সিনেমার গল্পকেও হার মানায়…
দৈনিক সিলেট ডট কম
ইব্রাহিম খলিল:তমাল চন্দ্র দের সঙ্গে নমিতা দত্ত ওরফে মৌমিতা ওরফে এ্যানির প্রেম চলছিল চার মাস ধরে। কিন্তু তার পাঁচ বছর আগে থেকে সুমিত ধর নামের আরেক যুবকের সঙ্গে সম্পর্ক চলছিল এ্যানির। একপর্যায়ে এ্যানি গোপনে বিয়েও করে সুমিতকে। চার মাস পর এ্যানি নিজেই এই খবর জানায় তমালকে। তমাল ক্ষুব্ধ হয়ে এ্যানির গালে থাপ্পড় মারে। আর সেই থাপ্পড়ের প্রতিশোধ নিতে কৌশলে ডেকে এনে তমালের মুখে এসিড মারে এ্যানি ও তার প্রেমিক সুমিতের সহযোগীরা।
এতে নষ্ট হয়ে যায় তমালের দুই চোখ। বিকৃত হয়ে যায় মুখমণ্ডল।
প্রেমের এমন পরিণতি প্রত্যাশা করে না কেউই। এ যেন সিনেমার গল্পকেও হার মানা এক প্রেম কাহিনী। কিন্তু এমনটাই ঘটেছে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার কেলিশহর এলাকার বাবুল চন্দ্র দের ছেলে তমালের সঙ্গে। দুই চোখ হারিয়ে তমাল আজ সর্বহারা। ভারতে চিকিৎসা করিয়েও কোনো ফল পায়নি তার পরিবার। এমন কথা জানালেন, চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো. কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, শনিবার দুপুরে সুমিত ধর (৩০) ও এ্যানিকে (২৬) ধরে আনার খবর পেয়ে সিএমপি কার্যালয়ে ছুটে আসেন তমাল ও তার পরিবার। শুক্রবার রাতে রাজধানীর ভাটারা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। শনিবার রাতে তাদের আদালতে নেয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত তাদের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। নগর গোয়েন্দা পুলিশের এই কর্মকর্তা গতকাল সকালে বলেন, ঘটনার শুরু ২০১৫ সালের মার্চ মাসে। জ্যাঠার মেয়ের বিয়েতে এ্যানির সঙ্গে পরিচয় হয় তমালের। পরে কথা বলা, ঘুরতে যাওয়া। এর মাঝেই ঘটে মন দেয়া নেয়া। চারমাস ভালোই কাটে তাদের। তমাল বেশ খরচও করে এ্যানির পেছনে। হঠাৎ একদিন জরুরি দেখা করতে চায় এ্যানি। পটিয়া বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে যান দু’জনই। এটা-ওটা বলার পর এ্যানি জানালো, সুমিত নামে এক ছেলের সঙ্গে তার পাঁচ বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। পরিবারকে না জানিয়ে তারা বিয়েও করেছেন।
এ্যানির এমন অপ্রত্যাশিত জবাবে মেজাজ হারিয়ে বসে তমাল। ক্ষুব্ধ হয়ে এ্যানির গালে থাপ্পড় মারে। বলে, আরেকজনের সঙ্গে তোমার প্রেম, তাকে বিয়েও করেছো। তাহলে আমার জীবন নষ্ট করলে কেন?।
এ্যানি উল্টো বলে, চড় মেরে তুমি ভালো করোনি। তমালকে দেখে নেয়ারও হুমকি দেন এ্যানি। এরপর সুমিতও তার স্ত্রীকে চড় মারায় বিভিন্ন সময় তমালকে হুমকি দেন। পরে এই চড়ের প্রতিশোধ নিতে ফেসবুকে ফেক আইডি খুলে তমালের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেন এ্যানি ও সুমিত। এই বন্ধুত্বের সূত্র ধরে ফেসবুকে চ্যাটের মাধ্যমে ২০১৭ সালের ১০ই ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম নগরীর গুডস হিলের কুসুমকুমারী স্কুলের সামনে ডেকে এনে তমালের মুখে অ্যাসিড ছুড়ে মারেন। তমাল বলেন, এ্যানিকে আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। ২০১৬ সালের শেষের দিকে প্রজাপতির ডানা নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে আমার কাছে রিকোয়েস্ট আসে। আমি রিকোয়েস্টটি একসেপ্ট করি। পরে তার সঙ্গে চ্যাটিংয়ে কথা হয়। জানায় সে কলকাতা থেকে বলছে। এভাবেই দু’মাস যাওয়ার পর ওই আইডি থেকে জানানো হয়, তার কাকার সঙ্গে বাংলাদেশে এসেছে সে। দেখা করবে।
ফেসবুকেই নির্ধারিত হয় গুডস হিলের সামনে দেখা করবো। আমি সন্ধ্যার দিকে ওই এলাকায় পৌঁছাই। তখন দেখি দু’জন যুবক বেশ বড় বড় চোখ করে আমার দিকে তাকাচ্ছে। এদিকে আমি অপেক্ষা করছিলাম প্রজাপতির ডানার। এর তিন-চার মিনিট পর হঠাৎ আমার মুখে অ্যাসিড ছুড়ে মারে। তখন আমি কিছু দেখতে পাচ্ছিলাম না। সারা মুখ খুব বেশি জ্বলছিলো। এর মাঝে একজনকে একটু আবছা আবছা চিনতে পারি। সে সুমিত। এ্যানির স্বামী। তমাল আরো বলেন, আমি অসহ্য যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে যখন পানি পানি চিৎকার করছিলাম তখন একজন যুবক বলছিল, এ্যানির সঙ্গে প্রেম করার মজা দেখ। ওই ঘটনার ১২ দিন পর ২৩শে ফেব্রুয়ারি সুমিত ও এ্যানিকে আসামি করে চট্টগ্রাম মহানগর কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেন তমালের বাবা সিইউএফএলের কর্মকর্তা বাবুল চন্দ্র দে। মামলার পর থেকে পলাতক ছিলেন সুমিত ও এ্যানি। নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার হাসান মো. শওকত আলী বলেন, গত বছরের এপ্রিলে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে আসে মামলাটি। মামলাটি আমাদের জন্য বেশ চ্যালেঞ্জের ছিলো। বেশ চালাক সুমিত ও তার সহযোগীদের কোনোভাবেই ট্রেস করা যাচ্ছিল না। প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে প্রায় এক বছর পর তাদের গ্রেপ্তার করা গেছে, রাজধানীর ভাটারা এলাকা থেকে।-এমজমিন
ৎ