বাঙালির হাজার বছরের লালন করা ঐতিহ্য গরু দিয়ে হালচাষ আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিলুপ্তির পথে।বর্তমান যন্ত্র নির্ভর যুগে কৃষকরাও ধুঁকছেন ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলারে জমি চাষাবাদে।হয়তো এই সনাতনী পদ্ধতির হালচাষ একদিন কৃষকের জীবন থেকে উঠে আসবে গল্প,কবিতা,নাটক ও সিনেমায়।আধুনিক সমাজে পৌঁছে যাবে শিল্পীর চিত্রকর্মে বইয়ের প্রচ্ছদে প্রচ্ছদে।
প্রবীন কৃষক সাইফুল জানান,সেই সময় হালচাষের জন্য বানিজ্যিকভাবে গরু- মহিষ পালন করা হতো।মাঠ প্রান্তরে হর হামেশাই চোখে পড়তো গরু দিয়ে হালচাষ। নিজের সামান্য জমিতে হালচাষের পাশাপাশি জীবিকার উৎস ছিল। এসব চিত্র এখন দেখা যায়না।সেই দিনগুলো এখন অতীত স্মৃতি।
গরু দিয়ে হালচাষের উপকারীতা সম্পর্কে কৃষক জমসেদ আলী বলেন,লাঙলের ফলায় জমি গভীর পর্যন্ত ওলট-পালট হয়ে নিচের পুষ্টিগুণ ওপরে চলে আসে,বায়ু সহজে চলাচলের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় ও মাটির আদ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।প্রাকৃতিক পরিবেশে কেঁচোসহ উপকারী কীটপতঙ্গ ধব্বংশ হয়না।জমিতে ঘাস কম হয়।,গরুর গোবর জমিতে পড়ে জৈব সারে ফসল ভালো হতো।এখন স্বল্প সময়ে জমি চাষ হলেও জমির উর্বরতা কমে যাচ্ছে।
কৃষক হেলাল মিয়া বলেন,বুঝ হওয়ার পর থেকেই দেখছি বাপ দাদারা ভোরের আকাশে ভেসে আসা আযানের ধ্বনির পর পরই কাঁধে লাঙ্গল জোয়াল মই গরু নিয়ে মাঠে যেত হালচাষের জন্য। কিন্তু আজ সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে সেই ঐতিহ্যবাহী গরু দিয়ে হালচাষ হারিয়ে গেছে।
চলতে গিয়ে সরেজমিনে অত্যাধুনিক যুগে গরু দিয়ে হালচাষের দেখা মিললো সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার খাজাঞ্চী ইউনিয়নের ঘাসিগাঁও গ্রামের ফসলি জমি চাষাবাদে। আজ কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে সেই গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী চিরচেনা দৃশ্যটি।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ বিল্লাল হোসেন বলেন,গরু দিয়ে হালচাষ এখন আর দেখা যায়না।যদিও যান্ত্রিক চাষে উৎপাদন দ্রুত হয়,তারপরও প্রাকৃতিক পদ্ধতির উপকারীতা উপেক্ষা করে বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রপাতিতে কৃষকরা দ্রুত কাজ করতে পারায় লাভবান হচ্ছেন।
