যেভাবে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ প্রতিরোধ করবেন
ডা. হারাধন দেবনাথ
প্রতিবছর ২৯ অক্টোবর বিশ্বজুড়ে পালিত হয় বিশ্ব স্ট্রোক দিবস। ‘প্রতি মিনিট জীবন বাঁচায়’ প্রতিপাদ্য নিয়ে এবার বিশ্বের অন্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ঘটা করে পালিত হলো দিবসটি।
স্ট্রোক নিয়ে আমাদের অনেকের মধ্যেই ভুল ধারণা রয়েছে। বেশির ভাগ মানুষই হার্ট অ্যাটাকই স্ট্রোক বলে মনে করে থাকেন। আসলে স্ট্রোক (মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ) হলো ব্রেইনের জটিল অসুখ। মানুষের মৃত্যুর তৃতীয় কারণ এই স্ট্রোক। প্রথম কারণ হলো ক্যানসার এবং দ্বিতীয় কারণ হলো হ্যার্ট অ্যাটাক। প্রতিবছর ১ লাখ মানুষের মধ্যে ১৮০ থেকে ৩০০ মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে থাকে।
স্ট্রোক সাধারণত তিন ধরনের। টিআইএ, প্রোগ্রেসিভ স্ট্রোক ও কমপ্লিটেড স্ট্রোক। টিআইএ হলো সাময়িক বা ক্ষণিকের সমস্যা। এ ধরনের স্ট্রোক হলে আক্রান্ত রোগী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সুস্থ হয়ে যান। কিন্তু প্রোগ্রেসিভ স্ট্রোক হলে রোগীর অবস্থা ধীরে ধীরে আরও খারাপ হতে থাকে। আবার কমপ্লিটেড স্ট্রোকে একটা পর্যায়ে গিয়ে রোগীর অবস্থার আর অবনতি হয় না।
advertisement 4
আবার স্ট্রোককে অন্যভাবে ভাগ করা যায়। একটি হলো রক্তনালি ব্লক হয়ে স্ট্রোক বা Intracerebral infarction. অন্যটা হলো ব্রেইনের রক্তনালি ছিঁড়ে গিয়ে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হওয়া।
শতকরা ৮৫ ভাগ স্ট্রোক হয় রক্তনালি ব্লক হওয়ার কারণে এবং মাত্র শতকরা ১৫ ভাগ স্ট্রোক হয় রক্তনালি ছিঁড়ে গিয়ে ব্রেইনে রক্তক্ষরণের কারণে।
স্ট্রোকের কারণ
Ischaemic stroke-এর কারণ রক্তে কোলেস্টেরল বা খারাপ চর্বির আধিক্য। Diabetes, sedentary worker এবং স্ট্রেসফুল Job. তাছাড়া হার্টের অসুখ থেকেও স্ট্রোক হতে পারে। Haemorrhagic stroke বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয় উচ্চ রক্তচাপের জন্য।
প্রতিরোধে করণীয়
Ischemic Stroke প্রতিরোধ করতে হলে রক্তের চর্বি কমাতে হবে। সেই জন্য ভাত কম খেতে হবে, শাকশবজি, সালাদ বেশি খেতে হবে। বয়স্ক মানুষের গরু খাসির মাংস বর্জন করা একান্ত উত্তম। প্রতিদিন ৩০-৪০ মিনিট জোড়পায়ে হাঁটতে হবে। তাছাড়া ধূমপান, মদ্যপান বর্জন করতে হবে।
Haemorrhagic stroke প্রতিরোধ করার জন্য নিয়মিত উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ খেতে হবে। এক বেলায় যেন ওষুধ বাদ দেওয়া যাবে না হয়। প্রয়োজনে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ পকেটে বা ব্যক্তিগত ব্যাগে কিংবা অফিসের কর্মস্থল রাখতে হবে।
কথায় বলে, এক বেলা ভাত না খেলেও চলে কিন্তু এক বেলা ওষুধ না খেলে মোটেও চলবে না। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়ে গেলে অবশ্যই কোনো নিউরোসার্জন বা নিউরোলজিস্টের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। প্রয়োজনে বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হবে।
ডা. হারাধন দেবনাথ: অধ্যাপক, নিউরোসার্জারি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগ, ঢাকা
চেম্বার: ধানমণ্ডি ল্যাবএইড হসপিটাল
০১৭১১৩৫৪১২০