৭ গোলের ম্যাচে বাংলাদেশের হারের পাঁচ কারণ


শেষ বাঁশির পর মাঠে বসে উদাস তাকিয়ে ছিলেন হামজা চৌধুরী। কী ভাবছিলেন, তিনিই ভালো জানেন। কয়েক সেকেন্ডের জন্য হয়তো ভেবেছিলেন, এমন চমৎকার নৈপুণ্য দেখিয়েও হারতে হলো কেন! শুধু হামজা নন, হংকংয়ের বিপক্ষে শেষ মুহূর্তে গোল হজম করে ৪–৩ গোলে হারের ব্যাখ্যা খুঁজছিলেন হয়তো বাংলাদেশ দলের অন্য খেলোয়াড়েরাও।

খেলা শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পরই পুরো দল টিম হোটেলের উদ্দেশে স্টেডিয়াম ছেড়েছে। এক এক করে নিভেছে ঢাকার জাতীয় স্টেডিয়ামের ফ্লাডলাইট, আশাভঙ্গের বেদনা নিয়ে গ্যালারি ছেড়েছেন ২২ হাজার দর্শক। সবার মনে তখন শুধু আফসোস আর মন খারাপের গল্প। কিন্তু কেন এই হার?

১. ৪-৫ অক্টোবরের দিকেই মনে হচ্ছিল হংকংকে বাংলাদেশ দল ৫ গোল দিলে ৬ গোল খাবে। কারণ, রক্ষণের অবস্থা শোচনীয়। সেন্ট্রাল ডিফেন্সে তারিক কাজী অর্ধেক ফিট। সিনিয়র তপু পুরোই আনফিট। রক্ষণের মূল দুটি জায়গাতেই বেহাল। ম্যাচে তারিকের সঙ্গে কোচ একাদশে রাখেন অনভিজ্ঞ জুনিয়র শাকিল আহাদ তপুকে। একসময় কায়সার হামিদের পাশে তরুণ জুয়েল রানা ছিলেন। কিন্তু শাকিল আহাদ এখনো জুয়েল রানা হতে পারেননি।

রক্ষণ সুরক্ষিত করতে ইয়াছিনকে নিতে পারতেন কোচ। কিন্তু কোচ তা করেননি। দুজন গুরুত্বপূর্ণ ডিফেন্ডারই যখন চোটগ্রস্ত, তখন ভালো বিকল্প দরকার ছিল; কিন্তু হাভিয়ের কাবরেরা প্রায়ই বলেন, ইয়াছিন বিল্ডআপ খেলতে পারেন না। সব সময় সবাইকে সব প্রতিপক্ষের বিপক্ষে বিল্ডআপ খেলতে হবে এমন কথা নেই।

বিশেষ করে প্রতিপক্ষ যখন হংকংয়ের মতো শক্তিশালী দল। এ কারণে সেন্ট্রাল ডিফেন্সে বিকল্প রাখা দরকার ছিল। ম্যাচের এক পর্যায়ে অর্ধেক ফিট তারিককে উঠিয়ে নিতে হয়। তপুকে শেষ দিকে নিরুপায় হয়ে নামান কোচ, তিনি পুরো ফিট ছিলেন না। এতেই বোঝা যাচ্ছে বাংলাদেশের রক্ষণে অবস্থা কেমন ছিল হংকং ম্যাচে।

২. ফুটবলের বেশির ভাগ গোল হয় উইং থেকে ক্রসে। এই কাজটা রাইট উইং থেকে ভালো করেন রাকিব হোসেন; কিন্তু কাল রাকিব স্ট্রাইকার পজিশন থেকে উইংয়ে এসেছেন। প্রতিপক্ষ তাঁর ক্রস করার রাস্তাগুলো বন্ধ করেছে। এটা জানাই, বাংলাদেশ দলে নাম্বার নাইন নেই। সেটির দরকারও পড়েনি গতকালের ম্যাচে। বাংলাদেশের হয়ে গোল করেছে মিডফিল্ডাররা। কিন্তু উইং প্লে ভালো হয়নি। রাকিব উইংয়ে খেললে স্ট্রাইকারের পজিশনে ক্রস যেত। তাঁকে প্রথাগত উইঙ্গার হিসেবে খেলালেই হয়তো বেশি কার্যকর হতো; কিন্তু কোচ তা করেননি।

