সৌদি রাজপুত্রের জীবনযাত্রা: আপনার মাথা ঘুরিয়ে দেবে!
দৈনিক সিলেট ডট কম
দৈনিকসিলেটডেস্ক:সৌদি রাজপুত্র আল ওয়ালিদ বিন তালাল। বিলাসী জীবনের জন্য সব সময় ছিলেন আলোচিত। হয়েছিলেন সংবাদের শিরোনামও। দুর্নীতি অভিযোগে বর্তমানে বন্দি রয়েছেন সৌদির এক রাজকীয় হোটেলে। রাজপুত্র বলে কথা! কে এই আল ওয়ালিদ? বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের একজন তিনি। ফোর্বসের ২০১৭ সালের তালিকা অনুযায়ী, বিশ্বের শীর্ষ ৪৫তম কোটিপতি এই সৌদি প্রিন্স। আবার অন্য জরিপ অনুযায়ী তার অবস্থান ২৫তম।
সম্প্রতি দুর্নীতির অভিযোগে আল ওয়ালিদকে আটক করে সৌদি কর্তৃপক্ষ। অবশ্য আরও পরিষ্কার করে বললে, বেশ কয়েকজন সৌদি প্রিন্স, মন্ত্রী ও ধনকুবেরের সঙ্গে তাকেও বন্দি করেছেন বর্তমানে সৌদির সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান, যাকে পশ্চিমারা ‘এমবিএস’ বলে সম্বোধন করে থাকেন।
শুক্রবার প্রভাবশালী মার্কিন গণমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এক প্রতিবেদনে বলেছে, আল ওয়ালিদের মুক্তির বিনিময়ে সৌদি কর্তৃপক্ষ ৬০০ কোটি ডলার দাবি করছে। আল ওয়ালিদও এ ব্যাপারে দেন দরবার করছেন।
যার কারামুক্তির মূল্য ৬০০ কোটি ডলার, কেমন ছিল তার জীবন যাপন? কিভাবে তিনি নিজের মূল্য এভাবে উঁচুতে নিয়ে গেলেন। তার ব্যবসা, বিনিয়োগ আর জীবন যাপন সম্পর্কে জানলে আপনার মাথা ঘুরে যাবে। প্রিন্স আল ওয়ালিদকে নিয়ে পার্লো ডটকমের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে চমকপ্রদ কিছু তথ্য।
যুবরাজ তালালের ছেলে আল ওয়ালিদ। তার মায়ের নাম মোনা আল সোলহ। আল ওয়ালিদের নানা লেবাননের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। আর দাদা বাদশা আবদুল আজিজ আল সৌদি ছিলেন সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতা।
এই সৌদি প্রিন্স ১৯৭৯ সালে মেনলো ইউনিভার্সিটি থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন! তার প্রথম স্ত্রীর নাম দালাল বিনতে সৌদ। তাদের সন্তানের নাম রীম ও খালিদ। কিন্তু এরপর তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এরপর আমীরা আল-তাবীল নামে এক তরুণীকে বিয়ে করেন তিনি। কিন্তু সম্প্রতি তাকেও তালাক দেন।
বিশ্বের প্রভাবশালী রাজপুত্র, রাজনীতিবিদ ও সেলিব্রেটিদের সাথে আল ওয়ালিদের সখ্য আছে। ব্রিটিশ যুবরাজ উইলিয়াম ও কেট মিডলটনের রাজকীয় বিয়েতে অংশ নিয়েছিলেন আল ওয়ালিদ ও তার তৎকালীন স্ত্রী।
আল ওয়ালিদের দাবি অনুযায়ী তার কাছে যে মূল্যবান সামগ্রীর সংগ্রহ রয়েছে তার মূল্য প্রায় সাড়ে ৭ কোটি ডলার। আর ব্রিটেনের ভবিষ্যৎ রানি কেট মিডল্টনকে একটি হীরা ও রুবির হার উপহার দিয়েছেন, যার মূল্য দেড় কোটি ডলার।
সৌদির ওয়ারেন বাফেট খ্যাত আল ওয়ালিদ ১৯৯১ সালে তার বয়স যখন ৩৬ বছর, তখন তিনি একটি সিটিগ্রুপে বিনিয়োগ করার গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন। প্রাথমিকভাবে তিনি সেখানে ৮০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেন। এরপর ২০০৫ সালে এসে তা দাঁড়ায় এক হাজার কোটি ডলারে।
বিশ্বের সবচেয়ে পরিকল্পিত উঁচু ভবন জেদ্দার কিংডম টাওয়ার নির্মাণে তার অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে। বিশ্বের বর্তমান উঁচু ভবন দুবাইয়ের বুর্জ খলিফা থেকে এটি অন্তত ৫৬৮ ফুট লম্বা হবে। আগামী বছরের মধ্যে এর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে।
মার্কিন গণমাধ্যম ফক্স নিউজের শীর্ষ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আল ওয়ালিদের অবস্থান চতুর্থ! টুইটারেও রয়েছে এই সৌদি যুবরাজের বিনিয়োগ। এছাড়া বিশ্বের বেশ কয়েকটি নামিদামি হোটেলে রয়েছে তার বিশাল বিনিয়োগ। আল ওয়ালিদ নিউইয়র্কের আইকনিক প্লাজা হোটেল কেনার প্রতিযোগিতায় রয়েছেন বলেও গুজব রটেছে।
দাপুটে এই সৌদি ব্যবসায়ী ব্যক্তিগত জীবন যাপনে বিলাসী। তার রয়েছে ২৮২ ফুট লম্বা এক প্রমোদ তরী (ইয়ট) যা বিশ্বের ৫৮তম। এর নাম কিংডম ৫ কেআর।
আল ওয়ালিদের রয়েছে ৫০ কোটি ডলারের একটি বোয়িং ৭৪৭ বিমান। যেখানে আছে একটি সিংহাসনসম আসন আর বিলাসী সব বেডরুম। প্রিন্সের দেখভালে থাকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ১১ জন বিমানবালা।
এই বিমানে রয়েছে ১০ আসন বিশিষ্ট কনসার্ট হল। এ ছাড়া রয়েছে একটি বোর্ডরুম, যেখানে রয়েছে হলোগ্রাফিক প্রজেক্টর। আল ওয়ালিদের রোলস রয়েস গাড়িটি এই বিমানে থাকে।
এই সৌদি প্রিন্সের বালি কালারের প্রাসাদে রয়েছে ৩১৭টি কক্ষ। প্রাসাদে রয়েছে ২৫০টি টেলিভিশন। খাওয়া-দাওয়ায় আয়েশি আল ওয়ালিদ বিভিন্ন দেশের খাবার খেতে রেখেছেন দক্ষ বেশ কয়েকজন পাচক।
সৌদির প্রতিষ্ঠাতা আবদুল আজিজ আল সৌদের নাতি আল ওয়ালিদ। ঝানু ব্যবসায়ী আল ওয়ালিদ পূর্ব-পশ্চিম সব দিকে সমান তালে চালিয়েছেন তার বাণিজ্য-বিনিয়োগ। বিলাসী জীবনের জন্য আরবীয় পোশাকের বাইরে তার পরিবার যে হারামাইন- মক্কা ও মদীনার খাদেম সেটা অনেক সময় বুঝে ওঠা ছিল দুষ্কর।