হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার ২নং উত্তর পশ্চিম ইউনিয়নের আমীরখানী গ্রামে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী জামেয়া রেদওয়ানিয়া দাখিল মাদ্রাসা ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।
১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই প্রতিষ্ঠানটি ইসলামি আদর্শ ও মূল্যবোধের আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে মাদ্রাসাটিতে প্রায় ৬০০ শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে এবং ১৯ জন যোগ্য ও অভিজ্ঞ শিক্ষক পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
চলতি বছর ২০২৫ সালে দাখিল পরীক্ষায় প্রায় ৭০% শিক্ষার্থী কৃতকার্য হয়েছে। এছাড়া হেফজখানাসহ নূরানী তালীমুল কোরআন বোর্ডের আওতায় শিশু শ্রেণি থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত নূরানী বিভাগ এবং ইবতেদায়ী চতুর্থ থেকে দাখিল নবম শ্রেণি পর্যন্ত সাধারণ পাঠক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানটির সার্বিক তত্ত্বাবধানে রয়েছেন প্রিন্সিপাল মাওলানা আবু হামিদ মুমশাদ হাসান, সহকারী প্রিন্সিপাল মাওলানা আতাউর রহমান, এবং নূরানী বিভাগের প্রধান শিক্ষক মাওলানা ক্বারী নবীর আলী। তাঁদের পরিশ্রম, আন্তরিকতা ও শিক্ষার প্রতি নিবেদনেই আজ মাদ্রাসাটি সাফল্যের শিখরে পৌঁছেছে।
২০২৩ সালে নূরানী তালীমুল কোরআন বোর্ড পরিচালিত বোর্ড পরীক্ষায় মাদ্রাসাটি সিলেট বিভাগীয় পর্যায়ে তৃতীয় স্থান অর্জন করে এবং শতভাগ শিক্ষার্থী এ প্লাস পেয়ে অসামান্য সাফল্য দেখিয়েছে। এ অর্জন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকসহ সমগ্র এলাকার জন্য গর্বের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২০২৪ সালে মাদ্রাসাটি শতভাগ সাফল্য ও ১৬ জন এ প্লাস অর্জন করেছে। চলতি বছর ২০২৫ সালে প্রায় ২২ জন পরীক্ষার্থী চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়েছে, এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা আশা করছেন, এবারও পূর্ববছরের মতোই মেধা তালিকায় একাধিক শিক্ষার্থী স্থান করে নেবে।
প্রিন্সিপাল মাওলানা আবু হামিদ মুমশাদ হাসান বলেন, “আমরা শুধু শিক্ষাগত ফলাফলের দিকেই নয়, শিক্ষার্থীদের চরিত্র গঠন, আদর্শ ও ধর্মীয় মূল্যবোধ জাগ্রত করার দিকেও সমান গুরুত্ব দিই। আমাদের লক্ষ্য এমন এক প্রজন্ম তৈরি করা যারা কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে। এই লক্ষ্যে যা কিছু করতে হয়, সবকিছুতেই আমি প্রস্তুত আছি।”
সহকারী প্রিন্সিপাল মাওলানা আতাউর রহমান বলেন, “আমরা নিয়মিত পাঠদানের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের নৈতিক ও ব্যবহারিক জীবনের প্রশিক্ষণেও গুরুত্ব দিই। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে একাডেমিক উৎকর্ষের পাশাপাশি আদর্শবান মানুষ তৈরি করা।”
নূরানী বিভাগের প্রধান শিক্ষক মাওলানা ক্বারী নবীর আলী বলেন, “ইবতেদায়ী, জেডিসি ও দাখিল—প্রত্যেক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ গঠনের ভিত্তি হচ্ছে নূরানী শিক্ষা। তাই নিচের ফাউন্ডেশন মজবুত করাই আমার একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।”
স্থানীয় অভিভাবক ও ধর্মপ্রাণ জনগণ মনে করেন, জামেয়া রেদওয়ানিয়া দাখিল মাদ্রাসা বানিয়াচংয়ে ইসলামি শিক্ষার প্রসারে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এবং ভবিষ্যতেও এটি ধর্মীয় শিক্ষার মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে তাঁরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
উত্তর পশ্চিম ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শেখ তকলিছুর রহমান বলেন, “জামেয়া রেদওয়ানিয়া দাখিল মাদ্রাসা আমাদের এলাকার একটি গৌরবময় প্রতিষ্ঠান। এ মাদ্রাসা ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের নৈতিকতা, শৃঙ্খলা ও মানবিক মূল্যবোধ গঠনে প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখছে। আমি আশা করি, প্রতিষ্ঠানটি ভবিষ্যতেও এমন সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আরও এগিয়ে যাবে।”
