সোশ্যাল মিডিয়ার দায়িত্ব নিয়ে লন্ডনে সেমিনার অনুষ্ঠিত
দৈনিক সিলেট ডট কম
লন্ডন টাইমস নিউজঃ লন্ডন টাইমস নিউজের সৌজন্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমঃ আমাদের দায়িত্ব, আমাদের জবাবদিহিতা শীর্ষক এক সেমিনার শনিবার ৬ই মে অনুষ্ঠিত হয়। নির্ধারিত সময়ের ঠিক ঘড়ির কাটায় সন্ধ্যা ৬.৩০ মিনিট থেকে শুরু হয়ে রাত ৯.৩০ মিনিট অবধি সেমিনারে লন্ডনের খ্যাতিমান অধ্যাপক, সাংবাদিক, মানিবাধিকার কর্মী, টেলিভিশন অ্যাংকর, মূলধারার রাজনীতিবিদ, কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব, এনএইচএসের ডাক্তার, সঙ্গীত ও রেডিও প্রেজেন্টার, ইসলামিক চিন্তাবিদ, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব, হারবাল থেরাপিষ্ট সহ গন্যমান্য ব্যক্তিগন অংশগ্রহণ করেন।
লন্ডন টাইমস নিউজ ও লন্ডন টাইমস নিউজ কোম্পানির নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ এর সঞ্চালনায় সেমিনারে কী নোট উপস্থাপন করেন সলিসিটর ও কানেক্ট বাংলাদেশ লন্ডনের কো-ওর্ডিনেটর শিব্বির আহমেদ।
শিব্বির আহমেদ তার ২৭ মিনিটের কী নোটে সোশ্যাল মিডিয়া, ইন্টারনেট, গুগলের উতপত্তি, প্রচলন সময় সহ সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যানে নানা দিক সহ কিছু কিছু ক্ষেত্রে নেগেটিভ ইফেক্টের দিক তুলে ধরেন এবং কোরআনের আয়াতের তর্জমার মধ্য দিয়ে তার পেজেন্টেশন সমাপ্তি করেন। তবে শিব্বির তার কী নোটে টাইম ম্যানেজম্যান্ট সহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয়ের উপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন।তবে শিব্বির নেগেটিভ বিষয়গুলো ছেলে মেয়েদের মাঝে বন্ধের জন্য বিশাল এক কাজের সুপারিশও করেন।
শিব্বিরের উপস্থাপনার পর সঞ্চালক বিশিষ্ট সাংবাদিক, কলামিষ্ট, অধ্যাপক এবং টিভি অ্যাংকর সৈয়দ নিয়াজ আহমেদ এর বক্তব্য আহবান করলে, সৈয়দ নিয়াজ তার বক্তব্যে সোশ্যাল মিডিয়া আমার জন্য কতোটুকু গুরুত্বপূর্ণ এবং আমি কিভাবে এর গুরুত্ব দিচ্ছি- সেটার উপর নির্ভর করে বলে মন্তব্য করেন। এসময় নিয়াজ আহমেদ, নানা তথ্য বিশ্লেষণ আর স্মার্ট ফোনের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, এই গেজেট শুধু একটা ফোন নয়। মুহুর্তে আমার জীবনের সকল অংশের ও অঙ্গের সাথে এবং ক্রিয়া প্রক্রিয়া করে চলেছে, জড়িয়ে দিচ্ছে। সৈয়দ নিয়াজ প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেন, এটা কি তাহলে মৃত্যু হয়ে যাবে ? প্রশ্ন হলো, আমি কিভাবে এর ব্যবহার করছি। ফেস বুকে হাজারও লাইক, অচেনা অজানাফ্রেন্ড, নাকি আমি কিভাবে এর ব্যবহার ও ব্যবহারের মাধ্যমে উপকৃত হতে পারি, সঠিক ম্যাসেজ দিতে ও নিতে পারি – সেটার উপর নির্ভর করে ।
বিশিষ্ট প্রবীন মুরুব্বী ও কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব আলাউদ্দিন আহমেদ সোশ্যাল মিডিয়া পুরো পরিবার, বংশানুক্রমিকভাবে, জেনারেশন বাই জেনারেশন কেমন করে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে, নিজের পরিবার, নাতি নাতনির উদাহরন হিসেবে টেনে এনে এর প্রায়োগিক বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। পাশাপাশি নেতিবাচক দিকগুলো থেকে সন্তান- সন্তুতিদের এডুকেশন ও আলোচনার মাধ্যমে ইতুলে ধরার কথা বলেন।
সঞ্চালক সেমিনারের অন্যতম বক্তা গ্রিন পার্টির বেথান ল্যান্টকে তার বক্তব্য বিশেষ করে লন্ডন অ্যাটাকের পর হোমসেক্রেটারি অ্যাম্বার রূড সোশ্যাল মিডিয়ার দায়িত্বের উপর গুরুত্বারোপের প্রসঙ্গ টেনে ফ্লোর দিলে বেথান ল্যান্ট বলেন, ১৮ বছরের অধিকাংশ ছেলে মেয়ে ফেসবুক ব্যবহার করে।টুইটারে মিল্যন অনুসারি কারও অথচ ব্যক্তিগত কাসুন্দি কিংবা সামান্য খুনটুসি পর্যন্ত যখন চলে আসে, হয়তো সে আফ্রিকা বা অন্য কোন স্থান থেকে, যা থেকে কমিউনিটি কিংবা সমাজের ইফেক্টিভ কিংবা কমিউনিটির উন্নয়নে ভুমিকা নয়, অথচ আমরা এই মাধ্যমের অপরিহার্যতা হেতু বাদ ও দিতে অয়ারিনা। বিশ্বের নানা প্রান্তের খবরাখবর, এনএইচএস, শিক্ষা, কমিউনিটি সবই থাকছে মুহুর্তে। তবে এর ক্ষতিকারক দিক থেকে ইয়ং ছেলে মেয়েদের এদূকেশন আর ক্যাম্পেইন অপরিহার্য।
লন্ডন টাইমস নিউজের ম্যানেজারিয়েল এডিটর সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে আলোকপাতকরে কিছু প্রশ্ন উত্থাপন করলে শিব্বির আহমেদ জবাব দেন। তবে এসময় আলোচনা তুঙ্গে উঠে। আনসার আহমেদ উল্লাহ সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহারের বিরোধীতা নয়, বরং সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যানে সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে কেউ অপরাধ করে পার পাচ্ছেনা বা সহজ আর হচ্ছেনা।
এনএইচএস এর ডাক্তার কিংশুক বলেন, আমার ভালোবাসার সব টুকু আমার স্ত্রীর জন্য- যা আমার কোন ফেসবুক একাউন্ট নেই এবং আমি সেটা প্রয়োজন মনে করিনা। তিনি এনএইচএসে কর্মরত ডাক্তার, নার্স আর পেশেন্টদের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, চায়ের কাপে চুমুক আর মোবাইল হাতে চাপা আর পেশেন্টদের ট্রিটম্যান্ট পত্র দেয়ার সময়েও মবাইলে চোখ- এই এমন অবস্থায়, সবাই যেন হন্যে হয়ে দৌড়াচ্ছে লাইক এর পেছনে।আধুনিকতা কিংবা আধুনিক টেকনোলজির বিরোধী নই, আবার লাইক আর কমেন্টস আর স্ট্যাটাসের পেছনে অযথা সময় নষ্ট না করে আমি যদি আমার সন্তান, স্ত্রীকে নিয়ে পার্ক, খেলা ধুলা, সিনেমা নাটকে কোয়ালিটি সময় দেই স্মার্ট ফোন সেস্থান থেকে পালাতে বাধ্য।
রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী ও শিক্ষিকা সোমা দাশ বলেন, আমি যেটুকু বলতে চাই, আমি একটু ভিন্ন আঙ্গিকে শেয়ার করতে চাই। তিনি বলেন, ফেস বুকের মাধ্যমে আমি আমার স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রফেশনাল বন্ধুদের সাথে কোলকাতা পর্যন্ত ওয়েল কানেক্টেড।সুতরাং আমি এটাকে আমার যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে দেখতে চাই। আর সত্যি কথা বলতে কি- গুগল আমাকে অনেক কিছুই শিখিয়েছে, যদিও লাইক ডিজলাইকের অপশনের বাইরে কিছুই নেই। কিন্তু গুগলের কাছ থেকে আমি রান্নার রেসিপির যতোটুকু শিখেছি, হয়তোবা বাসা থেকে ততোটুকু শিখিনি।
দর্পন সম্পাদক ও লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের রহমত আলী বলেন,আমিও কখনো ফেস বুক লাইক ব্যবহার করিনা। আমার হয়ে আমার মেয়ে সেগুলো করে। তবে এর ফলে পারিবারিকভাবে একে অন্যের মধ্যে একাকীত্ব বাড়ছে। কেননা একই পরিবারে চারজন এক জায়গায় থেকে একজন স্মার্টফোন, একজন আইপ্যাড, একজন টিভি, একজন ইউটিউবে ব্যস্ত। কেউ কারও দিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। যখন আহবান করা হয়য় তখনো স্মার্ট ফোনে ব্যস্ত থেকে হ্যা না এর মধ্যে জবাব থাকছে। তবে আধুনিক যোগাযোগের এসন মাধ্যম ব্যবহারের উপকারিতা ও অপকারিতা থেকে কাউকে মুক্ত করা অসম্ভব। তিনি বলেন কী নোট প্রেজেন্টার অসম্ভব এক কাজ করতে বলেছেন, আমি জানিনা আসলে কিভাবে সম্ভব ।
একাউন্ট্যান্ট রাশেদ আহমেদ এসময় বলেন, ফেসবুক, গুগল আমাদের আজকের যোগাযোগ ও ইনফরমেশন শেয়ার ও আহরনের উন্নত মাধ্যম। কিছু কিছু ব্যতিক্রমবাদে ফেস বুক, গুগল, অন্যান্য মাধ্যম জ্ঞান বিজ্ঞানের নানা শাখা প্রশাখা আহরন ও শেয়ার হচ্ছে, পাশাপাশি এতে আমাদের দায়িত্ব সচেতনতাও আরো অনেকখানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
