* ৫০ বছর ধরে বর্ষায় ভরসা খেয়া, শুকনোয় সাঁকো
* একটি সেতুর স্বপ্ন ২০ হাজার মানুষের
* শিক্ষার্থী, বয়স্ক ও অসুস্থদের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার
* ন্যায্যমূল্য বঞ্চিত কৃষকরা
স্বাধীনতার পর থেকে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ধলাই নদীতে টুকেরবাজার থেকে রাজনগর বাজারে একটি সেতু নির্মাণের দাবি স্থানীয় মানুষদের। কিন্তু অর্ধশত বছর পেরিয়ে গেলেও সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি এই জনপদের ২০ হাজার মানুষের।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, বর্ষায় খেয়ায় ও শুষ্ক মৌসুমে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। ভোটের সময় এলে জনপ্রতিনিধিদের প্রতিশ্রুতির বাণী ফুটে জনগণের কাছে। কিন্তু আজও আলোর মুখ দেখেনি একটি সেতু। ফলে নানান ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়নের মধ্য রাজনগর, দক্ষিণ রাজনগর, রাজনগর নতুন বস্তি, দক্ষিণ ঢালারপাড়, মোস্তফানগর, খায়েরগাঁও, রংপুর বস্তি, চাঁনপুর, শিমুলতলা নোয়াগাঁও, ঢালারপাড়, মেঘারগাঁও, উত্তর রণিখাই ইউনিয়নের দীঘল বাকেরপার, ফেদারগাঁও, লামাডিক্সি বাড়ী, দক্ষিণ রণিখাই ইউনিয়নের লোভাহাওর গ্রামের মানুষ নদী পার হয়ে প্রতিদিন টুকেরবাজার হয়ে উপজেলাসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে। একটি সেতুর অভাবে মালামাল পরিবহন, কৃষিপণ্য আনা-নেওয়া, শিক্ষার্থীদের চলাচল ও অসুস্থ রোগীদের হাসপাতালে নেওয়ার মতো এমন দুর্ভোগ পোহাতে হয় তাদের।
ক্ষোভ প্রকাশ করে শাহানা বেগম নামে এক নারী বলেন, অসুস্থ ছেলেকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাচ্ছি। নৌকা দিয়ে পারাপারের কষ্টটা বলে বোঝাতে পারব না।
শহীদ স্মৃতি টুকেরবাজার উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ফারিয়া, ফাইমা, মারজিয়া, তাসকিন, জান্নাত, সুমাইয়াসহ অসংখ্য শিক্ষার্থী বলেন, বর্ষাকালে নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হতে হয়। একটি সেতু হলে আমাদের খুবই উপকার হবে।
মধ্য রাজনগর গ্রামের বাসিন্দা সুমন, সাদ্দাম, ইমরান বলেন, ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি এই খেয়াঘাটে সেতু হবে। ৫০ বছরেও তা হয়নি। আমাদের এই ভোগান্তি শেষ হবে কবে?
স্থানীয় কৃষক আনোয়ার, কামাল, গোলাপ জানান, শাক-সবজি বিক্রির জন্য নদী পার হয়ে টুকেরবাজারে আনতে হয়। এতে অনেক কষ্ট ও খরচ পড়ে। সময়ও লাগে বেশি। তারপরও ন্যায্যমূল্য বঞ্চিত। সেতুটি হলে তাদের অনেক উপকার হবে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ আবু আহমদ বলেন, শুষ্ক মৌসুমে সাঁকো দিয়ে হেঁটে পার হওয়া গেলেও বর্ষায় খেয়া ছাড়া বিকল্প থাকে না। ফলে ছাত্র-ছাত্রী, অসুস্থ ব্যক্তি ও প্রসূতিদের জন্য দুর্ভোগ ভয়াবহ আকার ধারণ করে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. ইব্রাহীম মিয়া বলেন, কোম্পানীগঞ্জে আমরা অবহেলিত। একটি সেতু আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি। একটি সেতু হলে এলাকার অনেক উন্নয়ন এবং মানুষের যাতায়াত সহজ হবে।
পূর্ব ইসলামপুর ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আলী আকবর বলেন, টুকেরবাজার-রাজনগর এ সংযোগস্থলে একটি সেতু নির্মাণ করা হলে ইউনিয়নের বাসিন্দাদের দুর্ভোগ কমবে।প্রতিদিন শত শত শিক্ষার্থী নদীর ওপর দিয়ে যাতায়াত করে। পাশাপাশি বয়স্ক ও অসুস্থ মানুষতো আছেই। দীর্ঘদিনের দাবি একটি সেতু নির্মাণ হলে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে এই ইউনিয়নবাসী।
উপজেলা প্রকৌশলী আসিফ খান রাবি বলেন, এখানে সেতু নির্মাণ করা জন্য আগেও প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যাচাই-বাছাই করে দৈর্ঘ্য ও উচ্চতা বেশি দিতে হবে বলে প্রস্তাবটি পাশ করেন নি। এরপরও জনভোগান্তির কথা ভেবে আমরা আবারও একটি প্রস্তাবনা তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।


