সাড়ে চার শ বছরের এক দৃষ্টিনন্দন মসজিদ

উত্তরাঞ্চলের প্রবেশদ্বার খ্যাত বগুড়ার শেরপুর শহর থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে প্রায় সাড়ে ৪০০ বছরের পুরোনো খন্দকার টোলা খেরুয়া মসজিদের অবস্থান। গ্রামীণ নিরিবিলি সবুজ-শ্যামল পরিবেশে অপূর্ব নির্মাণশৈলীর এ মসজিদ আজও দর্শনার্থীদের হৃদয় কাড়ে।

মোঘল ও সুলতানি আমলের স্থাপত্যশৈলীর সমন্বয়ে মসজিদটি নির্মিত। মসজিদের দেয়ালে স্থাপন করা শিলালিপি থেকে জানা যায়, ১৫৮২ সালে জওহর আলী কাকশালের পুত্র মির্জা মুরাদ খান কাকশাল মসজিদটি নির্মাণ করেন। যদিও কিছু সূত্র আব্দুস সামাদ ফকিরকে নির্মাতা হিসেবে উল্লেখ করে, মসজিদের প্রধান গেটের শিলালিপিতে মির্জা মুরাদ খানের নাম দেখা যায়।

মসজিদে এখনও নিয়মিত নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা। মসজিদের চার কোণে চারটি মিনার। দেয়াল চওড়া। চুন-সুরকি দিয়ে গাঁথা পাতলা ইট। মিনার, গম্বুজ, নকশা ও ইটের বৈচিত্র্যময় গাঁথুনিতে মসজিদটি পথিকের নজর কাড়ছে। প্রায় ৫৯ শতাংশ জায়গাজুড়ে মসজিদটির অবস্থান।

আজ থেকে প্রায় ৪৪৩ বছর আগের মসজিদটি দেখলেই মনে নেমে আসে ভিন্ন এক অনুভূতি। খেরুয়া মসজিদের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো- সমান আকারের তিনটি গম্বুজ।

মসজিদের আয়তন প্রায় ৫৯ শতক, যা মসজিদ ও চারপাশের দেয়ালসহ জমির পরিধি নির্দেশ করে। মসজিদে ৫টি খিলানযুক্ত দরজা রয়েছে। পূর্ব দিকে তিনটি, এবং উত্তর ও দক্ষিণ দিকে একটি করে। পশ্চিম দেয়ালে তিনটি কারুকার্যপূর্ণ মেহরাব রয়েছে।

মসজিদ নির্মাণে চুন, সুরকি ও বৃহৎ কৃষ্ণপাথর ব্যবহার করা হয়েছে; সিমেন্ট বা রড ব্যবহৃত হয়নি।

মসজিদের চারপাশে চারটি পিলার এবং উঁচু দেয়াল রয়েছে। পূর্বদিকে একটি ছোট লোহার গেট ব্যবহার করা হয়। মসজিদের সামনে একটি বড় খোলা মাঠ ও আব্দুস সামাদ ফকিরের কবর অবস্থিত।

মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও শুক্রবারের জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়, একসাথে প্রায় ৯০ জন মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন।

খেরুয়া মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের দায়িত্বে আছেন আব্দুস সামাদ, যিনি ১৯৮৮ সাল থেকে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মাধ্যমে এই দায়িত্ব পালন করছেন।

খেরুয়া মসজিদ বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা, যা শতাধিক বছরের ইতিহাস বহন করে আজও তার ঐতিহ্য এবং সৌন্দর্য অক্ষুণ্ণভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে।

ঢাকা থেকে খেরুয়া মসজিদের দূরত্ব প্রায় ১৬৬ কিমি, আর বগুড়া থেকে ২৮ কিমি এবং শেরপুর সদর থেকে ১ কিমি। বগুড়া ও শেরপুর থেকে সিএনজি, রিকশা বা ভ্যানের মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে পৌঁছানো যায়।

ঢাকা থেকে বগুড়া যাওয়ার জন্য বাস পরিষেবা আছে। বগুড়ায় থাকার জন্য হোটেল, মোটেল ও কটেজ সুবিধা রয়েছে। হাতে সময় থাকলে, একদিনে দেখে আসতে পারেন মসজিদটি।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন