বিরল পরিযায়ী নীল পানগির্দি
শীতের সময় পাহাড়ি নদীর পাশে খণ্ডকালীন আবাস গড়ে তারা। শীত শেষ হলে চলে যায় গ্রীষ্মের গন্তব্যে। প্রত্যাশিত গন্তব্যে পৌঁছে বাসা বাঁধে তারা। আর মে থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত এদের প্রজননকাল।
মেয়ে নীল পানগির্দি তিন বা চারটি হালকা গোলাপি-ধূসর বা হালকা হলদে রঙের ডিম পাড়ে। মেয়ে পানগির্দি একা ডিমে তা দেয়। তবে ছানা লালন-পালন করে মেয়ে-পুরুষ উভয় পাখি মিলে।
সাঙ্গু নদীর সরু আঁকাবাঁকা জলপথ।
দুই পাশে ঘন বনের বৃক্ষের ছায়া পড়ে নদীর জলে। চলার সময় সাঙ্গু নদীর গতিপথে কোথাও কোথাও বড় বড় পাথরখণ্ড জমে থাকতে দেখা যায়। জলের রং কোথাও অনেক স্বচ্ছ। সেখানে নদীর তলদেশের নুড়ি-পাথর, ছোট মাছ চোখে পড়ে।পাহাড়িদের বিশেষ নৌকা শুধু সাঙ্গুর সরু পথ দিয়ে চলাচল করতে পারে।
সাঙ্গুর সেই স্বচ্ছ জলে বড় বড় পাথরখণ্ডের ওপর দেখা মিলল ছোট্ট পাখি নীল পানগির্দির। পাথরখণ্ডের ওপর বসে পাখিগুলো পানিতে ভাসমান আর পানির ওপর উড়ে বেড়ানো পোকা ধরে খায়। পানগির্দি বাংলাদেশে বিরল পরিযায়ী পাখির একটি। শীতের সময় পাহাড়ি নদীর পাশে খণ্ডকালীন আবাস গড়ে তারা।
শীত শেষ হলে চলে যায় গীষ্মের গন্তব্যে। প্রত্যাশিত গন্তব্যে পৌঁছে বাসা বাঁধে তারা। আর মে থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত এদের প্রজননকাল। মেয়ে পানগির্দি তিন বা চারটি হালকা গোলাপি-ধূসর বা হালকা হলদে রঙের ডিম পাড়ে, যার ওপর থাকে হালকা লালচে দাগ। মেয়ে পানগির্দি একা ডিমে তা দেয়। তবে ছানা লালন-পালন করে মেয়ে-পুরুষ উভয় পাখি মিলে। এরা সাধারণত একা বা জোড়ায় চলে। শিকার ধরার সময় এরা লেজের পালক কাপড় কাটার কাঁচির মতো বন্ধ করে আবার খোলে।
সেবার বান্দরবানে বেড়াতে যাওয়ার সময়টা ছিল মাঘ মাস। বান্দরবানের সাঙ্গু নদীতে চলার পথে তিনটি নীল পানগির্দির দেখা মিলেছিল। এর মধ্যে দুটি মেয়ে এবং একটি পুরুষ পাখি। এর মধ্যে দুটি ছিল জোড়া আর অন্যটি আরেক জোড়ার। জোড়া পাখির মধ্যে পুরুষটি উড়ে এসে পাথরের ওপর বসে লেজ নাড়িয়ে কসরত করতে থাকলে সেটি দেখে মেয়ে পাখিটি গলা নিচু করে সাড়া দেয়। এরপর তারা নিজেদের মধ্যে শলাপরামর্শ করে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে থাকে। অন্যদিকে জোড়াছুট মেয়ে পাখিটিকে কিছুটা দূরে একা বসে থাকতে দেখা গেছে। একা পাখিটি জোড়া পাখির সীমায় আসার চেষ্টা করলে জোড়ার মেয়ে পাখিটি তাকে তাড়া করে।
বাংলাদেশের বাইরে নীল পানগির্দির দেখা মেলে আফগানিস্তান, ভুটান, চীন, ভারত, লাওস, মায়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে। নীল পানগির্দির পছন্দের আবাসস্থল হলো এসব দেশের পাহাড়ি ছড়া কিংবা নদীর তীর। নদীর জলে জমে থাকা বড় বড় পাথরখণ্ড কিংবা নদীর তীরে এরা বিচরণ করে। উঁচু পর্বতেও এদের দেখা পাওয়া যায়। হিমালয়ের ১৩ হাজার ৫০০ ফুট উচ্চতায় পর্যন্ত নীল পানগির্দির দেখা মিলেছে। তবে শীতকালে নীল পানগির্দি নিচু এলাকায় নেমে আসে। গত ১০ বছরে বিশ্বে এই পাখিটির সংখ্যা স্থিতিশীল রয়েছে। নীল পানগির্দির ইংরেজি নাম প্লাম্বিয়াস ওয়াটার রেডস্টার্ট। পুরুষ ও মেয়ে পাখি দেখতে আলাদা। পুরুষের রং স্লেট নীল আর মেয়ে পাখির রং ফ্যাকাশে ধূসর। পুরুষ পাখির লেজে মরিচা লাল পালক থাকে। নীল পানগির্দি সাধারণত ১৪ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। এর মধ্যে পুরুষ নীল পানগির্দির গড় ওজন ২২ গ্রাম আর মেয়ে নীল পানগির্দির গড় ওজন ১৮.৮ গ্রাম।