সুনামগঞ্জের সীমান্তবর্তী যাদুকাটা নদীতে ইজারার বাইরে বিপুল পরিমাণে বালু উত্তোলনের ঘটনায় পরিস্থিতি ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। যাদুকাটা নদী রক্ষায় এখন সম্মিলিত উদ্যোগই হতে পারে একমাত্র সমাধান বলে জানিয়েছেন সুনামগঞ্জ ব্যাটালিয়ন (২৮ বিজিবি) অধিনায়ক লেঃ কর্নেল এ কে এম জাকারিয়া কাদির পিএসসি।
সীমান্ত সুরক্ষা, অবৈধ অনুপ্রবেশ ও চোরাচালান প্রতিরোধে ব্যস্ত বিজিবি জানিয়েছে, অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে এককভাবে কাজ করায় সীমান্ত নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়ছে।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) সুনামগঞ্জ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল এ কে এম জাকারিয়া কাদির স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সীমান্ত সুরক্ষা বিজিবির প্রধান দায়িত্ব হলেও সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে বিজিবি যাদুকাটা নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। সম্প্রতি কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও কুচক্রি মহল ইজারা বহির্ভূত খাস জমি থেকে বালু উত্তোলনের পরিকল্পনা নিয়ে একযোগে প্রায় ১৫০০ থেকে ২০০০ নৌকা ও ১৫ থেকে ২০ হাজার শ্রমিক দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। বিশেষ করে গভীর রাতে এসব কার্যক্রম বেড়ে যাওয়ায় বিজিবি ছাড়া অন্য কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেখানে উপস্থিত থাকে না।
লে. কর্নেল জাকারিয়া কাদির বলেন, “লাউরগড় সীমান্ত এলাকা অত্যন্ত স্পর্শকাতর। সীমান্ত দিয়ে অস্ত্র, মাদক ও অন্যান্য চোরাচালান ঠেকাতে বিজিবি নিয়মিত টহল দিচ্ছে। অথচ বালু উত্তোলন ঠেকাতে বিজিবির সদস্যদের ক্রমাগত ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে, এতে সীমান্ত সুরক্ষা ঝুঁকির মুখে পড়ছে।”
বিজিবি জানায়, যাদুকাটা নদীর পাড় ভাঙন ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার ফলে ভবিষ্যতে লাউরগড় বিওপি ও আশপাশের গ্রামগুলো মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের সহায়তায় নিয়মিত টাস্কফোর্স অভিযান পরিচালনা করা হলেও, অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিপুল সংখ্যা ও সরঞ্জামের তুলনায় বিজিবির জনবল ও নৌযান খুবই সীমিত।
এ পরিস্থিতিতে বিজিবি জেলা প্রশাসনকে লিখিত ও মৌখিকভাবে জানিয়ে কয়েকটি প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে-বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে একটি স্থায়ী পোস্ট স্থাপন,নিয়মিত টাস্কফোর্স অভিযান, ইজারাকৃত এলাকায় মজবুত খুঁটি ও পতাকা স্থাপন, নৌ-পুলিশের সার্বক্ষণিক টহল তৎপরতা এছাড়া,ইজারাদারদের অনিয়ম প্রমাণিত হলে ইজারা বাতিল করারও প্রস্তাব দিয়েছে বিজিবি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ ও জনপ্রিয় পর্যটন স্পট শিমুলবাগান, বারেকটিলা এবং যাদুকাটা নদী রক্ষায় প্রশাসন, স্থানীয় জনগণ ও গণমাধ্যমের আন্তরিক সহযোগিতা এখন অত্যন্ত প্রয়োজন।
লে. কর্নেল জাকারিয়া কাদির শেষে বলেন,“বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ সীমান্ত সুরক্ষা,চোরাচালান প্রতিরোধ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সর্বোচ্চ দায়িত্ব পালন করছে। তবে যাদুকাটা নদী রক্ষায় এখন সম্মিলিত উদ্যোগই হতে পারে একমাত্র সমাধান।