ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি রান কোন ১০ ব্যাটসম্যানের


রোহিত শর্মা
মোট রান: ১১,১৬৮
গড়: ৪৮.৭৬
স্ট্রাইক রেট: ৯২.৮০
সেঞ্চুরি: ৩২
হাফ সেঞ্চুরি: ৫৮

তিনি অনেকের চোখেই আধুনিক ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত সংস্করণে অন্যতম সেরা ওপেনার। নিজের প্রজন্মে অন্যতম সেরা তো বটেই। ওয়ানডেতে কতটা ভালো, তা পরিসংখ্যানই বলে দেয়। এই সংস্করণে তাঁর করা মোট রানের মধ্যে ৯১৩৮ রানই এসেছে ওপেনিংয়ে নেমে। এই সংস্করণে সর্বোচ্চ তিনটি ডাবল সেঞ্চুরি এবং ইনিংসে সর্বোচ্চ রানের (২৬৪) রেকর্ডও রোহিত শর্মার। শুধু তা–ই নয়, ওয়ানডে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ৭ সেঞ্চুরির রেকর্ড এবং প্রথম ও একমাত্র অধিনায়ক হিসেবে আইসিসির সব টুর্নামেন্টে ফাইনালেও খেলেছেন রোহিত। রাজকীয় ব্যাটিংয়ের প্রতিশব্দ হয়ে থাকা রোহিত টি–টোয়েন্টি ও টেস্ট ছাড়লেও ৩৮ বছর বয়সেও ওয়ানডে খেলে যাচ্ছেন।

সৌরভ গাঙ্গুলী
মোট রান: ১১,৩৬৩

গড়: ৪১.০২

স্ট্রাইক রেট: ৭৩.৭০

সেঞ্চুরি: ২২

হাফ সেঞ্চুরি: ৭২

খেলোয়াড়ি জীবনে তাঁকে অনেকেই ‘প্রিন্স অব ক্যালকাটা’ বলে ডাকতেন। ব্যাটিংয়েও, বিশেষ করে অফ সাইডে মহারাজসুলভ একটা ছাপ ছিল। সংক্ষিপ্ত সংস্করণে ভারতের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান, দেশটির ক্রিকেট ইতিহাসে অন্যতম সেরা অধিনায়কও। শচীন টেন্ডুলকার ও ইনজামাম–উল–হকের পর তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ওয়ানডেতে দেখা পেয়েছিলেন ১০ হাজার রানের। বিশ্বকাপে ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের (১৮৩) ইনিংস খেলার রেকর্ডধারী সৌরভ গাঙ্গুলীর অধিনায়কত্বে ২০০২ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জিতেছে ভারত। ২০০৩ বিশ্বকাপের ফাইনালেও খেলেছে।

জ্যাক ক্যালিস
মোট রান: ১১,৫৭৯

গড়: ৪৪.৩৬

স্ট্রাইক রেট: ৭২.৮৯

সেঞ্চুরি: ১৭

হাফ সেঞ্চুরি: ৮৬

জ্যাক ক্যালিস কারও কারও চোখে সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার! স্যার গারফিল্ড সোবার্সের পর ব্যাটে–বলে ক্যালিসের মতো এত ধারাবাহিক অলরাউন্ডার আর আসেনি বলেও কেউ কেউ মনে করেন। সেই ক্যালিস ইতিহাসের একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডে ও টেস্টে ন্যূনতম ১০ হাজার রান ও আড়াই শ উইকেট নিয়েছেন। ওয়ানডেতে এখন পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার জেতা একমাত্র আইসিসি শিরোপা (১৯৯৮ আইসিসি নকআউট ট্রফি) জয়ে ওই টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হয়েছিলেন ক্যালিস। ক্রিজে এসে যেকোনো পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া এবং সোজা ব্যাটে খেলায় জুড়ি ছিল না এই কিংবদন্তি অলরাউন্ডারের। ওয়ানডেতে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ১০ হাজার রান শুধু ক্যালিসেরই আছে।


ইনজামাম–উল–হক
মোট রান: ১১,৭৩৯

গড়: ৩৯.৫২

স্ট্রাইক রেট: ৭৪.২৪

সেঞ্চুরি: ১০

হাফ সেঞ্চুরি: ৮৩

বীরেন্দর শেবাগের মতে, এশিয়ার সেরা মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। ‘ইনজি’ নামে খেলোয়াড়ি জীবনে পরিচিতি পাওয়া কিংবদন্তি ওয়ানডেতে পাকিস্তানের বহু ম্যাচ জয়ের নায়ক। ১৯৯২ বিশ্বকাপ জয়েও দারুণ ভূমিকা ছিল বল খেলার জন্য অন্যদের চেয়ে বেশি সময় পাওয়া ইনজামামের। পাকিস্তানের একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে আন্তর্জাতিক আঙিনায় অন্তত ২০ হাজার রান তাঁর। অবসর নেওয়ার সময় ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি ফিফটির রেকর্ড ছিল ইনজামামের। শচীন টেন্ডুলকারের পর ইতিহাসের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ওয়ানডেতে ১০ হাজার রানের দেখা পেয়েছিলেন ইনজামাম।

মাহেলা জয়াবর্ধনে
মোট রান: ১২,৬৫০

গড়: ৩৩.৩৭

স্ট্রাইক রেট: ৭৮.৯৬

সেঞ্চুরি: ১৯

হাফ সেঞ্চুরি: ৭৭

শ্রীলঙ্কার সর্বকালের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। সনাৎ জয়াসুরিয়ার পর দ্বিতীয় লঙ্কান হিসেবে ওয়ানডেতে ১০ হাজার রানের দেখা পান। ২০০৭ ও ২০১১ বিশ্বকাপ ফাইনালে খেলেন। ২০১১ বিশ্বকাপ ফাইনালে সেঞ্চুরিও করেন। জয়াবর্ধনের ব্যাটিংয়ের সৌন্দর্য ছিল চোখজুড়ানো সব শট।

