এরশাদের গরম চিতল পিঠার মন ভোলানো স্বাদ

প্রকৃতির মায়াবী আকর্ষণ তো ছিলই। তার সঙ্গে এবার যুক্ত হয়েছে বন-পাহাড়ে ঘেরা চুনারুঘাটের গরম চিতল পিঠার মন ভোলানো স্বাদ। যার পরিপ্রেক্ষিতে এই এলাকায় পর্যটকের ভিড় বাড়তে শুরু করেছে।

হবিগঞ্জের এই উপজেলায় ঘুরতে আসা পর্যটকের অন্যতম আকর্ষণে পরিণত হয়েছে উপজেলা সদর মধ্যবাজার থানা মসজিদের সামনে অবস্থিত এরশাদ নামের স্থানীয় এক পিঠা বিক্রেতার দোকান। শুরুতে স্থানীয়দের মাঝে এরশাদের চিতই পিঠার গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে। বর্তমানে সেটি পর্যটকের আকর্ষণের বিষয় হয়ে উঠেছে।

বাজার এলাকায় গেলে দেখা যায়, ধোঁয়া ওঠা বড় চুল্লির চারপাশে ভিড় করে শত শত ক্রেতা অপেক্ষমাণ। তাদের মাঝখানে বসে সযত্নে বানানো নরম চিতই পিঠা সরবরাহ করছেন এরশাদ মিয়া।

এরশাদ মিয়ার এই পিঠার সঙ্গে সনাতন পদ্ধতিতে বানানো চার ধরনের ভর্তা– শুঁটকি, কাঁচামরিচ, লাল মরিচ আর সরিষা। আর স্বাদের গোপন রহস্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় আখের খাঁটি লালি। পিঠার দোকানই এখন এই এলাকার পরিচিতি। চুনারুঘাটের স্থানীয় যুবক এরশাদ মিয়া কয়েক বছর ধরে এই পিঠা বিক্রি করছেন। শুরুর দিকে মাত্র কয়েক ডজন পিঠা নিয়ে দোকান বসালেও এখন প্রতিদিন বিক্রি করেন ৯০০ থেকে এক হাজার পিঠা। বিকেল ৪টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত তাঁর দোকানে ক্রেতাদের ভিড় লেগেই থাকে।

এরশাদ মিয়া বলেন, ছোটবেলা থেকেই পিঠা বানাতে দেখেছেন মা-খালাদের। প্রথমে শখে শুরু করেছিলেন। মানুষের ভালোবাসা আর চাহিদা দেখে ব্যবসার চিন্তা করেন। প্রতিদিন বিক্রি ভালো। বিশেষ করে শীতে পর্যটকের ভিড় জমে বেশি। বর্তমানে প্রতি মাসে গড়ে তিন লাখ টাকার পিঠা বিক্রি করেন। তাঁর মাসিক খরচ, মালাপত্র, ভাড়া, কাঠ, লালি ও সহকারীর বেতন দিয়ে আয় থাকে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা। দুজন কর্মচারী তাঁর দোকানে নিয়মিত কাজ করেন।

ক্রেতা জুবায়ের মিয়া বলেন, এরশাদের পিঠার স্বাদ পুরোনো দিনের মতো। বিশেষ করে আখের লালিতে যে স্বাদ আসে, সেটা অন্য কোথাও পাই না। সন্ধ্যার পর প্রায়ই আমরা বন্ধুবান্ধব নিয়ে এখানে বসি। আরেক ক্রেতা কলেজছাত্রী তানজিমা বলেন, চুনারুঘাটে দোকান তো অনেক আছে, কিন্তু এরশাদ ভাইয়ের পিঠার স্টল আলাদা। পরিচ্ছন্নতায় ভালো, স্বাদেও অসাধারণ। এ জন্য মেয়েদেরও আসতে স্বাচ্ছন্দ্য লাগে। পিঠার স্বাদের পাশাপাশি এরশাদের দোকানে রয়েছে বাড়তি সুবিধা– সঙ্গে সঙ্গে ভর্তা গরম করে পরিবেশন করা হয়। যারা ঝাল খেতে পছন্দ করেন, তাদের জন্য লাল মরিচ ভর্তা; আবার যাদের কম ঝাল পছন্দ, তারা নেন কাঁচামরিচ বা শুঁটকি ভর্তা। সরিষার ভর্তা পিঠার সঙ্গে বিশেষভাবে জনপ্রিয়। এরশাদ মিয়ার ভাষায়, ‘সবাই যদি খুশি থাকে, সেটাই আমার সবচেয়ে বড় লাভ। দোকানে আসা মানুষের প্রশংসাই আমাকে প্রতিদিন উৎসাহ দেয়।’ তাঁর এই সাফল্য স্থানীয় বেকার যুবকদের মধ্যেও অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। অনেকেই ছোট পরিসরে খাবারের ব্যবসা শুরু করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

মধ্যবাজারের ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম বলেন, এরশাদের মতো যুবকরা যদি নিজেদের যোগ্যতা দিয়ে এমন উদ্যোগ নেয়, তবে চুনারুঘাটের অর্থনীতি আরও চাঙ্গা হবে। প্রতিদিন অন্তত কয়েকশ মানুষ এখানে পিঠা খেতে এসে বাজারে একটা আলাদা প্রাণচাঞ্চল্য তৈরি করে। সন্ধ্যা হলেই তাঁর দোকানের সামনে লাইনে দাঁড়ান বিভিন্ন বয়সী মানুষ। শিক্ষার্থী, দিনমজুর, চাকরিজীবী, বাজারের ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে দূর-দূরান্তের ভোজনরসিকরা।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন