সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে সাদা পাথর লুটের পর এবার হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে শুরু হয়েছে ‘সাদা সোনা’ খ্যাত সিলিকা বালু লুট। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন প্রকাশ্যে চলছে অবৈধ বালু উত্তোলন ও পাচার। এতে ধ্বংস হচ্ছে পাহাড়-টিলা, চা-বাগান ও কৃষিজমি; ভেঙে পড়ছে সড়ক ও ব্রিজ-কালভার্ট।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চুনারুঘাট উপজেলার পাইকপাড়া ইউনিয়নের গিলানি ছড়া, পানছড়ি, পঞ্চাশ, ডেউয়াতলী, দেওছড়া, ইছালিয়াছড়া, রঘুনন্দন পাহাড়, হলহলিয়া, দেউন্দি ছড়া, দেওরগাছ, বদরগাজী এলাকা এবং সুতাং ও খোয়াই নদীর বিভিন্ন স্পটে দিনরাত চলছে বালু উত্তোলন। কোথাও ড্রেজার মেশিনের গর্জন, কোথাও শত শত নারী-পুরুষ শ্রমিক বালু তুলছেন হাতে কোদাল ও ঝুড়ি নিয়ে। উত্তোলিত বালু রাতের আঁধারে ট্রাক ও ট্রাক্টরে করে পাচার করা হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে।
এই বালুর মধ্যেই রয়েছে সিলিকা বালু—যা স্থানীয়দের ভাষায় ‘সাদা সোনা’। কাঁচ ও সিরামিক শিল্পে ব্যবহৃত এই বালু দেশব্যাপী উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকেই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বালুখেকো চক্র। রাজনৈতিক প্রভাব, জনপ্রতিনিধিত্ব এবং পেশিশক্তির দাপটে ভাগাভাগি করে বালু লুট চলছে। প্রশাসনের অভিযান মাঝে মধ্যে দেখা গেলেও মূল হোতারা রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।
প্রতিবারের মতো এবারও দেখা যাচ্ছে—অভিযানকালে কয়েকজন শ্রমিক আটক বা জরিমানা হলেও সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে থাকা প্রভাবশালী মহল অক্ষত থাকছে। ফলে থামছে না এই অবৈধ বালু বাণিজ্য।
চুনারুঘাটের বিভিন্ন ছড়া ও নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে পাহাড়-টিলা ধসে পড়ছে, চা-বাগানের মাটি ক্ষয়ে যাচ্ছে, ফসলি জমি বালিতে ঢেকে যাচ্ছে। স্থানীয়রা বলছেন, রাস্তাঘাট ও ব্রিজ-কালভার্ট ভাঙনের কারণে যান চলাচলেও মারাত্মক দুর্ভোগ তৈরি হয়েছে।
পরিবেশবাদীরা আশঙ্কা করছেন, এখনই যদি প্রশাসন কঠোর অবস্থান না নেয়, তাহলে চুনারুঘাটের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ভয়াবহ সংকটে পড়বে।
চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন,
“আমরা ইতোমধ্যে উপজেলার সব বালুমহাল ও ছড়া পরিদর্শন করেছি। একাধিক অভিযানে বালু পরিবহনের গাড়ি জব্দ করা হয়েছে এবং অনেককে জরিমানা করা হয়েছে। আমার উপজেলায় কোনো সিলিকা বালুমহাল ইজারা নেই। কেউ অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করলে তার বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করা হবে।”
তিনি আরও জানান, প্রশাসন সর্বদা সতর্ক আছে এবং বালু পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে।
খনিজ সম্পদ (নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন) আইন, ১৯৯২ এবং বিধিমালা ২০১২ অনুযায়ী, অনুমতি ছাড়া বালু বা পাথর উত্তোলন শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কোম্পানীগঞ্জে সাদা পাথর লুটের ঘটনায় যেমন দুই হাজার ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তেমনি চুনারুঘাটেও প্রশাসন যদি কার্যকরভাবে আইন প্রয়োগ না করে, তবে একই পরিণতি হতে পারে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।