সনাৎ জয়াসুরিয়া
মোট রান: ১৩,৪৩০

গড়: ৩২.৩৬

স্ট্রাইক রেট: ৯১.২০

সেঞ্চুরি: ২৮

হাফ সেঞ্চুরি: ৬৮

ছক্কা: ২৭০

ওয়ানডেতে প্রথম ১৫ ওভারের ফিল্ডিং রেস্ট্রিকশনে কীভাবে দ্রুত রান তুলতে হয়, সেটার পথপ্রদর্শকদের অন্যতম সনাৎ জয়াসুরিয়া। বলটা পেটানোর—সংস্করণ যেটাই হোক, গোটা ক্যারিয়ারেই এই দর্শন মেনেছেন জয়াসুরিয়া। ওয়ানডেতে সর্বকালের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডারদের কাতারেও তাঁকে রাখা হয়। ওয়ানডেতে একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে ১০ হাজার রান ও ন্যূনতম ৩০০ উইকেট নেওয়ার রেকর্ডও জয়াসুরিয়ার। শ্রীলঙ্কার ১৯৯৬ বিশ্বকাপ জয়ের পথে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ও হন। একসময় ওয়ানডেতে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ডও ছিল তাঁর দখলে। আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান হিসেবেই তাঁকে মনে রেখেছেন অনেকেই এবং কারও কারও চোখে আধুনিক সময়ে আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের ‘ব্লু–প্রিন্ট’টা তাঁর তৈরি করা।

রিকি পন্টিং
মোট রান: ১৩,৭০৪

গড়: ৪২.০৩

স্ট্রাইক রেট: ৮০.৩৯

সেঞ্চুরি: ৩০

হাফ সেঞ্চুরি: ৮২

টেস্ট কিংবা ওয়ানডে—সর্বকালের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানদের কাতারে তাঁর নামটা থাকবেই। টেস্ট ও ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়ার সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। ছেলেদের ক্রিকেটে অধিনায়ক হিসেবে সর্বোচ্চ আইসিসি ট্রফি জিতেছেন। এমন আরও অনেক কীর্তিই তাঁর আছে। ব্যাটসম্যান রিকি পন্টিং মানে ছিল অস্ট্রেলিয়ার ৩ নম্বরে আস্থা ও আক্রমণের মিশেল। ২০০৩ বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে তাঁর সেই সেঞ্চুরি এখনো অনেকের চোখে ভাসে। খেলোয়াড় হিসেবে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ২৬২ ম্যাচ জয়ের রেকর্ডও পন্টিংয়ের।

বিরাট কোহলি
মোট রান: ১৪,১৮১

গড়: ৫৭.৮৮

স্ট্রাইক রেট: ৯৩.৩৪

সেঞ্চুরি: ৫১

হাফ সেঞ্চুরি: ৭৪

সংক্ষিপ্ত সংস্করণে সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন। রান তাড়ায় সম্ভবত তাঁর চেয়ে ভালো আর কেউ নেই। সৌন্দর্য ও আক্রমণাত্মক মানসিকতার মিশেলে গড়া তাঁর ব্যাটিং। ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির রেকর্ডধারী। ভারতের ২০১১ বিশ্বকাপজয়ী দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। ওয়ানডেতে শচীন টেন্ডুলকারের পর ভারতের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টেন্ডুলকারের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সেঞ্চুরিও বিরাট কোহলির।

কুমার সাঙ্গাকারা
মোট রান: ১৪,২৩৪

গড়: ৪১.৯৮

স্ট্রাইক রেট: ৭৮.৮৬

সেঞ্চুরি: ২৫

হাফ সেঞ্চুরি: ৯৩

ক্রিকেট ইতিহাসে অন্যতম সেরা উইকেটকিপার–ব্যাটসম্যান। ওয়ানডেতে উইকেটকিপারদের মধ্যে তাঁর সেঞ্চুরির সংখ্যাই সর্বোচ্চ (২৫)। তাঁর কাভার ড্রাইভ অনেকের চোখেই নিখুঁত। তিন সংস্করণ মিলিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক কুমার সাঙ্গাকারা।

শচীন টেন্ডুলকার
মোট রান: ১৮,৪২৬

গড়: ৪৪.৮৩

স্ট্রাইক রেট: ৮৬.২৩

সেঞ্চুরি: ৪৯

হাফ সেঞ্চুরি: ৯৬

কারও কাছে তিনি ব্যাটিংয়ের শেষ কথা। কারও কাছে ক্রিকেটের ‘ঈশ্বর’—তবে এ ধারণাটি ভারতে বেশি প্রচলিত। শচীন টেন্ডুলকার যেন আক্ষরিক অর্থেই ভারতের ক্রিকেট–ঈশ্বর! সর্বকালের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানদের খুব সংক্ষিপ্ত তালিকায়ও তাঁর নামটা থাকে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে ১০০ সেঞ্চুরির মালিক। বিরাট কোহলি ভেঙে দেওয়ার আগে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির রেকর্ড ছিল তাঁর দখলে। ওয়ানডেতে প্রথম ব্যক্তিগত ২০০ রানের ইনিংসও তাঁর। ভারতের হয়ে ছয়টি বিশ্বকাপে খেলে ২০১১ সালে ট্রফির দেখা পান। ২০০৩ বিশ্বকাপে হয়েছিলেন টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন