মাধবপুরের চা বাগানে নারী শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসেবায় চরম অবনতি

হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার চা বাগানগুলোতে নারী শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসেবার অবস্থা ভয়াবহভাবে অবনত হয়েছে। উপজেলার তেলিয়াপাড়া, সুরমা, জগদীশপুর, নোয়াপাড়া ও বৈকুণ্ঠপুর এই পাঁচটি বাগানে প্রতিদিন হাজারো নারী ও কিশোরী শ্রমিক পরিশ্রমের পাশাপাশি নানান শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। কিন্তু এসব বাগানে নেই কোনো এমবিবিএস চিকিৎসক কিংবা নারী স্বাস্থ্যকর্মী, ফলে প্রাথমিক চিকিৎসা থেকে শুরু করে প্রসবকালীন ও ঋতুকালীন সেবায় পড়ছেন চরম ভোগান্তিতে।

বাগান কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রতিটি চা বাগানে হাসপাতাল বা ডিসপেনসারি থাকলেও সেখানে দায়িত্বে আছেন কেবল একজন ফার্মাসিস্ট বা কম্পাউন্ডার। তারা সাধারণ ওষুধ বিতরণ করলেও জটিল বা গোপন স্বাস্থ্য সমস্যা সমাধানে অক্ষম।

বৈকুণ্ঠপুর চা বাগানের শ্রমিক নীলমণি ভূমিজ বলেন, “আমরা হাসপাতালে যাই, কিন্তু মাসের পর মাস ডাক্তার দেখি না। পুরুষ কম্পাউন্ডারের কাছে মেয়েদের সমস্যা বলা লজ্জার। তাই জ্বর বা ঋতুকালীন সমস্যায় ঘরোয়া ওষুধ খেয়ে কাজ চালিয়ে যাই।”

জগদীশপুর চা বাগানের শ্রমিক নেত্রী শেফালি সাঁওতাল জানান, “আমরা বহুবার কর্তৃপক্ষকে বলেছি নারী ডাক্তার দরকার। গর্ভবতী নারী বা মেয়েরা পুরুষ কর্মচারীদের সামনে নিজেদের সমস্যা বলতে পারেন না, এতে অনেক সময় বড় জটিলতা হয়।”

চা বাগান নারী নেত্রী গীতা রানি কৈরি বলেন, “শ্রমিকদের চিকিৎসার দায়িত্ব বাগান কর্তৃপক্ষের হলেও বাস্তবে অবস্থা খুবই নাজুক। সরকার ও মালিকপক্ষের সমন্বিত পদক্ষেপ এখন অত্যন্ত জরুরি।”

মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইমরুল হাসান বলেন, “চা বাগানগুলো বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হওয়ায় সরকারি ডাক্তার স্থায়ীভাবে থাকেন না। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে মাঝে মাঝে মেডিক্যাল টিম পাঠানো হয়। নারী স্বাস্থ্যসেবা জোরদারে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।”

চা বাগানের নারী শ্রমিকদের এই অবহেলিত স্বাস্থ্যসেবা পরিস্থিতি দ্রুত সমাধানে সংশ্লিষ্টদের কার্যকর পদক্ষেপের দাবি জানাচ্ছেন এলাকাবাসী।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন