‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশকে আরো এগিয়ে নিতে চাইসাংস্কৃতিক জাগরণ’

দৈনিক সিলেট ডট কম
এনআরবি নিউজ, নিউইয়র্ক থেকে : ‘মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত বাংলাদেশ আজ বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণতাপূর্ণ নেতৃত্বে সঠিক পথেই রয়েছে। অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক চেতনায় এই এগিয়ে চলাকে আরো পরিপূষ্ট করতে রাজনৈতিক কমিটমেন্টের পাশাপাশি দরকার সাং¯ৃ‹িতক জাগরণের। সে লক্ষ্যেই কাজ করছে সেক্টর কমান্ডার ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ’৭১’। এসব কথা বলেছেন নিউইয়র্কে ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ আজ কোন পথে’ শীর্ষক এক সেমিনারের মূল বক্তা সেক্টর কমান্ডার ফোরামের মহাসচিব এবং লেখক-সাংবাদিক-মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবীব।
১ জুলাই শনিবার রাতে এই ফোরামের যুক্তরাষ্ট্র শাখার নবনির্বাচিত কমিটির শপথ গ্রহণ উপলক্ষে নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসে পালকি পার্টি সেন্টারের এই সেমিনারে ‘গেস্ট অব অনর’ ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি মুক্তিযোদ্ধা ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন-মোমেন। সেমিনারের বিষয়বস্তুর আলোকে নিজ নিজ মতামত পেশ করেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা-বিজ্ঞানী এবং নিউজার্সির প্ল্ইেন্সবরো সিটি কাউন্সিলের নির্বাচিত প্রতিনিধি ড. নূরনব্বী, খ্যাতনামা এটর্নী অশোক কর্মকার এবং লেখক-কবি ফকির ইলিয়াস।
ফোরামের যুক্তরাষ্ট্র শাখার সভাপতি রাশেদ আহমেদ সভাপতিত্ব করেন এবং সেমিনার সঞ্চালনা করেন ফোরামের নির্বাহী সদস্য মুক্তিযোদ্ধা লাবলু আনসারের সহায়তায় আশরাফুল হাসান বুলবুল। এ সময় মঞ্চে উপবেশন করেন নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কন্সাল জেনারেল শামীম আহসান, প্রবীন সাংবাদিক সৈয়দ মুহম্মদ উল্লাহ এবং ফোরামের সেক্রেটারি রেজাউল বারি।
দুই কন্ঠযোদ্ধা রথীনন্দ্রনাথ রায় এবং শহীদ হাসানের নেতৃত্বে জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে শুরু এ সেমিনারে প্রবাসের সর্বস্তরে প্রতিনিধিত্বকারি ব্যক্তিবর্গ ছাড়াও ডজন দুয়েক মুক্তিযোদ্ধাও অংশ নেন।
সেমিনারের বক্তব্য উপস্থাপন কালে হারুন হাবীব বলেন, ‘অস্বীকারের জো নেই যে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক জীবনে একটি তাৎপর্যময় পরিবর্তন এসেছে রাষ্ট্রের জনকের হত্যাকান্ডের বিচার সম্পন্ন হবার মধ্য দিয়ে । বাংলাদেশ রাষ্ট্রের কাছে তার জনকের হত্যাকান্ডের বিচার সম্পন্ন হওয়ার বিষয়টি জাতীয় দায়মুক্তির । অন্যথায় মহান মুক্তিযুদ্ধসহ জাতীয় জীবনের সব অর্জন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতো। একই সাথে মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা পাকিস্তানি সৈন্যদের বর্বরতার দোসর হয়ে মানবতার বিরুদ্ধে ঘৃন্যতম অপরাধ করেছে, নির্বিচার গণহত্যা ও নারীর সম্ভ্রমহানী করেছে, ঘরবাড়ি জ্বালিয়েছে, অপহরণ ও ক্ষতিগ্রস্থ করেছে লাখো নিরস্ত্র মানুষকে, সেই সব শীর্ষ অপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করার কাজটিও ছিল আরেক ঐতিহাসিক দায়মুক্তির। এ রকম দুটি ঘটনা, তাও আবার দুই যুগের সামরিক ও আধা সামরিক অপশাসনের পর, এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ভাবে বহুলাংশে সমাজ বিভাজিত ও কূলষিত হবার পর, কেবল বড় সাফল্যই নয়, একই সঙ্গে জাতীয় জীবনের জন্যেও তাৎপর্যপূর্ণ । কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এই বড় কাজ দুটির সম্পাদনই কি মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যাশিত বাংলাদেশকে সুরক্ষা দান করবে? এতেই কি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের যাত্রাপথ কণ্টকহীন হবে ?’ হারুন হাবীব উল্লেখ করেন, ‘আমার বিশ্বাস Ñ না। এই দুই কাজের ওপর দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ সামনে এগুবার সিড়ি ফিরে পেয়েছে মাত্র, যে সিড়ি সরিয়ে নেয়া হয়েছিল পরিকল্পিতভাবে। কিন্তু এটিই শেষ কথা নয়। লুণ্ঠিত গৌরব পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়ায় গতি এসেছে ঠিকই, কিন্তু আত্মতুষ্ঠির সুযোগ নেই। সে কারণেই আমার বিশ্বাস যে, বাংলাদেশের মতো একটি রাষ্ট্রের যাত্রাপথ অবারিত করতে প্রয়োজন একটি নতুন রেনেসাঁ, একটি নবজাগৃতি, একটি সাংস্কৃতিক নবজাগরণ, যা জাতিধর্ম নির্বিশেষে বাঙালিকে আবারও এক করবে, সাম্প্রদায়িকতার গ্রাস থেকে মুক্ত করবে, মানবিক করবে, শ্লোগানের রাজনীতির বাইরে বেরিয়ে যুবতারুণ্যকে মানুষ করবে, বাঙালি করবে।’
ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ বলেন, ‘জাতিরজনক বঙ্গবন্ধুর ডাকে গোটা জাতি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। দেশ স্বীধীন হয়েছে। সেই দেশকে পুনর্গঠণের কাজ যথাযথভাবে শুরুর সময়েই ঘাতকেরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে। এর বেশ ক’বছর পর সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমানের চোখ রাঙানিকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে দেশমাতৃকার সেবায় আওয়ামী লীগের হাল ধরেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ও ভাতের অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত করতে শেখ হাসিনাকে দীর্ঘ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে হয়। একইসাথে সেই অপশক্তি তথা ঘাতকের দল থেমে নেই। তারা বহুবার ষড়যন্ত্র করেছে শেখ হাসিনাকেও বঙ্গবন্ধুর মত সরিয়ে দিয়ে বাংলাদেশকে মুছে ফেলার জন্যে। কিন্তু এই প্রবাসী এবং দেশের মানুষের ইস্পাতদৃঢ় ঐক্য সকল ষড়যন্ত্র রুখে দিয়েছে। বাংলাদেশ আজ সকল ক্ষেত্রেই উন্নয়ন-অগ্রগতির রোল মডেলে পরিণত হয়েছে।’ গোলাপ উল্লেখ করেন, ‘আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ নানাভাবে প্রশংসিত ও পুরস্কৃত হচ্ছে। উন্নয়নের এই ধারা অব্যাহত রাখতে প্রবাসীদেরকেও চোখ-কান খোলা রাখতে হবে। বাংলাদেশ সঠিক ট্র্যাকে এগিয়ে চলছে, তা আরো বেগবান করতে সামনের নির্বাচনেও শেখ হাসিনা ও তার দলকে বিপুল বিজয় দিতে হবে।’ তিনি প্রবাসীদের কাছে শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ুর জন্যে দোয়া চেয়েছেন।
রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘নানা সংকট-প্রতিক’লতা সত্বেও বাংলাদেশ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলায় আন্তর্জাতিক ফোরামে অনেকেই তা বিস্তারিতভাবে জানতে চাচ্ছে। বাংলাদেশের নেতা শেখ হাসিনার নেতৃত্ব সকলেই অনুসরণে আগ্রহী। এজন্যে জাতিসংঘেও বাংলাদেশের ক্বদর বেড়েছে।’ ‘বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠাও বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভ’মিকায় অবতীর্ণ রয়েছে এটি বলার অপেক্ষা রাখে না’-উল্লেখ করেন রাষ্ট্রদূত মোমেন।
কন্সাল জেনারেল শামীম আহসান সেক্টর কমান্ডার ফোরামের কর্মকান্ড জোরদারে সর্বাত্মত সহায়তার আশ্বাস দেন।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান বলেছেন, ‘সেমিনারের বিষয়বস্তু সঠিক হয়নি বলে আমি মনে করছি। কারণ, বাংলাদেশ আজ সঠিক ট্র্যাকেই রয়েছে এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সারবিশ্বে বাংলাদেশ গৌরবের আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে।’