শেডওয়েল জামে মসজিদের ইমাম এবং লন্ডন টাইমসের ইসলামিক বিভাগের এডিটর ইমাম সিরাজুল ইসলাম সাদ বলেন, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার এবং বিশেষ করে ফেস বুক ব্যবহারের বিরোধী আমি নই। ইসলাম কখনো জ্ঞান বিজ্ঞানের বিরোধী নয়। তবে যে কথা হলো, মডারেটর, নিয়াজ ভাই, ডঃ কিংশুক এবং কী নোট স্পিকার যেভাবে বলছেন, আমিও সেভাবে একটু যোগ করে বলতে চাই, আপনাকে আপনার ছেলে মেয়েদের প্রতি দায়িত্ব সচেতন এবং আরও অধিক সময় দিতে হবে। তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারের সাথে সাথে এর ভালো এবং খারাপ দিকগুলো যৌক্তিক এবং বাস্তব সম্মতভাবে তাদের কাছে তুলে ধরতে হবে। এমনভাবে শেয়ার করতে হবে আপনার ভাবনা, যাতে সে মনে করেনা তার চিন্তার ও চলমান সব কিছুর বিরোধী সেই ধ্যান ধারনা। তিনি বাস্তব উদাহরণ টেনে বলেন। সঠিক সময়ে, সঠিক রোগের রাইট ঔষধ সেবন করানো হলো পিতা মাতার দায়িত্ব ও কর্তব্য। নিজে সিনেমা থিয়েটারের দিকে ঝুকে ছেলেমেয়েদেরকে তথ্য প্রযুক্তির অপ-ব্যবহার থেকে ফিরানো বোকামি।কোরআনের আয়াত টেনে তিনি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সাথে ইসলামিক ধ্যান ধারনা ও চর্চার বাস্তব সম্মত চিত্রও তিনি তুলে ধরেন।
একাউন্ট্যান্সি ফার্মের দেখাশুনার কাজে নিয়োজিত ও নিউজ প্রেজেন্টার নাজরাতুন ইসলাম নাজ সোশ্যাল মিডিয়ার পজিটিভ দিকগুলো ছেলে মেয়েদের সাথে বেশী বেশী করে তুলে ধরার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করে বলেন, মা, বাবাই পারেন অধিক কোয়ালিটি সময় তাদের সাথে ব্যয় করে ক্ষতিকারক দিকগুলো থেকে রক্ষা করতে।
এরপর শুরু হউ উম্মুক্ত আলোচনা এবং প্রশ্ন উত্তর পর্ব। প্রত্যেক আলোচকই তাদের নিজস্ব অভিমতের সাথে এর নানান দিক তুলেধরেন ও শেয়ার করেন। এই পর্যায়ে আলোচনা বেশ জমে উঠে এবং সকলের টুকরো টুকরো, খন্ড খন্ড অভিজ্ঞতার জমপেশ আড্ডায় রূপান্তরিত হয়। এতে রশ জোগান জনাব রহমত আলী, জনাব আলাউদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ নিয়াজ আহমেদ, জনাব আনসার আহমেদ উল্লাহ, মাওঃ সিরাজুল ইসলাম, জনাব নূরুল আমিন, ডঃ কিংশুক, রিনা মোশাররফ, বেথানি ল্যান্ট নানা মুখরোচক আলোচনার মাধ্যমে আলোচনাকে আরো তুঙ্গে নিয়ে যান।
সব শেষে সেমিনার সঞ্চালক সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ উপস্থিত সকল আলোচক এবং বক্তাদের অসংখ্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, টার্গেটকৃত সেমিনারের শেষে মূলধারার নেটওয়ার্কের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে গালা ডিনারের মাধ্যমে সেমিনারগুলোর সুপারিশমালা নিয়ে বই এবং সিডি প্রকাশ করে স্ট্যাটুটরি এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে পৌছে দেয়া হবে আনুনষ্ঠানিকভাবে।
সেমিনারের আলোচক রিনা মোশাররফ স্বউদ্যোগে সকল বক্তাদের সিঙ্গারা- সমুচায় আপ্যায়িত করেন। লন্ডন টাইমস মিস্টি ও চায়ের ব্যবস্থা চালু রাখে ।
উল্লেখ্য, লন্ডন টাইমস নিউজের উদ্যোগে এটা ছিলো দ্বিতীয় সেমিনার। আগের সেমিনার ছিলো লন্ডন অ্যাটাক, সিলেট, কুমিল্লা ও রাজশাহীতে জঙ্গি আস্তানা নিয়ে । সেদিনের সেমিনারের সহযোগিতায় ছিলেন হ্যামলেটস ট্রেনিং সেন্টার। এবারের সেমিনারের সহযোগিতায় ছিলেন কমার্শিয়াল রোডের আলাউদ্দিন সুইটস।আলাউদ্দিন সুইটসের কর্ণধার মিজান ভাই সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে লন্ডন টাইমস নিউজের পক্ষ থেকে অসংখ্য ধন্যবাদ।