কানাডার শহরে মাসব্যাপী বর্ণাঢ্য বর্ষবরণ
দৈনিক সিলেট ডট কম
সদেরা সুজন, সিবিএনএ কানাডা থেকে: বাংলা নববর্ষ ১৪২৪ কে বর্ণাঢ্য আয়োজনে এবং দেশের আমেজে বরণ করে নিয়েছে কানাডার বিভিন্ন শহরে বসবাসরত প্রবাসীরা। পুরো মাসব্যাপীই চলছে প্রতিটি শহরে কোনো না কোনো সংগঠনের ব্যানারে বর্ষবরণের জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানমালা। প্রতিটি অনুষ্ঠানেই প্রবাসীদের উপস্থিতি ছিলো দেখার মতো। মঙ্গল শোভাযাত্রা, বৈশাখী মেলা, নানারকমের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন সংগঠন প্রবাসী শিল্পীদের পাশাপাশি দেশ থেকে নিয়ে আসছেন নামি-দামি কন্ঠশিল্পীদেরকে। বলতে গেলে বর্ষবরণকে ঘিরেই চলছে প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন। পহেলা বৈশাখ উদযাপনকে উপলক্ষ্য করে টরন্টোর এলডন রোড সংলগ্ন পার্কিং লটের দেওয়ালে বাংলা সংস্কৃতিকে উপজীব্য করে বর্ণাঢ্য ম্যূরাল আঁকা হয়েছে। যাছিলো মূলধারার মানুষের কাছে আকর্ষণীয়। গত ১৪ এপ্রিল থেকে ৬ মে পর্যন্ত প্রতিটি উইকএন্ডে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান লেগেই আছে। কানাডার বিভিন্ন শহরের অনুষ্ঠিত এবং অনুষ্ঠিতব্য বর্ষবরণের অনুষ্ঠানের সংবাদ একত্রিত করে সিবিএনএর পক্ষ থেকে রিপোর্টটি তৈরী করা হয়েছে।
কানাডার অটোয়ায় বাংলাদেশ হাই কমিশনের বর্ষবরণ
কানাডার অটোয়ায় বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বাংলা নববর্ষ ১৪২৪ কে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ হাইকমিশন । বর্ষবরণের লক্ষ্যে দূতাবাসের উদ্যোগে নগরীর ঐতিহ্যবাহী ব্রন্সন সেন্টারে বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয় যেখানে অটোয়া, টরন্টো ও মন্ট্রিয়েল থেকে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী যোগদান করেন। কানাডা ও অন্যান্য দেশের অতিথিরাও আসেন এ বৈশাখী মেলায়।
বাংলা নববর্ষ ১৪২৪কে স্বাগত জানিয়ে ও মেলার উদ্বোধন ঘোষণা করে কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের মান্যবর হাইকমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, বাঙালী সংস্কৃতি এবং আমাদের দেশজ কৃষ্টিকে তুলে ধরা এ বৈশাখী মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য। এতে স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহণের জন্য তিনি সকলকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বর্তমান সরকার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠনের লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে। তারই আলোকে কানাডা প্রবাসীদের কল্যাণে সচেষ্ট রয়েছে বাংলাদেশ হাই কমিশন। তাই কানাডার মতো এই দূর প্রবাসে বাঙালী সংস্কৃতির বিকাশ ও প্রসারে বাংলা নববর্ষ উদযাপন ও বৈশাখী মেলার আয়োজন খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। ভবিষ্যত প্রজন্মের মাঝে বাঙালী সংস্কৃতিকে উৎসাহ দান ও সম্প্রসারণে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্ববান জানান তিনি।
ঐতিহ্যবাহী বাংলা গান ও সুরের ঝংকারে সুস্বাদু বাঙালী খাবারের আপ্যায়নের মধ্য দিয়ে পহেলা বৈশাখে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়া হয়।
মেলার স্টলগুলোর অন্যতম ছিলো “Movement for Deportation of Killer Nur Chowdhury” আন্দোলন, যার মাধ্যমে বাংলাদেশী কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনী নুর চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর লক্ষ্যে মেলায় আগত অতিথিদের গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করেন। এ বিষেয়ে গণস্বাক্ষর সংগ্রহের অনুরোধ জানিয়ে বক্তব্য রাখেন মিসেস সোমা সাইফুদ্দিন। বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রথম স্টলে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের তথ্যসমৃদ্ধ গ্রন্থ, বঙ্গবন্ধুর ছবি এবং বাংলাদেশের রপ্তানী বাণিজ্য, পর্যটন, গ্রাম-বাংলার জীবন, পালা-পার্বন ও উৎসবের প্রতীকসমৃদ্ধ বিভিন্ন স্মারক ডিসপ্লে করা হয়। হাইকমিশনের দ্বিতীয় স্টলে অতিথিদের দেশীয় বিভিন্ন খাবারে আপ্যায়নও করা হয়। গত ১৭ই মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখে মুজিবুর রহমানের ৯৮তম জন্মদিনে কানাডার বিভিন্ন শহরে হাইকমিশন আয়োজিত শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা থেকে প্রাপ্ত নির্বাচিত চিত্রকর্মের প্রদর্শনী মেলায় যোগ করে বাড়তি আকর্ষণ, যা মুগ্ধ করে আগত অতিথিদের।
বিভিন্ন পসরা নিয়ে সাজানো স্টলগুলোর মধ্যে ছিলো এ্যালাইভ এডুকেশন (বিকল্প শিক্ষাদান প্রতিষ্ঠান), বাংলা ক্যারাভান, কবি-লেখক মোহসীন বখতের বই
য়ের সংগ্রহ, নার্গিস বুটিক, ফিউশন বুটিক এবং’ডানা’স কুইসিন'(বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশীয় খাবারের দোকান)।
অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতিক পর্বের আগে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষ্যে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে সার্টিফিকেট বিতরণ করেন কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের মান্যবর হাই কমিশনার মিজানুর রহমান ও তাঁর সহধর্মিনী মিসেস নিশাত রহমান। “Bangabandhu, The Greatest Leader” বিষয়ে রচনা প্রতিযোগিতায় ‘ক’ গ্রুপে (বয়স ৫-১০) প্রথম হয় তাসমিয়াহ খান; দ্বিতীয় দেওয়ান ফাতিমা সাইয়িদা এবং তৃতীয় আরিয়ানা আলিশা চৌধুরী। ‘খ’ গ্রুপে (বয়স ১১-১৬ বছর) প্রথম হয় সন্দীপন সাহা, দ্বিতীয় ওয়াফা ইসলাম এবং তৃতীয় ফাইকা শিকদার।
মঞ্চে সঙ্গীত পরিবেশন করেন সাখাওয়াত হোসেন (বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রথম সচিব), রিজওয়ানা আলমগীর, শিশির শাহনেওয়াজ এবং শিশুশিল্পী তাথৈ। সমবেত কন্ঠে “এসো হে বৈশাখ এসো এসো” এবং “টাকডুম টাকডুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল” গেয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানায় শিশুশিল্পী এ্যালিসিয়া, ইস্টি, আলিনা, ওয়াজিদ এবং চন্দ্রিমা (হারমোনিয়াম ও নির্দেশনায় ডালীয়া ইয়াসমীন, তবলায় শুভঙ্কর)। কবিতা আবৃত্তি করেন গিয়াস ইকবাল সোহেল এবং শিশু আবৃত্তিকার সানোভা। নাচ পরিবেশনায় দর্শকদের মুগ্ধ করে কারিনা দত্ত এবং শিশু নৃত্যশিল্পী লারিসা।অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রথম সচিব (বাণিজ্যিক) দেওয়ান মাহমুদ। সার্বিক নির্দেশনায় মিনিস্টার নাইম উদ্দিন আহমেদ এবং সমন্বয় ও ব্যবস্থাপনায় প্রথম সচিব আলাউদ্দিন ভুঁইয়া। হাইকমিশনের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী ও পরিবার সদস্যবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে অতিথিদের স্বাগত জানান এবং কূশল বিনিময় করেন।
বাংলাদেশ হিন্দু এ্যাসোসিয়েশন অব মন্ট্রিয়লের বর্ষবরণ ১৪২৪
বাংলাদেশ হিন্দু এ্যাসোসিয়েশন অব ক্যুইবেক, মন্ট্রিয়লের উদ্যোগে বাংলা নববর্ষ ১৪২৪ বর্ষবরণ উপলক্ষে মন্ট্রিয়লের সনাতন ধর্ম মন্দিরে গত ১৫ এপ্রিল শনিবার রকমারি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সকালে গনেশ পূজার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের কর্মসূচি শুরু হলেও বিকেলে মন্দির প্রাঙ্গনে মেলাসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিপুল সংখ্যক প্রবাসীদের মিলন মেলায় পরিণত হয়। বিকেল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর্বগুলো উপস্থাপনা করেন শর্মীলা ধর, শক্তিব্রত হালদার মানু ও অনিন্দিতা রায় মিথিলা। অনুষ্ঠানের শুরুতেই শিশু শিল্পী ‘ঝুন ঝুন ময়না’ (নাচ) – রিশিতা ও রুদ্রানি, ‘তোমরা কুঞ্জ সাজাও গো’ (নাচ)- ভাবনা, ব্রিয়া, ‘মায়াবন বিহারিণী আমি নই’ (নাচ) – স্বাগতা ও সুমিতা, ‘নিশা লাগিলরে’ (নাচ) – অহনা, স্বাগতা, রামিয়া, শতরূপা ও পর্ণিকা’র অসাধারণ নৃত্য ছিলো খুবই সুন্দর। শুভ নববর্ষ উপলক্ষে সবাইকে শুভেচ্ছা জানান মন্দিরের পুরোহিত শ্রী রীতীশ চক্রবর্তী। তারানা (নাচ) সুদেষ্ণা মৌলিক এর পরিচালনায় ক্লাসিক্যাল নৃত্য পরিবেশন করে শিল্পী – অণুষ্কা রায়, অণুষ্কা চক্রবর্তী ও ইশা ধোতে। একটি দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করে শিশু শিল্পী উৎসব ও ঈশান। জয় হোক’ (গান) এ অংশগ্রহণ করে মিত্তি, মোহিনী, প্রিয়ঙ্করী ও পৌলমী। একক সংগীত পরিবেশন করেন তৃপ্তি দাস, তৃপর্ণা দে, শ্যামন্তি কর্মকার। মধুমিতা দে।পূরবী হালদার।পাপড়ি মিত্র ।গৌতম মিত্র । সুজাতা দেব।পুষ্পিতা দেব। সঞ্জীব কুমার দেব।সঞ্চিতা মজুমদার। সৌমিত্র কর সুমন। শর্মিষ্ঠা দেব।মুনমুন দেব।‘এসো হে বৈশাখ এবং এ দিন আজি কোন ঘরেগো (গান) , শর্মিলা ধর, রাখি চক্রবর্তী, লাকি চৌধুরী, অনিন্দিতা রায় মিথিলা, মুন দেব রায়, কেয়া দত্ত।বাংলা নববর্ষে “লোকোজো” পরিবেশিত অনুষ্ঠানে