প্রচারণার উত্তাপে যখন জমজমাট হয়ে উঠেছিল সিলেট নগর—দুই প্যানেলের ব্যানার, পোস্টার, স্লোগানে মুখরিত ছিল ব্যবসায়িক অঙ্গন—ঠিক তখনই বজ্রপাতের মতো নেমে এলো নির্বাচন স্থগিতের খবর।
সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির বহুল প্রতীক্ষিত নির্বাচনের ভোটগ্রহণের মাত্র ছয় দিন আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে হঠাৎ স্থগিত করা হলো ভোট।
রোববার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব চৌধুরী সামিয়া ইয়াসমিন স্বাক্ষরিত পত্রে নির্বাচনের কার্যক্রম স্থগিতের নির্দেশ আসে।
আগামী ১ নভেম্বর (শনিবার) অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল ভোটগ্রহণ।
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে—সদস্যপদ পুনরায় যাচাই-বাছাই করে পরবর্তী সময়ে নতুন তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
নির্বাচন স্থগিতের খবর ছড়িয়ে পড়তেই ব্যবসায়ীদের মধ্যে দেখা দেয় তীব্র ক্ষোভ।
অনেকেই বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে কূটকৌশল ও প্রভাব খাটিয়ে একটি গোষ্ঠী সিলেট চেম্বারকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল।
তাদের মতে, প্রায় দেড় দশক ধরে সমঝোতার নামে ‘নির্বাচনবিহীন নেতৃত্ব’ চলেছে এই শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠনে।
সিলেট চেম্বারের সাবেক সভাপতি ও ব্যবসায়ী নেতা খন্দকার শিপার আহমেদ নির্বাচন স্থগিতের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন—
“হঠাৎ নির্বাচন স্থগিত করা সিলেটের ব্যবসায়ীদের ভোটাধিকার হরণের শামিল। যারা ভোটে নির্বাচিত হতে ভয় পান, তারাই এই সিদ্ধান্তের পেছনে কলকাঠি নাড়ছেন।”
তিনি আরও বলেন, “ফ্যাসিস্ট সমর্থক একটি গোষ্ঠী সিলেট চেম্বারে কখনও নির্বাচন চায়নি।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ীই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত।”
চেম্বার সদস্য, সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভাইস চেয়ারম্যান এবং সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বলেন—
“এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত সিদ্ধান্ত সাধারণ ব্যবসায়ীদের স্বার্থবিরোধী।
দীর্ঘদিন ধরে ফ্যাসিবাদের কবলে ছিল সিলেট চেম্বারের নেতৃত্ব।
অবশেষে ব্যবসায়ীরা আইনি ও গণতান্ত্রিক লড়াইয়ের মাধ্যমে মুক্ত পরিবেশে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। এখন হঠাৎ নির্বাচন স্থগিত করা মানে চেম্বারকে আবারও ফ্যাসিবাদের হাতে তুলে দেওয়া।”
তিনি ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী নির্বাচনের দাবি জানান।
এসোসিয়েট শ্রেণি থেকে পরিচালক পদপ্রার্থী তরুণ ব্যবসায়ী মুহাম্মদ ইব্রাহিম খলিল বলেন—
“সবাই জানেন, কারা এই সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে।
এটি একটি সুপরিকল্পিত উদ্যোগ যাতে গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব গঠনের প্রক্রিয়া বন্ধ করা যায়।
প্রয়োজনে আমরা আন্দোলনে নামবো। সময়মতো নির্বাচন দিতে হবে।”
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পত্রে বলা হয়েছে, “সদস্যদের তালিকা পুনরায় যাচাই-বাছাই করে নির্বাচনের নতুন তফসিল নির্ধারণ করতে হবে।”
তবে মন্ত্রণালয় নির্বাচন স্থগিতের কারণ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেনি, যা ব্যবসায়ীদের মধ্যে আরও প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
নগর ব্যবসায়ী সমাজ মনে করছে, বারবার স্থগিতাদেশ ও তফসিল পরিবর্তনের মাধ্যমে চেম্বারের গণতান্ত্রিক কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
তাদের দাবি, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ ভোটের মাধ্যমে ব্যবসায়ী সমাজের প্রকৃত নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
সিলেট চেম্বার নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় জমে ওঠা উত্তেজনা এখন রূপ নিচ্ছে প্রতিবাদে।
দুই প্যানেলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা ঘিরে যে প্রতীক্ষা ছিল ব্যবসায়ী সমাজে—তা আপাতত অনিশ্চয়তার ঘোরে।
তবে সাধারণ ব্যবসায়ীদের কণ্ঠে একটাই কথা—
“চেম্বার যেন আর ফ্যাসিবাদের কবলে না পড়ে, এবার হোক প্রকৃত গণতান্ত্রিক নির্বাচন।”