শাহীন আমার বন্ধু…

দৈনিক সিলেট ডট কম
ইব্রাহিম চৌধুরী খোকন:এমাদউল্লাহ শহিদুল ইসলাম শাহীন। ডাকসাইটে আইনজীবী। জটিল পেশাজীবীদের নেতা শাহীন আমার দেখা একজন খাঁটি সাদা মনের মানুষ।
রাজনৈতিক সংকটের সময় সরকারি উকিল হিসেবে দায়ীত্ব পেলেন শাহীন।স্বজনরা অভিনন্দন জানাচ্ছেন। দেশে গিয়ে দেখি বড় বড় অর্থবাণ দুর্নীতিবাজদের মহা হাহাকার।চেনা পথে হাঁটার চেষ্টা তাদের।
সততা আর পেশার প্রতি নিষ্টা দিয়ে বন্ধু শাহীন নিজেকেই আবার প্রমাণ করতে দেখলাম।
বেশ গর্বের সাথেই বলেছিলাম,শাহীন পি পি হিসেবে দায়ীত্ব নেয়ায়- পদটি নিজেই হারানো গৌরব ফিরে পেয়েছে।অবশ্য এসব ফিরে পাওয়া গৌরব এর মধেই স্বরুপে ফিরে গেছে।
শাহিন এখন আর সরকারি আইনজীবীর দায়ীত্বে নেই।সমিতির দুই দফা সভাপতিত্ব করে এখন ব্যস্ত পেশাজীবী।
অবশ্য পেশা নিয়েই শুধু যে ব্যস্ততা,তা নয়।কি নিয়ে যে তিনি ব্যস্ত নন,তা টাহর করা মুশকিল।
শাহীনের পরিবার থাকেন আমেরিকার দূরের রাজ্যে।শাহীনদের মতো লোকজনের কাছে স্ত্রী সন্তান আর সমাজ,সামাজিকতা একাকার হয়ে গেছে।
সেই কলেজের ফার্স্ট ইয়ার থেকে শাহীনকে দেখেছি প্রগতিশীল রাজনৈতিক সংঠক হিসেবে।তারপরের দুই দশক জুড়ে বহু আন্দোলন, সংগ্রামের সতীর্থ।
স্বৈরাচার বিরোধী শ্রমিক আন্দোলনে গ্রেফতার হওয়ার পর থানার বন্দি সেলে বসে,শাহীনের চিরকুটই প্রথম পাই।মঞ্জু মিয়ার মাইকের আওয়াজের খানিকটা আগে।
সময় গড়িয়েছে।আমাদের পাশাপাশি বিচরণ থামেনি।
শাহীনের আমেরিকায় আসা হয়।দূরের রাজ্যে পরিবারকে রেখে,আসর বসে নিউজার্সির ঝুল বারান্দায়।
আমরা রাত পেরুনো আকাশ দেখি।কথা আর গল্পে হারিয়ে যাই।আশার কথা,নিরাশার কথা।স্বজন সুহৃদের কথা।হারিয়ে যাওয়া কমরেডদের কথা।রাজনৈতিক, সামাজিক অংগনের আমাদের সব পুরোধাদের নিয়ে আলাপ জমে উঠে।
কারা এখনো পিদীম জ্বালিয়ে রেখেছেন,
কারা পচে গেছেন-তাদের কথা।প্রয়াত আসদ্দর আলী,সৈয়দ আকমল হোসেন,আশিক চৌধুরীকে নিয়ে আমরা কথা বলি।কথা বলি কবি দিলওয়ার, মাজারের হুজুর, মতোয়াল্লি নিয়ে।জেলা বারের কে আছেন,কে নেই – এমন আলাপে রাত বাড়ে।
৩০ বছর খোঁজ নেই এমন বন্ধু, সহপাঠীদদের সাথে শাহীনের সমান যোগাযোগ।আবার সংযোগ হয় তাদের সাথে। মাধ্যম শাহীন।
শাহীনের কাছে সবার সব খবর নখ দর্পনে।নিতান্ত পারিবারিক খবর থেকে অনেক উঁচু তলার খবর শুনি।শাহিনের এমন ব্যাপক সংলগ্নতা দেখে অবাক হই।শিল্প সাহিত্য নিয়ে,লেখালেখি নিয়ে আমাদের আলাপ হয়।এসবের টাটকা খবর,নাজানা সব তথ্য শুনি দুরের দেশে বসে।লড়াকু চা শ্রমিকের আন্দোলন থেকে পীর ফকিরের তামাম সালতামামিতে শাহীনের নানা বৈপরিত্য দেখি।অবাক হই।
আমরা ইউনিয়ন স্কোয়ারে যাই।অকুপাই আন্দোলনের কমরেডদের খোঁজি।সাম্রাজ্যবাদের দেশে এসে শাহীনকে পুঁজিবাদ নিয়ে ভাবতে হয়,কথা বলতে হয়।আমরা পত্রিকার আড্ডায় বসি।টিভিতে আলাপে বসি।আমার এক নির্মল আড্ডা আর আনন্দের সময় প্রবাসে শাহীনের সান্নিধ্য।
পারিবারিক কাজে,সংকটে,সামাজিকতায় দেশে ফোন করলে মধ্যরাত পেরুনো শাহিনকেই পাওয়া যায়।
প্রবাসে থাকা আমার বিশাল পরিবারের স্বজন শাহীন।দেশে গেলে সবাই জানতে চান,কোথায় পাওয়া যাবে।বলি,শাহিনের প্রযত্নেই আছি। পুরনো কর্মস্থল বার লাইব্রেরীতে যাই।অল্প বয়সে উকিল হওয়া শাহীন এখন সিনিয়র আইনজীবী। পাশা পাশি হেঁটে নিজেকেও সিনিয়র মনে করে লজ্জাই পাই।
নিজের পেশা,শিক্ষকতা,সামাজিকতা,রাজনীতি,নানাসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের,পেশাজীবী প্রতিষ্টানের দায়ীত্ব নিয়ে শাহীনের ব্যস্ততা দেখি।একই দিনে তিনটি বিয়ের আসরেও তাঁকে পেয়ে যাই।রাতে বন্ধুদের আড্ডায়ও প্রাঞ্জল উপস্থিতি আমাকে মুগ্ধ করে।
আমার নিগূঢ় বিপ্লবী অনুরাগীরা নানা অনুযোগও করেন।
তাদের বলতে হয়,অনুযোগ আনার মতো বেশি লোক তো আর আশে পাশে অবশিষ্ট নেই।
একজন শহিদুল ইসলাম শাহীনের প্রতি অনুযোগতো জানানো যায় আজও।
আমাদের প্রজন্মের একজন সৎ বিনয়ী,সহমর্মি সংবেদনশীল আলোকিত মানুষ শাহীন।
অনেক অনুরাগী, অনুসারীর ভিড়ে শাহীনকে জন্মদিনের শুভেচ্ছাটা জানাতে গিয়ে টের পাই,বড্ড ব্যস্ত সময় গেছে-যাচ্ছে আমাদের।
এ ব্যস্ততার এক নীরব কান্না আছে।আছে দীর্ঘশ্বাস। এসব নিয়েই রাতের নির্জনতা ভাংগে।দিনের কোলাহল স্তব্দ হয়ে পড়ে কদাচিৎ ।বসন্তের স্বচ্ছ আকাশের দিকে চেয়ে অস্ফুটে উচ্চারিত হয়,রাত তো অনেক গড়ালো!
বেলা দ্বিপ্রহর গড়িয়েছে অজান্তেই।
বন্ধু,স্বজন,সতীর্থ শাহীন-তোমারো কি এমন মনে হয় আজকাল?
————–
ইব্রাহিম চৌধুরী খোকন
নিউইর্য়ক প্রতিনিধি, দৈনিক প্রথম আলো