কার কত রান তালিকায় চোখ রাখলেই বোঝা যায়, সর্বোচ্চ রান কার। আরেকটু তলিয়ে দেখলে পাওয়া যায় ব্যাটিংয়ে নেমে ইনিংসপ্রতি গড়ে কে এগিয়ে। আবার দলের সংগ্রহ আর ব্যাটসম্যানদের রান দেখলে হিসাব করা যায় দলের জন্য কার কতটুকু অবদান।
তবে এসব মানদণ্ডে একজন ব্যাটসম্যানের একেকটি দিক সম্পর্ক ধারণা পাওয়া যায়। কেউ রানে এগিয়ে, কেউ আবার গড়ে। কিন্তু মোটের ওপর সবার ওপরে কে?
ব্যাটিংয়ের নানা দিকের তথ্য–উপাত্ত বিশ্লেষণ করে সেটিই বের করার চেষ্টা করেছেন ইএসপিএনক্রিকইফোর লেখক অনন্ত নারায়ন। টেস্ট খেলুড়ে শীর্ষ ১০টি দেশের শীর্ষ ব্যাটসম্যানদের একটি তালিকা তৈরি করেছেন তিনি, যেখানে আছে বাংলাদেশের শীর্ষ তিনের তথ্যও।
শীর্ষ ব্যাটসম্যান খুঁজে বের করতে চারটি মৌলিক পরিমাপক বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। পরিমাপকগুলো হচ্ছে মোট রান, ব্যাটিং গড়, টেস্ট গড় এবং দলের রানে অবদানের হার। প্রতিটি ব্যাটসম্যানের জন্য মোট ১০ পয়েন্ট বরাদ্দ করা হয়েছে। এই ১০ পয়েন্ট ভাগ করা হয়েছে ৪-৩-২-১ বিন্যাসে।
৪.০ পয়েন্ট: একজন ব্যাটসম্যানের মূল দায়িত্বই হচ্ছে রান করা। অন্য সব পরে। যে কারণে ক্যারিয়ারের মোট রানকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। সর্বোচ্চ ৪ পয়েন্ট বরাদ্দ করা হয়েছে ১৬,০০০ রানের জন্য। (বর্তমান সর্বোচ্চ শচীন টেন্ডুলকারের ১৫,৯২১ রান)।
৩.০ পয়েন্ট: ব্যাটিং গড় একজন ব্যাটসম্যানের প্রকৃত পারফরম্যান্স পরিমাপক। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণও। ১০০ গড়ের জন্য সর্বোচ্চ পয়েন্ট (৩) বরাদ্দ রাখা হয়েছে (বর্তমান সর্বোচ্চ ডন ব্র্যাডম্যানের ৯৯.৯৪)।
২.০ পয়েন্ট: প্রতি টেস্টে রান ক্যারিয়ারের গড়ের চেয়ে সূক্ষ্মভাবে ভিন্ন। এতে ব্যাটসম্যানের প্রকৃত অবদান ফুটে ওঠে। প্রতি টেস্টে ১৪০ রান সর্বোচ্চ মান হিসাবে ধরা হয়েছে (বর্তমান সর্বোচ্চ ডন ব্র্যাডম্যানের ১৩৪.৫)।
১.০ পয়েন্ট: দলের মোট রানের শতকরা অংশ একজন ব্যাটসম্যানের দলের প্রতি অবদানের প্রতিফলন। দলের মোট রানের ২৫% অংশের জন্য সর্বোচ্চ পয়েন্ট বরাদ্দ (বর্তমান সর্বোচ্চ ডন ব্র্যাডম্যানের ২৪.৯৭%)।
এসব পরিমাপক অনুসারে মোট ১০ পয়েন্টের মধ্যে ৪.১৯ পয়েন্ট পেয়েছেন মুশফিকুর রহিম, যা বাংলাদেশিদের মধ্যে সর্বোচ্চ। এ ক্ষেত্রে মুশফিক ৬৩২৮ রান করে পেয়েছেন ১.৫৮ পয়েন্ট, ৩৮.১২ গড় থেকে ১.১৪ পয়েন্ট।
