এখন আবেগ নয়—যুক্তি, নৈতিকতা ও সত্যনিষ্ঠ নেতৃত্বে আস্থা রাখে।
যদি বিএনপি এই আত্মসমালোচনামূলক পরিবর্তনের নেতৃত্ব না দেয়, তবে তরুণদের উত্থানই তাদের রাজনৈতিক অবসানের কারণ হবে। বাংলাদেশের রাজনীতি এখন নতুন যুগে প্রবেশ করছে—
যেখানে মানুষ আর জিজ্ঞেস করবে না, “কে সরকারে, কে বিরোধী?”
বরং জানতে চাইবে—
“কে জাতির স্বাধীনতা ও মর্যাদার পক্ষে দাঁড়িয়েছে?”
এই প্রশ্নের জবাবই নির্ধারণ করবে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা।