শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৭৪ জনে। বুধবার (৩ ডিসেম্বর) পর্যন্ত এই বিপুল সংখ্যক মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ। সরকারি তথ্যমতে, এই ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে এখনো নিখোঁজ রয়েছেন আরও ৩৫৬ জন। বন্যায় সাড়ে চার লাখ পরিবার বিপদগ্রস্ত হয়েছে।
দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ জানিয়েছে, এই দুর্যোগে মোট ২৫টি জেলায় ১৫ লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ১ লাখ ১০ হাজারের বেশি মানুষ সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে। দেশটির এক-তৃতীয়াংশ এলাকায় বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় জনজীবন মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত। এদিকে কেলানি নদীর পানির স্তর দ্রুত বাড়তে থাকায় কর্তৃপক্ষ কয়েকটি এলাকা খালি করার নির্দেশ দিয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় বন্যা ও ভূমিধসের পরিস্থিতি এখনও গুরুতর হওয়ায় উদ্ধারকাজে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে।
কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, ঘূর্ণিঝড়-পরবর্তী এই বন্যায় সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে শ্রীলঙ্কার ক্যান্ডি জেলায়। জেলাটিতে মারা গেছে ১১৮ জন এবং নিখোঁজ রয়েছেন ১৭১ জন। এছাড়া নুয়ারা এলিয়াতে ৮৯, বাদুল্লায় ৮৩, কুরুনেগালায় ৫৩, কেগালে ২৯, পুত্তালামে ২৯, মাতালে ২৮, গাম্পাহাতে ১১ এবং অনুরাধাপুরে ৭ জন মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থাগুলো আটকে পড়া এবং বাস্তুচ্যুত মানুষদের জন্য খাদ্য, জল ও জরুরি চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে সহায়তা পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
আবহাওয়াবিদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এই অঞ্চলে বৃষ্টির ধরন পাল্টে গেছে, যা এখন আরও তীব্র, দীর্ঘস্থায়ী ও ঝড়ো হয়ে উঠেছে এবং বন্যা ও ভূমিধস বাড়িয়ে দিয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের পর এটিই শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে প্রাণঘাতী প্রাকৃতিক দুর্যোগ। ওই বছর বন্যা ও ভূমিধসে ২০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং কয়েক লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন। চলতি শতকের শুরুর পর থেকে শ্রীলঙ্কায় সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা দেখা গিয়েছিল ২০০৩ সালের জুন মাসে। সেসময় বন্যায় দেশটিতে ২৫৪ জনের প্রাণহানি ঘটে।
