যেভাবে কোরআন মুখস্থ করলেন ক্ষুদে তিন হাফেজ

পবিত্র কোরআনের ৩০ পারা সম্পূর্ণ মুখস্থকারী ব্যক্তিকে হাফেজ বলা হয়, অনেকে আবার হাফেজে কোরআনও বলেন। কোরআন মাজিদ সম্পূর্ণ মুখস্থ করা মোটেই সহজ কাজ নয়। এ জন্য যেমন দরকার মেধা, তেমনি কঠোর অধ্যবসায়। সবেচেয়ে অবাক করা বিসয় হলো, হাফেজ হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট ও বয়স নেই। অন্ধ, বুড়ো থেকে শুরু করে ছোট ছোট বাচ্চারাও হাফেজ হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করছেন, এটা আল্লাহতায়ারার বিশেষ রহমতই বটে।

সম্প্রতি বেশ কয়েকজন শিশু-কিশোর খুব অল্প সময়ের মধ্যে পবিত্র কোরআনের হাফেজ হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন। এমন কয়েকজন ক্ষুদে হাফেজ হলেন-

১১ মাসে কোরআনের হাফেজ ১৩ বছরের সোহান
মাত্র ১১ মাসে পবিত্র কোরআন হেফজ (মুখস্থ) করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার ১৩ বছর বয়সী মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম সোহান। অল্প সময়ে পুরো কোরআন মুখস্থ করার দৃষ্টান্ত স্থাপন করার সাফল্যে আনন্দিত তার সহপাঠী, পরিবারের সদস্য ও শিক্ষকরা।

হাফেজ মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম সোহান উপজেলার শিদলাই ইউনিয়নের পূর্ব পোমকাড়া এলাকার সৌদি আরব প্রবাসী মুহাম্মদ সোহেল রানা ও মেরিনা আক্তার দম্পতির ছেলে।

জানা গেছে, মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম সোহান ২০২৩ সালে উপজেলার সদর ইউনিয়নের কল্পবাস মুহিব্বানে রাহমাতুল্লিল আলামিন হাফেজিয়া মাদরাসায় ভর্তি হয়। সেখান থেকে কোরআন হেফজ সম্পন্ন করে। কোরআন হেফজের আগে সে নাজেরা পড়াও কৃতিত্বের সঙ্গে সম্পন্ন করে। এমন ছোট বয়সে কোরআন মুখস্থ করে সোহান এখন ওই মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের কাছে অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে।

হাফেজ মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম সোহান বলেন, মা-বাবার ইচ্ছা পূরণ করতে দিন-রাত পরিশ্রম করে পড়েছি। ভোররাতে আমার সহপাঠীরা যখন ঘুমাতো তখন আমি ঘুম থেকে উঠে একা একা পড়েছি। আমার শিক্ষকরা অনেক সহযোগিতা করেছেন। সবার দোয়া ও পরিশ্রম আমাকে এ সাফল্য এনে দিয়েছে। আমি আরও পড়াশোনা করে ইসলামের খেদমত করতে চাই।

৬ মাসে পুরো কোরআন মুখস্থ করেন ৯ বছরের হাসান
শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়নের চন্ডিপুর গ্রামের ৯ বছর বয়সী মুহাম্মাদ হাসান মাত্র ছয় মাস আট দিনে পবিত্র কোরআন মুখস্থ করেছেন। হাফেজ হাসান তাহসিনুল কোরআন কওমি মাদরাসার হিফজুল কোরআন বিভাগের ছাত্র।

হাসানের বাবা শওকত হাওলাদার জানান, ছোটবেলা থেকেই তিনি তার ছেলেকে নামাজ ও কোরআনের পথে রাখতে চেয়েছিলেন। আল্লাহর বিশেষ কৃপায় হাসান এত অল্প বয়সে পুরো কোরআন মুখস্থ করতে পেরেছে, যা তার জীবনের সবচেয়ে বড় সুখের মুহূর্ত।

তাহসিনুল কোরআন কওমি মাদরাসার মুহতামিম হাফেজ আবদুস সাত্তার বলেন, হাসান অত্যন্ত মেধাবী ও পরিশ্রমী ছাত্র। তার নিয়মিত অধ্যবসায়, সময়ানুবর্তিতা এবং কোরআনের প্রতি গভীর ভালোবাসার জন্যই সে এত দ্রুত হেফজ সম্পন্ন করতে পেরেছে। এটি আল্লাহর এক বিশেষ দান। মুহাম্মাদ হাসানের এই অসাধারণ কৃতিত্বে তার পরিবার, শিক্ষক ও এলাকার সবাই গর্বিত।

৬ মাসে কোরআনের হাফেজ ১১ বছরের মাহমুদ
মাত্র ছয় মাসে পবিত্র কোরআন মুখস্থ করে হাফেজে কোরআনের মর্যাদা অর্জন করেছেন ১১ বছর বয়সী মাহমুদ হাসান। বাগেরহাট সদর উপজেলার পশ্চিম বাসাবাটি, দরাটানার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মাহমুদ হাসান। বর্তমানে পুরাতন কোর্ট চত্বর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ মডেল হাফিজিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থী তিনি।

তার বাবা মো. মামুন মোল্লা দিনমজুর এবং মা মোসা. মারুফা আক্তার একজন গৃহিণী। তিন ভাইয়ের মধ্যে মাহমুদ দ্বিতীয়। এর আগে তিনি বাসাবাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন।

ছোট থেকেই ইসলামের প্রতি গভীর আগ্রহ দেখে বাবা-মা তাকে হাফিজিয়া মাদরাসায় ভর্তি করেন। তারপর থেকেই শুরু হয় মাহমুদের নিরলস পরিশ্রম। প্রতিদিন প্রায় ১২ ঘণ্টা ধরে কোরআন তেলাওয়াত ও মুখস্থ করায় মশগুল থাকতেন মাহমুদ।

বাগেরহাট শহরের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ মডেল হাফিজিয়া মাদরাসার তত্ত্বাবধায়ক মাওলানা রুহুল আমিন খান বলেন, মাহমুদ অত্যন্ত মনোযোগী, শৃঙ্খলাপরায়ণ ও ভদ্র ছাত্র। ছয় মাসে ৩০ পারা মুখস্থ করা সাধারণ মানুষের পক্ষে কল্পনাতীত। কিন্তু মাহমুদ তার অদম্য ইচ্ছাশক্তি, অগাধ মনোযোগ ও আল্লাহর রহমতে সেটা সম্ভব করেছে। সে কখনো পড়াশোনায় অলসতা করেনি, বরং সবার আগে এসে সবার শেষে মাদরাসা ছাড়ত।

হাফেজ মাহমুদের বাবা মামুন মোল্লা বলেন, আমি দিনমজুর মানুষ, প্রতিদিনের আয়ে সংসার চলে। কিন্তু সবসময় চেয়েছি আমার সন্তান যেন আল্লাহর কালাম মুখস্থ করে মানুষ হয়। মাহমুদ আজ হাফেজ হয়েছে, এটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। তার এই সাফল্য আমার কষ্টকে সার্থক করেছে। আমার মৃত্যুর পর যেন আমার ছেলে আমার জানাজাটা পড়াতে পারে এটাই আমার চাওয়া।

মা মারুফা আক্তার বলেন, ছোট থেকেই আমার ছেলে নামাজ-রোজায় আগ্রহী ছিল। আমি সবসময় তার জন্য দোয়া করেছি যেন আল্লাহ তাকে কোরআনের আলোয় আলোকিত করেন। ছয় মাসে হাফেজ হওয়া সত্যিই এক অলৌকিক ব্যাপার। এটা আল্লাহর অসীম রহমত।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন