যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় পার্টিতে বিরোধ চরমে
দৈনিক সিলেট ডট কম
এনআরবি নিউজ, নিউইয়র্ক থেকে : যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় পার্টির নয়া কমিটির বিরুদ্ধে তুমুল প্রতিবাদ চলছে। নেতা-কর্মীদের অজ্ঞাতে এই কমিটি তৈরী করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। সৃষ্ট ক্ষোভের বহি:প্রকাশ ঘটে ১৮ জুন রোববারের ইফতার পার্টিতে। কেন্দ্রের অনুমোদিত কমিটির এই ইফতার মাহফিলের মঞ্চে বসতে দেয়া হয়নি ঐ কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদককে। তুমুল হৈ চৈ এর এক পর্যায়ে পুলিশ ডাকেন সাধারণ সম্পাদক আবু তালেব চৌধুরী চান্দু। তিনি তার অপছন্দের নেতা-কর্মীদেও তাড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন পুলিশ দিয়ে। সেটিও সম্ভব হয়নি। কারণ, উপস্থিত প্রায় সকলেই পুলিশ অফিসারদের কনভিন্স করতে সক্ষম হন যে, তারাই প্রকৃত কর্মী। এ অবস্থায় পুলিশ সকলকে শান্ত হয়ে ইফতারের আগেই আলোচনা সভা সম্পন্ন করার অনুরোধ করেন। আর এরই ফাঁকে মঞ্চে বসে পড়েন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাজী আব্দুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক চান্দু। তবে তাদেরকে সভায় সভাপতিত্ব কিংবা সভা পরিচালনার সুযোগ দেয়া হয়নি। গত মাসে এইচ এম এরশাদ কর্তৃক অনুমোদিত যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় পার্টির সভাপতি হয়েছেন মাহবুব আলী বুলু এবং সাধারণ সম্পাদক আবু তালেব চৌধুরী চান্দু। চান্দু ২০১০ সাল থেকেই একই পদে রয়েছেন। অপরদিকে সভাপতি পদে বুলু রয়েছেন গত ১৬ বছর যাবত। এই বুলুর বাড়ি রংপুরে এবং গত ৮ বছর যাবত বাংলাদেশেই বসবাস করছেন।
আর এথেকেই দীর্ঘদিন যাবত সাংগঠনিকভাবে সক্রিয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। সাংগঠনিক বিষয়ে তারা প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। মাঠের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের সম্মতিতে কমিটি না হওয়া পর্যন্ত বুলু-চান্দুর কমিটিকে কোন তৎপরতা চালাতে দেয়া হবে না বলেও উল্লেখ করেন ক্ষুব্ধ কর্মীরা। ‘
চান্দু যদি মাইক হাতে নেন তাহলে পরিস্থিতি আরো গুরুতর আকার ধারণ করবে’ বলে পুলিশকে জানানো হলে তারা সেভাবেই অনুষ্ঠান পরিচালনার অনুমতি দেন। ফলে সভাপতি অথবা সাধারণ সম্পাদক মাইক পাননি এবং কোন বক্তব্য প্রদানের সুযোগও দেয়া হয়নি। একইকারণে অনুষ্ঠানের পূর্বনির্দ্ধারিত অতিথি সাবেক দুই সংসদ সদস্য লিয়াকত আলী এবং শহিদুর রহমানও মঞ্চে আসন পাননি।
ক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীদের পক্ষে এনআরবি নিউজকে এসব তথ্য জানান যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক ওসমান চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘বক্তব্য রাখেন শুধুমাত্র পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পালিত কন্যা অনন্যা হুসেইন মওসুমী।’ তিনি তার বক্তব্যে সকলকে সাংগঠনিক রীতি অনুসরণ করার আহবান জানান। সামনের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিতের জন্যেও বিস্তারিত আলোকপাত করেন।
নিউইয়র্ক সিটির উডসাইডে ৩৭ এভিনিউ এবং ৬১ স্ট্রিটের কর্ণারে রুমা কীচেন রেস্টুরেন্টের এ সভা প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় পার্টির সমন্বয়কারি ও কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুন নূর বড়ভূইয়া এ সংবাদদাতাকে জানান, ‘জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে যারা জড়িত তাদের অজ্ঞাতে ভূয়া একটি কমিটির প্রচার চালানো হচ্ছে। এ নিয়ে নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ ছিলেন। তারই বহিপ্রকাশ ঘটেছে ঐ সভায়। এটি অত্যন্ত দু:খজনক যে, সারা বছর বাংলাদেশ বাস করেন এমন ব্যক্তিকে আবারো সভাপতি পদে অধিষ্ঠিত করে নয়া কমিটি এসেছে বলে প্রচার করা হয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘ইসমাইল খান আনসারী এবং জাফর মিতার মত ত্যাগী সংগঠকরাও স্থান পাননি এই কমিটিতে। আরো অনেককেই আন্ডারমাইন্ড করা হয়েছে।’ নূরভূইয়া বলেন, ‘আমার সন্দেহ হচ্ছে যে এই কমিটির অনুমোদন এইচ এম এরশাদ দিয়েছেন, দিতে পারেন না।’ প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য যে, বেশ ক’বছর থেকেই হাজী আব্দুর রহমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। কথিত ঐ কমিটিতেও তাকে ভাইস প্রেসিডেন্ট রাখা হয়েছে সভাপতির অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্বে অধিষ্ঠিত হবেন বলেও নোট দেয়া হয়েছে। যদিও জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি হিসেবে রয়েছেন জসীমউদ্দিন। গঠনতান্ত্রিক রীতি অনুযায়ী জসীমউদ্দিনেরই ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হবার কথা। ইফতার মাহফিলে ছিলেন জসীমউদ্দিনও। তবে তিনি ছিলেন নির্বিকার।
ইফতার মাহফিলে ওসমান চৌধুরী বলেন, ‘সম্মেলনের মধ্য দিয়ে কমিটি গঠনের এ দাবিতে আমরা সকলেই ঐক্যবদ্ধ। যারা মাঠে কাজ করছি, তাদের অবজ্ঞা করা চলবে না।’
সাংগঠনিক রীতি অনুসরণের আহবান জানিয়ে সকলের উপস্থিতিতে সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নয়া কমিটি গঠনের জন্যে কেন্দ্রের প্রতি আহবান জানান নিউইয়র্কে বসবাসরত জাপার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আলতাফ হোসেন, মাহবুবুল হক অনিক এবং মাহবুবুর রহমান চৌধুরী। ইফতারের আগে বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় পার্টির নেতা এডভোকেট হানিফের নেতৃত্বে।