বিজ্ঞানী ও কাউন্সিলম্যান ড. নূরন্নবী বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে প্রবাস প্রজন্মকে আরো জোরালোভাবে সম্পৃক্ত করার ক্ষেত্রে এই ফোরামের গুরুত্ব অপরিসীম।’
এটর্নী অশোক কর্মকার অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ এখনও পুরোপুরি অর্জিত হয়নি বলে উল্লেখ করে বলেন, ‘এ অবস্থার অবসানে সকলকে আন্তরিকতার সাথে কাজ করতে হবে।’
কবি ফকির ইলিয়াস বলেন, ‘শহীদ জননী জাহানারা ইমাম আমাকে বলেছিলেন যে, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেখ হাসিনাই করবেন। সেটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। বাংলাদেশ এভাবেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ফিরেছে। সেই চেতনাকে আরো শানিত করতে প্রতিটি বাঙালির ভূমিকা অপরিসীম।’
সভাপতির সমাপনী বক্তব্যে রাশেদ আহমেদ সকলকে ধন্যবাদ জানান সেমিনার সফল করার জন্যে। তিনি সামনের দিনগুলোতেও প্রবাসীদের সহায়তা প্রত্যাশা করেন।
শুরুতে সেক্টর কমান্ডার ফোরামের মহাসচিব হারুন হাবীবের নেতৃত্বে নবনির্বাচিত কর্মকর্তারা শপথ গ্রহণ করেন। এ সময় মুষ্ঠিবদ্ধ হাত সামনে রেখে সকলে সমস্বরে উচ্চারণ করেন,‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শ বাস্তবায়নের মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সর্বশক্তি নিয়োগ করবো। আমরা আরো প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হচ্ছি যে, বাংলাদেশের মাটিতে একাত্তরের সকল যুদ্ধাপরাধীর বিচার সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দলমত নির্বিশেষে আমাদের সর্বাত্মক সংগ্রাম অব্যাহত রাখবো। জয় বাংলা।’
নতুন কমিটির কর্মকর্তারা হলেন : সভাপতি-রাশেদ আহমেদ, সহ-সভাপতি হারুন ভ’ইয়া, এম এ বাশার এবং রথীন্দ্রনাথ রায়, সাধারণ সম্পাদক-রেজাউল বারি, যুগ্ম সম্পাদক-মো. আব্দুল কাদের মিয়া এবং এম সোলায়মান আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক-নুরল আলম বাবু, কোষাধ্যক্ষ-দেবাশীস দাস বব, দপ্তর সম্পাদক-লিয়াকত আলী, প্রচার সম্পাদক-শুভ রায়, আইন সম্পাদক রফিক আহমেদ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক তানভির হাবীব, সাংস্কৃতিক সম্পাদক-শহীদ হাসান, পরিবেশ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক-জাফরউল্লাহ, নারী বিষয়ক সম্পাদক-সবিতা দাস, যুব সম্পাদক-ফাহাদ সোলায়মান। নির্বাহী সদস্যরা হলেন মুক্তিযোদ্ধা-সাংবাদিক লাবলু আনসার, মুক্তিযোদ্ধা হারুন চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা শহীদুল ইসলাম, আশরাফ আলী খান লিটন, মুক্তিযোদ্ধা এনামুল হক, কামরুল ইসলাম, নান্টু মিয়া এবং সবনম মেহের প্রিয়া।
বিশিষ্টজনদের মধ্যে ছিলেন জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের ফার্স্টসেক্রেটারি নূরইলাহি মিনা, সাবেক প্রেস মিনিস্টার বিজন রাল দেব, নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকারিয়া চৌধুরী, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি ফাহিম রেজা নূর, যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের সেক্রেটারি শিতাংশু গুহ, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক স্বপন সাহা, যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় পার্টির সেক্রেটারি আবু তালেব চৌধুরী, নিউইয়র্ক স্টেট আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি শাহীন আজমল, যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগের আহবায়ক তারেকুল হায়দার চৌধুরী, নারী নেত্রী মিসেস গোলাপ, শাহানারা রহমান, মমতাজ শাহানা প্রমুখ।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি জাগানিয়া সঙ্গীতে আরো অংশ নেন শাহ মাহবুব, চন্দ্রা রায় এবং তপন মোদক।
‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশকে আরো এগিয়ে নিতে ুভমফ সাংস্কৃতিক জাগরণ’
এনআরবি নিউজ, নিউইয়র্ক থেকে : ‘মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত বাংলাদেশ আজ বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণতাপূর্ণ নেতৃত্বে সঠিক পথেই রয়েছে। অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক চেতনায় এই এগিয়ে চলাকে আরো পরিপূষ্ট করতে রাজনৈতিক কমিটমেন্টের পাশাপাশি দরকার সাং¯ৃ‹িতক জাগরণের। সে লক্ষ্যেই কাজ করছে সেক্টর কমান্ডার ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ’৭১’। এসব কথা বলেছেন নিউইয়র্কে ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ আজ কোন পথে’ শীর্ষক এক সেমিনারের মূল বক্তা সেক্টর কমান্ডার ফোরামের মহাসচিব এবং লেখক-সাংবাদিক-মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবীব।
১ জুলাই শনিবার রাতে এই ফোরামের যুক্তরাষ্ট্র শাখার নবনির্বাচিত কমিটির শপথ গ্রহণ উপলক্ষে নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসে পালকি পার্টি সেন্টারের এই সেমিনারে ‘গেস্ট অব অনর’ ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি মুক্তিযোদ্ধা ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন-মোমেন। সেমিনারের বিষয়বস্তুর আলোকে নিজ নিজ মতামত পেশ করেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা-বিজ্ঞানী এবং নিউজার্সির প্ল্ইেন্সবরো সিটি কাউন্সিলের নির্বাচিত প্রতিনিধি ড. নূরনব্বী, খ্যাতনামা এটর্নী অশোক কর্মকার এবং লেখক-কবি ফকির ইলিয়াস।
ফোরামের যুক্তরাষ্ট্র শাখার সভাপতি রাশেদ আহমেদ সভাপতিত্ব করেন এবং সেমিনার সঞ্চালনা করেন ফোরামের নির্বাহী সদস্য মুক্তিযোদ্ধা লাবলু আনসারের সহায়তায় আশরাফুল হাসান বুলবুল। এ সময় মঞ্চে উপবেশন করেন নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কন্সাল জেনারেল শামীম আহসান, প্রবীন সাংবাদিক সৈয়দ মুহম্মদ উল্লাহ এবং ফোরামের সেক্রেটারি রেজাউল বারি।
দুই কন্ঠযোদ্ধা রথীনন্দ্রনাথ রায় এবং শহীদ হাসানের নেতৃত্বে জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে শুরু এ সেমিনারে প্রবাসের সর্বস্তরে প্রতিনিধিত্বকারি ব্যক্তিবর্গ ছাড়াও ডজন দুয়েক মুক্তিযোদ্ধাও অংশ নেন।
সেমিনারের বক্তব্য উপস্থাপন কালে হারুন হাবীব বলেন, ‘অস্বীকারের জো নেই যে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক জীবনে একটি তাৎপর্যময় পরিবর্তন এসেছে রাষ্ট্রের জনকের হত্যাকান্ডের বিচার সম্পন্ন হবার মধ্য দিয়ে । বাংলাদেশ রাষ্ট্রের কাছে তার জনকের হত্যাকান্ডের বিচার সম্পন্ন হওয়ার বিষয়টি জাতীয় দায়মুক্তির । অন্যথায় মহান মুক্তিযুদ্ধসহ জাতীয় জীবনের সব অর্জন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতো। একই সাথে মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা পাকিস্তানি সৈন্যদের বর্বরতার দোসর হয়ে মানবতার বিরুদ্ধে ঘৃন্যতম অপরাধ করেছে, নির্বিচার গণহত্যা ও নারীর সম্ভ্রমহানী করেছে, ঘরবাড়ি জ্বালিয়েছে, অপহরণ ও ক্ষতিগ্রস্থ করেছে লাখো নিরস্ত্র মানুষকে, সেই সব শীর্ষ অপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করার কাজটিও ছিল আরেক ঐতিহাসিক দায়মুক্তির। এ রকম দুটি ঘটনা, তাও আবার দুই যুগের সামরিক ও আধা সামরিক অপশাসনের পর, এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ভাবে বহুলাংশে সমাজ বিভাজিত ও কূলষিত হবার পর, কেবল বড় সাফল্যই নয়, একই সঙ্গে জাতীয় জীবনের জন্যেও তাৎপর্যপূর্ণ । কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এই বড় কাজ দুটির সম্পাদনই কি মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যাশিত বাংলাদেশকে সুরক্ষা দান করবে? এতেই কি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের যাত্রাপথ কণ্টকহীন হবে ?’ হারুন হাবীব উল্লেখ করেন, ‘আমার বিশ্বাস Ñ না। এই দুই কাজের ওপর দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ সামনে এগুবার সিড়ি ফিরে পেয়েছে মাত্র, যে সিড়ি সরিয়ে নেয়া হয়েছিল পরিকল্পিতভাবে। কিন্তু এটিই শেষ কথা নয়। লুণ্ঠিত গৌরব পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়ায় গতি এসেছে ঠিকই, কিন্তু আত্মতুষ্ঠির সুযোগ নেই। সে কারণেই আমার বিশ্বাস যে, বাংলাদেশের মতো একটি রাষ্ট্রের যাত্রাপথ অবারিত করতে প্রয়োজন একটি নতুন রেনেসাঁ, একটি নবজাগৃতি, একটি সাংস্কৃতিক নবজাগরণ, যা জাতিধর্ম নির্বিশেষে বাঙালিকে আবারও এক করবে, সাম্প্রদায়িকতার গ্রাস থেকে মুক্ত করবে, মানবিক করবে, শ্লোগানের রাজনীতির বাইরে বেরিয়ে যুবতারুণ্যকে মানুষ করবে, বাঙালি করবে।’
ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ বলেন, ‘জাতিরজনক বঙ্গবন্ধুর ডাকে গোটা জাতি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। দেশ স্বীধীন হয়েছে। সেই দেশকে পুনর্গঠণের কাজ যথাযথভাবে শুরুর সময়েই ঘাতকেরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে। এর বেশ ক’বছর পর সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমানের চোখ রাঙানিকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে দেশমাতৃকার সেবায় আওয়ামী লীগের হাল ধরেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ও ভাতের অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত করতে শেখ হাসিনাকে দীর্ঘ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে হয়। একইসাথে সেই অপশক্তি তথা ঘাতকের দল থেমে নেই। তারা বহুবার ষড়যন্ত্র করেছে শেখ হাসিনাকেও বঙ্গবন্ধুর মত সরিয়ে দিয়ে বাংলাদেশকে মুছে ফেলার জন্যে। কিন্তু এই প্রবাসী এবং দেশের মানুষের ইস্পাতদৃঢ় ঐক্য সকল ষড়যন্ত্র রুখে দিয়েছে। বাংলাদেশ আজ সকল ক্ষেত্রেই উন্নয়ন-অগ্রগতির রোল মডেলে পরিণত হয়েছে।’ গোলাপ উল্লেখ করেন, ‘আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ নানাভাবে প্রশংসিত ও পুরস্কৃত হচ্ছে। উন্নয়নের এই ধারা অব্যাহত রাখতে প্রবাসীদেরকেও চোখ-কান খোলা রাখতে হবে। বাংলাদেশ সঠিক ট্র্যাকে এগিয়ে চলছে, তা আরো বেগবান করতে সামনের নির্বাচনেও শেখ হাসিনা ও তার দলকে বিপুল বিজয় দিতে হবে।’ তিনি প্রবাসীদের কাছে শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ুর জন্যে দোয়া চেয়েছেন।
রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘নানা সংকট-প্রতিক’লতা সত্বেও বাংলাদেশ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলায় আন্তর্জাতিক ফোরামে অনেকেই তা বিস্তারিতভাবে জানতে চাচ্ছে। বাংলাদেশের নেতা শেখ হাসিনার নেতৃত্ব সকলেই অনুসরণে আগ্রহী। এজন্যে জাতিসংঘেও বাংলাদেশের ক্বদর বেড়েছে।’ ‘বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠাও বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভ’মিকায় অবতীর্ণ রয়েছে এটি বলার অপেক্ষা রাখে না’-উল্লেখ করেন রাষ্ট্রদূত মোমেন।
কন্সাল জেনারেল শামীম আহসান সেক্টর কমান্ডার ফোরামের কর্মকান্ড জোরদারে সর্বাত্মত সহায়তার আশ্বাস দেন।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান বলেছেন, ‘সেমিনারের বিষয়বস্তু সঠিক হয়নি বলে আমি মনে করছি। কারণ, বাংলাদেশ আজ সঠিক ট্র্যাকেই রয়েছে এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সারবিশ্বে বাংলাদেশ গৌরবের আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে।’
বিজ্ঞানী ও কাউন্সিলম্যান ড. নূরন্নবী বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে প্রবাস প্রজন্মকে আরো জোরালোভাবে সম্পৃক্ত করার ক্ষেত্রে এই ফোরামের গুরুত্ব অপরিসীম।’
এটর্নী অশোক কর্মকার অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ এখনও পুরোপুরি অর্জিত হয়নি বলে উল্লেখ করে বলেন, ‘এ অবস্থার অবসানে সকলকে আন্তরিকতার সাথে কাজ করতে হবে।’
কবি ফকির ইলিয়াস বলেন, ‘শহীদ জননী জাহানারা ইমাম আমাকে বলেছিলেন যে, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেখ হাসিনাই করবেন। সেটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। বাংলাদেশ এভাবেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ফিরেছে। সেই চেতনাকে আরো শানিত করতে প্রতিটি বাঙালির ভূমিকা অপরিসীম।’
সভাপতির সমাপনী বক্তব্যে রাশেদ আহমেদ সকলকে ধন্যবাদ জানান সেমিনার সফল করার জন্যে। তিনি সামনের দিনগুলোতেও প্রবাসীদের সহায়তা প্রত্যাশা করেন।
শুরুতে সেক্টর কমান্ডার ফোরামের মহাসচিব হারুন হাবীবের নেতৃত্বে নবনির্বাচিত কর্মকর্তারা শপথ গ্রহণ করেন। এ সময় মুষ্ঠিবদ্ধ হাত সামনে রেখে সকলে সমস্বরে উচ্চারণ করেন,‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শ বাস্তবায়নের মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সর্বশক্তি নিয়োগ করবো। আমরা আরো প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হচ্ছি যে, বাংলাদেশের মাটিতে একাত্তরের সকল যুদ্ধাপরাধীর বিচার সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দলমত নির্বিশেষে আমাদের সর্বাত্মক সংগ্রাম অব্যাহত রাখবো। জয় বাংলা।’
নতুন কমিটির কর্মকর্তারা হলেন : সভাপতি-রাশেদ আহমেদ, সহ-সভাপতি হারুন ভ’ইয়া, এম এ বাশার এবং রথীন্দ্রনাথ রায়, সাধারণ সম্পাদক-রেজাউল বারি, যুগ্ম সম্পাদক-মো. আব্দুল কাদের মিয়া এবং এম সোলায়মান আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক-নুরল আলম বাবু, কোষাধ্যক্ষ-দেবাশীস দাস বব, দপ্তর সম্পাদক-লিয়াকত আলী, প্রচার সম্পাদক-শুভ রায়, আইন সম্পাদক রফিক আহমেদ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক তানভির হাবীব, সাংস্কৃতিক সম্পাদক-শহীদ হাসান, পরিবেশ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক-জাফরউল্লাহ, নারী বিষয়ক সম্পাদক-সবিতা দাস, যুব সম্পাদক-ফাহাদ সোলায়মান। নির্বাহী সদস্যরা হলেন মুক্তিযোদ্ধা-সাংবাদিক লাবলু আনসার, মুক্তিযোদ্ধা হারুন চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা শহীদুল ইসলাম, আশরাফ আলী খান লিটন, মুক্তিযোদ্ধা এনামুল হক, কামরুল ইসলাম, নান্টু মিয়া এবং সবনম মেহের প্রিয়া।
বিশিষ্টজনদের মধ্যে ছিলেন জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের ফার্স্টসেক্রেটারি নূরইলাহি মিনা, সাবেক প্রেস মিনিস্টার বিজন রাল দেব, নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকারিয়া চৌধুরী, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি ফাহিম রেজা নূর, যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের সেক্রেটারি শিতাংশু গুহ, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক স্বপন সাহা, যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় পার্টির সেক্রেটারি আবু তালেব চৌধুরী, নিউইয়র্ক স্টেট আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি শাহীন আজমল, যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগের আহবায়ক তারেকুল হায়দার চৌধুরী, নারী নেত্রী মিসেস গোলাপ, শাহানারা রহমান, মমতাজ শাহানা প্রমুখ।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি জাগানিয়া সঙ্গীতে আরো অংশ নেন শাহ মাহবুব, চন্দ্রা রায় এবং তপন মোদক।