মুশফিকের পরের অবস্থান তামিম ইকবালের। মোট চারটি পরিমাপকের মধ্যে তিনটিতেই মুশফিকের চেয়ে তামিম এগিয়ে, কিন্তু পিছিয়ে গেছেন রানের কারণে। মুশফিকের চেয়ে প্রায় ১২০০ রান কম হওয়ায় এই মানদণ্ডে তাঁর ০.৩০ পয়েন্ট কম তাঁর (১.২৮)। কিন্তু গড়, টেস্টপ্রতি রান ও দলের রানে অংশের দিক থেকে এগিয়ে থাকায় সব মিলিয়ে তামিম দ্বিতীয় স্থানে মুশফিকের চেয়ে ০.১০ পয়েন্টে পিছিয়ে যাওয়ায়।
শীর্ষ তিন ব্যাটসম্যানের মধ্যে তৃতীয় সাকিব আল হাসান। মুশফিকের তুলনায় গড় ও টেস্ট প্রতি রানে বেশি পয়েন্ট থাকলেও মোট রানে তিনি পিছিয়ে। দলের রানে অবদান সাকিব অবশ্য মুশফিকের সমানই। দুজনই এই পরিমাপকে পেয়েছেন ০.৫৪ পয়েন্ট।
বাংলাদেশের শীর্ষ তিন ব্যাটসম্যানের এই তালিকায় মুশফিকের অবস্থান সামনে আরও সুদৃঢ় হতে পারে। কারণ, সাকিব ও তামিম দুজনই এরই মধ্যে টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় বলেছেন। তবে মুশফিক এখনো খেলছেন।
৪ পরিমাপক অনুসারে টেস্ট খেলুড়ে অন্য দেশগুলোর শীর্ষ ব্যাটসম্যানের যে নাম উঠে এসেছে, সেটা এ রকম:
অস্ট্রেলিয়া: ডন ব্র্যাডম্যান, রিকি পন্টিং, স্টিভ স্মিথ, অ্যালান বোর্ডার,স্টিভ ওয়াহ।
ইংল্যান্ড: জো রুট, অ্যালিস্টার কুক, ওয়ালি হ্যামন্ড, লেন হটন, কেন বেরিংটন।
দক্ষিণ আফ্রিকা: জ্যাক ক্যালিস, গ্রায়েম স্মিথ, এবি ডি ভিলিয়ার্স, হাশিম আমলা, গ্যারি কারস্টেন।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ব্রায়ান লারা, শিবনারায়ন চন্দরপল, গ্যারি সোবার্স, ভিভ রিচার্ডস, এড উইকস।
নিউজিল্যান্ড: কেন উইলিয়ামসন, রস টেলর, স্টিভেন ফ্লেমিং, মার্টিন ক্রো, ব্রেন্ডন ম্যাককালাম।
ভারত: শচীন টেন্ডুলকার, রাহুল দ্রাবিড়, সুনীল গাভাস্কার, বীরেন্দর শেবাগ, বিরাট কোহলি।
পাকিস্তান: ইউনিস খান, জাভেদ মিয়াঁদাদ, ইনজামাম উল হক, মোহাম্মদ ইউসুফ, আজহার আলী।
শ্রীলঙ্কা: কুমার সাঙ্গাকারা, মাহেলা জয়াবর্ধনে, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস, দিমুত করুনারত্নে, অরবিন্দ ডি সিলভা।
জিম্বাবুয়ে: অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার, ব্রেন্ডন টেলর, গ্রান্ট ফ্লাওয়ার।
বাংলাদেশ: মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান।
বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ে টেস্ট পরিবারের অপেক্ষাকৃত নতুন দল হওয়ায় শীর্ষ তিনের তালিকা করা হয়েছে। আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ডের ম্যাচসংখ্যা কম বলে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।