পুলিশের ‘মানবিকতায়’ কেঁদেই ফেললেন বৃদ্ধ
দৈনিক সিলেট ডট কম
দৈনিকসিলেটডেস্ক: ধূলা-বালি, রোদ-বৃষ্টি কিংবা যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ যাই হোক না কেন, রাস্তায় ঠায় দাঁড়িয়ে দায়িত্ব পালন করতে হয় ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের। এত কষ্টের মধ্যেও অনেক সময় তারা মানবিকতার হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসেন অসহায় বিপদগ্রস্ত মানুষের সেবায়। এমনই এক ঘটনা ঘটেছে গতকাল রোববার রাজধানীর শাহবাগ মোড় এলাকায়।
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশ আয়োজিত ‘শোকরানা মাহফিলে’ অংশগ্রহণের জন্য কুমিল্লা থেকে আসেন আনুমানিক ৭৫ বছর বয়সের এক বৃদ্ধ। তার সঙ্গে অন্য সঙ্গীদের হারিয়ে হন্যে হয়ে খুঁজছিলেন তিনি। খুঁজে না পেয়ে তিনি কুমিল্লা ফিরে যাওয়ার জন্য শাহবাগ মোড়ে আসেন। শাহবাগ মোড় থেকে গাড়ি করে গুলিস্তান যাবেন। সেখান থেকে পরে বাসে করে কুমিল্লা যাবেন। তিনি অতি বৃদ্ধ হওয়ায় কোনো কিছু বুঝে উঠতে পারছিলেন না।
ওই সময় অন্য দিনের মতোই শাহবাগ মোড়ে দায়িত্ব পালন করছিলেন ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগের কনস্টবল-৮৯৯২ মো. কালাম। বৃদ্ধ লোকটি কোনো উপায়ান্তর না দেখে পুলিশ সদস্য কালামকে কুমিল্লা যাওয়ার উপায় জিজ্ঞাসা করেন। বৃদ্ধ লোকটিকে দেখে কালামের মায়া হয়। তিনি বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে তাকে সঠিকভাবে গাড়িতে তোলে দেওয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু শোকরানা মাহফিলের জন্য রোড ডাইভারশন থাকায় শাহবাগ এলাকায় কোনো প্রকার গাড়ি ছিল না। তৎক্ষণাৎ সেখান দিয়ে স্কুটি চালিয়ে যাচ্ছিলেন একজন। কালাম স্কুটি চালককে থামিয়ে বৃদ্ধ লোকটিকে গুলিস্তান বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে দেওয়ার অনুরোধ করেন। লোকটি রাজি হলে কালাম বাবার আদরে বৃদ্ধ লোকটিকে কোলে করে স্কুটিতে বসিয়ে দেন।
ওই সময় বৃদ্ধ লোকটি ঠিকমতো স্কুটির পাদানিতে পা রাখতে পারছিল না। এটা দেখে কালাম নিজের হাতে বৃদ্ধ লোকটির দুই পা গাড়ির পাদানিতে সুন্দর করে বসিয়ে দেন।
আনন্দ ও কৃতজ্ঞতায় তখন জলজল করছিল বৃদ্ধের চোখ দুটি। কালামের কাছ থেকে বাবার মতো পরম শ্রদ্ধা পেয়ে বৃদ্ধটি যেন একেবারে নির্বাক হয়ে গেছেন। তিনি বললেন অনেককে জিজ্ঞাসা করেছি কেউই কোন সদুত্তর দিতে পারেনি। পুলিশ সদস্য কালামকে বলতেই সে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসেন। এজন্য বৃদ্ধ লোকটি যাওয়ার সময় ট্রাফিক কনস্টবল কালামকে প্রাণভরে দোয়া করে যান।
ডিএমপি নিউজের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সমস্ত বিষয়টা ধরা পরে সেখানে দায়িত্বরত ডিএমপি নিউজের ফটোগ্রাফার রুবেল সরকারের ক্যামেরায়। তিনিও ‘শোকরানা মাহফিল’ উপলক্ষে শাহবাগ মোড়ে ডিউটিরত ছিলেন। তার সামনে এমন একটি মানবিক ঘটনা ঘটতে দেখে সঙ্গে সঙ্গে তার হাতে থাকা ক্যামেরায়বন্দী করে নেন সমস্ত বিষয়টি।