নিউইয়র্কে প্রথম নারী কন্সাল জেনারেল সাদিয়া
দৈনিক সিলেট ডট কম
এনআরবি নিউজ, নিউইয়র্ক থেকে : নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেলে প্রথম নারী কন্সাল জেনারেল হিসেবে যোগদান করলেন পেশাদার কূটনীতিক সাদিয়া ফয়জুন্নেসা। ১ জুন শুক্রবার পঞ্চদশতম কন্সাল জেনারেল হিসেবে তিনি শামীম আহসানের স্থলাভিষিক্ত হলেন। শামীম হাই কমিশনার হিসেবে নাইজেরিয়ায় চলে গেছেন গতমাসে।
সাদিয়ার
এ নিয়োগ নারীর ক্ষমতায়নে সরকারের প্রতিশ্রুতিরই স্বাক্ষর বহন করছে। সরকারের রূপকল্প ২০২১ ও ২০৪১ এর বাস্তবায়নে ‘জন-কূটনীতি’কে জোরদার এবং প্রবাসী বাংলাদেশী কম্যুনিটির স্বার্থ সুরক্ষা ও কল্যাণ সমুন্নত রাখতে প্রতিশ্রুত এই কূটনীতিক ১৯৯৯ সালের ২৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিসে যোগ দেন। তিনি ১৮তম বিসিএস (পররাষ্ট্র) ক্যাডারের একজন সদস্য। বর্তমান দায়িত্বে যোগদানের আগে তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (জাতিসংঘ) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার আগে (২০১৩-২০১৬ )তিনি নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনে উপ-স্থায়ী প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেন।
সাদিয়া ফয়জুন্নেসা জার্মানির বার্লিনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে কনস্যুলার ও কল্যাণ বিভাগের প্রধান হিসেবে জার্মানি, অস্ট্রিয়া ও চেক রিপালিক-এ বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের সেবাধর্মী ও স্বার্থরক্ষা সংশ্লিষ্ট নানাবিধ বিষয়ে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন একজন নারী কূটনীতিক।
থাইল্যান্ডের ব্যাংককে অবস্থিত ‘এসকাপ’ সদর দপ্তরে বাংলাদেশের উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি ও কাউন্সিলর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন এই ক’টনীতিক। এছাড়া তাঁর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন, ইউরোপ, জাতিসংঘ ও বহুপাক্ষিক অর্থনীতি বিষয়ক উইংয়ে বিভিন্ন সময়ে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা রয়েছে।
জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে উপ-স্থায়ী প্রতিনিধির দায়িত্ব পালনকালীন তিনি বাংলাদেশ ডেলিগেশনের সদস্য হিসেবে ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য’, ‘নিউইয়র্ক ডিক্লারেশন ফর রিফ্যুজিস্্ এন্ড মাইগ্রেন্টস্’ এর বিভিন্ন আলোচনা ও দরকষাকষিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং বাংলাদেশের স্বার্থ সমুন্নত রাখতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। এছাড়া তিনি ২০১৪-২০১৬ পর্যন্ত ‘কালচার অব পিস’ রেজুলেশন এর ফ্যাসিলেটেটর এবং ‘ইকোসক হিউম্যানিটেরিয়ান রেজুলেশন’ এর কো-ফ্যাসিলেটেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ নবম ‘গ্লোবাল ফোরাম অন মাইগ্রেশন এন্ড ডেভোলপমেন্ট’ এর চেয়ারম্যান থাকাকালীন তিনি টাস্ক টিমের সদস্য হিসেবে কাজ করেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (জাতিসংঘ) হিসেবে তিনি বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা ও এবিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন আদায়ে একজন সমন্বয়কারী হিসেবে ভূমিকা রাখেন।
চিকিৎসা শাস্ত্রে ¯স্নাতক ডিগ্রীধারী সাদিয়া পরবর্তীতে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডেভোলপমেন্ট স্টাডিজ বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। স্নাতকোত্তর শ্রেণীতে অসামান্য সফলতার জন্য তাঁকে ‘ভাইস চ্যান্সেলর গোল্ড মেডেল’ এ ভূষিত করা হয়। চাকুরিতে যোগদানের পর তিনি বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমিসহ ভারত, জার্মানি, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান হতে পেশাগত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
জাতীয় টেলিভিশন বিতর্ক প্রতিযোগিতায় তিনি ১৯৯৪ সালে চ্যাম্পিয়ন ও ১৯৯৩ সালে রানার্স আপ হন। সাদিয়া বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত একজন উপস্থাপক। বাঙালী সাহিত্য ও সংস্কৃতি প্রসারে তাঁর ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে।
উন্নয়ন কূটনীতি, বৈশ্বিক ব্যবসায় সাফল্য, জনকূটনীতি এবং প্রবাসী বাংলাদেশী সম্প্রদায় সংশ্লিষ্ট কূটনীতি বিষয়ে তাঁর বিশেষ আগ্রহ রয়েছে।
নতুন কর্মস্থলে যোগদানের পরই এ সংবাদদাতার সাথে কথা প্রসঙ্গে সাদিয়া ফয়জুন্নেসা বলেন, ‘নিউইয়র্ক অঞ্চলে প্রবাসীদের এগিয়ে চলার সাথে নিজেকে একাত্ম করতে চাই। এ ব্যাপারে এখানকার মিডিয়ার সহযোগিতার বিকল্প নেই।’ সাদিয়া উল্লেখ করেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে সমুন্নত রেখে আমি প্রবাসীদের সাথে কাজ করে যাবো। বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে প্রবাসীদের মতামত-পরামর্শ সাদরে গ্রহণ করবো।