৩. যোগ করা সময়ের নবম মিনিটে বাংলাদেশ নাটকীয়ভাবে ৩-৩ করেছে। কিন্তু তৃতীয় গোলের পর কার্যত মনোযোগ হারিয়ে ফেলেছে পুরো দল। কোচ কাবরেরা যেভাবে ওই গোল উদ্‌যাপন করেছেন, তা অভাবনীয় । গোল হয়েছে ভালো কথা, খেলা তো তখনো বাকি। সেটিই যেন ভুলে যান কোচ। কী করতে হবে, শেষ এক–দুই মিনিটে কোনো নির্দেশনা ছিল না। যে কারণে শেষ বাঁশির কয়েক সেকেন্ড আগে গোল খেয়ে হার হয় বাংলাদেশের।

৪. এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে যাওয়ার লড়াইয়ে টিকে থাকতে হংকং ম্যাচে জয়ের বিকল্প ছিল না। ঘরের মাঠে খেলা; কিন্তু সেরা দলটাকে নামালেন না কোচ! তাঁর একাদশ নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ। শমিত সোমকে একাদশে নিয়ে প্রয়োজনে তাঁকে বদল করতে পারতেন কোচ। নিশ্চয়ই কোচকে শমিত বলেননি যে একাদশে খেলতে পারবেন না তিনি। শমিত খেলার জন্যই সুদূর কানাডা থেকে এসেছেন।

অথচ কোচ আগেই বলেছেন, শমিতকে শুরুতে নামাবেন না। এটা আগেই ঠিক করে ফেলাটা কাবরেরার ভুল হয়েছে কি না, তা তিনি নিশ্চয়ই এখন বুঝতে পারছেন। বদলি নেমে শমিত যেভাবে খেলেছেন এবং গোল করেছেন, তাতে একাদশে খেলতেই পারতেন। কোচ বলেছেন, শমিত চোটের কারণে গত দুই মাস ঠিকমতো ফুটবলে ছিলেন না। সেটিই যদি হয়, তাহলে তাঁকে আনা হলো কেন? শমিত যেকোনো বিচারেই বাংলাদেশের অন্য ফুটবলারদের চেয়ে এগিয়ে। তাঁকে বেঞ্চে বসিয়ে রাখার কোনো অর্থ হয় না এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে। যদি তাঁর ভালো বিকল্প থাকত, তাহলে ভিন্ন কথা। তরুণ লেফট ব্যাক জায়ান আহমেদ অনূর্ধ্ব-২৩ দলে ভালো খেলেছেন। যেমন ভালো খেলেছেন শেখ মোরছালিন। অনূর্ধ্ব-২৩ দলে ভালো খেলার কারণেই এ ম্যাচে মোরছালিনকে একাদশে নেন কোচ। কিন্তু জায়ানকে কেন নেননি প্রশ্ন থাকছেই। জায়ান বদলি নেমে দেখিয়ে দিয়েছেন সাদের জায়গায় তিনিই বেশি কার্যকর হতে পারতেন। মনে হয়েছে, সাদকে জোর করে খেলানো হয়েছে। তাঁর পায়ের ফাঁক গলে বল বেরিয়েছে রক্ষণে। বসুন্ধরায় সাদ ভুল করলে অন্যরা পুষিয়ে নেন; কিন্তু জাতীয় দলে ভুলের খেসারত দিতে হয় অনেক। হংকং তা দেখিয়ে দিল।

৫. দুই সোহেল রানাকে মাঝমাঠে খেলিয়েছেন কোচ। দুজনের কোনো কার্যকারিতা চোখে পড়েনি। সোহেল সিনিয়র অনেক বছর খেলছেন; কিন্তু অবদান রাখতে পারছে না বলার মতো। কালেভদ্রে গোলে সোহেল রানা দু–একটা শট নেওয়া ছাড়া আর কিছু দেখা যায় না। জুনিয়র সোহেল রানা বেশি ম্যাচ খেলেননি। চাপও নিতে পারেননি হংকং ম্যাচে। এতেই বোঝা যাচ্ছে হংকং ম্যাচের একাদশ নির্বাচন ঠিক ছিল না।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন