পুরো বদলে যাওয়া ময়ূরী আগামী বছর হজে যাচ্ছেন
দৈনিক সিলেট ডট কম
দৈনিকসিলেটডেস্ক:ঢাকাই সিনেমার এক সময়ের বিতর্কিত নায়িকা মুনমুন আক্তার লিজা ওরফে ময়ূরী রূপালি পর্দা থেকে বিদায় নিয়েছেন বেশ কয়েকবছর আগেই। বর্তমানে তিনি খাদিজা হিসেবে পরিচিত হচ্ছেন এলাকাতে। তিনি এখন তাবলীগ জামাতের সঙ্গে নিজেকে পুরোপুরি সম্পৃক্ত করেছেন।
অতীতের ভুলভ্রান্তির জন্য তওবা করে সারাজীবন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে যাবেন বলে অঙ্গীকার করেছেন ময়ূরী। শুধু তাই নয়, নিয়মিত নামাজ পড়ার পাশাপাশি নানান রকম নফল ইবাদত এমনকি সপ্তাহের ৫ দিনই রোযা রাখছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার ছিল ময়ূরীর ৩৩তম জন্মদিন। প্রতিবছর অনেকটা বন্ধু-বান্ধব এবং পরিবার-পরিজন নিয়ে জাঁকজমকের সঙ্গে উদযাপন করলেও এবারই যেন ব্যতিক্রমভাবে জন্মদিন পালিত হলো ময়ূরীর। নিজের জন্মদিনেও রোযা রেখেছিলেন তিনি।
ময়ূরী জানান, বর্তমানে আমি নতুনভাবে জীবন শুরু করে বেশ সুখী জীবন যাপন করছি। আমি আমার অতীতের ভুলভ্রান্তির জন্য অনুতপ্ত। এখন জীবনের বাকিটা পথ এভাবেই ইবাদত-বন্দেগীর মধ্য দিয়েই পার করতে চাই। আপাতত পরিকল্পনা স্বামীর সঙ্গে এক চিল্লা তাবলীগ জামাতে যাবো। ইচ্ছে আছে ২০১৯ সালে হজ করার।
ময়ূরীর কাছ থেকে জানা গেলো, কিছুদিন আগে তিনি দ্বিতীয়বারের মত বিয়ে করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী শফিক জুয়েলকে। বয়সে জুয়েল ছোট হলেও দুজনের মধ্যে বেশ আন্তরিক সম্পর্ক। মেয়েটাও জুয়েলকে ভীষণ পছন্দ করে।
ময়ূরী বলেন, বলা চলে মেয়ের পছন্দেই বিয়েটা করছি। এখন আমরা সুখে আছি। পেছনের সেই সব দিনের কথা আমি আর মনে করতে চাইনা। এখন সামনে এগিয়ে যেতে চাই মেয়ে ও স্বামীকে নিয়ে।
বিয়ে করার জন্য ময়ূরীকে দেড় বছর খুঁজেছেন শফিক জুয়েল
শফিক-ময়ূরীর বিয়ে হয় চলতি বছরের ২২ জুন সেদিন ছিল আরবী মাসের ২৭ রমজান। তবে বিয়ের কথা প্রকাশিত হয় গত জুলাই-আগস্টে। কৌশলগত কারণেই তারা বিয়ের কথা প্রকাশ করেননি। পরিস্তিতি অনুকূলে না থাকায় তারা এ কৌশল নিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন।
কিন্তু কিভাবে হল তাদের পরিচয়? কেনই বা ময়ূরী তাকে বিয়ে করলেন এ সব প্রশ্ন এখন সবার মনে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শফিক জুয়েল জানান, তিনি ময়ূরীর ফোন নাম্বার সংগ্রহ করে তার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন। কথা হওয়ার পর এ বছরের ১৪ এপ্রিল অর্থাৎ পহেলা বৈশাখে ময়ূরী জাহাঙ্গীরনগর ক্যাম্পাসে এসে তার সাথে দেখা করেন। দেখা করার পর থেকেই তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে এবং মুঠোফোনে একে অপরের সাথে মাঝে মধ্যে কথা বলতেন।
পরবর্তীতে ময়ূরীর শফিক জুয়েলকে ভাল লেগে যাওয়ায় তারা একে অপরকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন।
শফিক জুয়েল বলেন, ‘তার (ময়ূরী) প্রথম স্বামী মারা যাওয়ার পর অনেকেই তাকে বিয়ে করতে চেয়েছে। কিন্তু তাদের বিশ্বস্ত মনে না করায় সে সবাইকে না করে দিয়েছে। সে আমাকে খুবই ভালোবাসে। মূলত এই বিয়েতে তার ভূমিকাই বেশি। এর আগে আরো যারা লিজা (ময়ূরীর আসল নাম) কে বিয়ে করতে চাইছে তাদেরকে পাত্তা না দেয়ার কারণ ছিল ময়ূরীর মেয়ে এঞ্জেল তাদের পছন্দ করেনি।
কে এই শফিক জুয়েল?
শফিক জুয়েল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ৪১তম আবর্তনের শিক্ষার্থী। তার গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার রাজিবপুর উপজেলায়। তার পিতার নাম ইনসাফ আলী এবং মাতা রাফেজা স্বপ্না। শফিক জুয়েলের চার ভাই। তাদের কোন বোন নেই।
জানা গেছে, ময়ূরীকে বিয়ে করার বিষয়টি শফিকের পরিবারের সবাই এখনো মেনে নিতে পারেনি। এ বিষয়ে শফিক বলেন, বিয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই ভেবেছি অনেক বাধা আসবে, অনেক সমালোচনা হবে। বিয়ের আগেও আমাকে অনেকেই নিরুৎসাহিত করেছেন। কিন্তু একজন মানুষ ভুল পথ ছেড়ে শান্তির পথে, ভালর পথে আসতে চাইলে তাকে সুযোগ দেয়া উচিত।
‘সমাজ পরিবর্তনের জন্য কিছু করতে হলে প্রতিবন্ধকতা জয় করেই করতে হবে। তাই আমি সমালোচনার কথা মেনে নিয়েই বিয়ে করেছি। আমার বাড়ি গ্রামে। গ্রামীণ পরিবেশে এ ধরনের সিদ্ধান্তকে মেনে নেওয়ার মতো সামাজিক পরিবেশ এখনো আমাদের দেশে তৈরি হয়নি। তবে আমার বাবা নিয়মিত আমাদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি আমাদের জন্য দোয়াও করেন’ যোগ করেন শফিক।