রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কী করবেন?
দৈনিকসিলেটডেস্ক
ঐ যে গ্রামে কথায় আছে না ‘তোলা দুধে পোলা বাঁচে না’। ডিব্বার দুধ, ওটা দিয়ে সন্তান কখনো বলবান হয় না, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তার সৃষ্টি হয় না, তার নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি হয় না।
আসল ক্ষমতা কার? আসল ক্ষমতা হচ্ছে নিজের। অন্যের ধার করা শক্তি দিয়ে কেউ কখনো বেশিক্ষণ টিকতে পারে না। তো মায়ের বুকের দুধ ছাড়া শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কখনো শক্ত ভিত্তি পায় না। মায়ের দুধ যা পারে তোলা দুধ মানে কৌটার দুধ এবং অনেক ওষুধ মিলেও তা পারে না!
আসলে সুস্থতা-প্রাণবন্ততার জন্যে, রোগমুক্ত থাকার জন্য এবং ব্যাকটেরিয়া-ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্যে কী দরকার?KSRM
শরীরে যদি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে, আপনার ইমিউন সিস্টেম আপনার শরীরের যে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা রয়েছে এই ব্যবস্থা যদি শক্তিশালী থাকে, এই ব্যবস্থা যদি প্রাণবন্ত থাকে, এই ব্যবস্থা যদি টোটালি ফিট থাকে তো বাইরে থেকে যত ব্যাকটেরিয়া-ভাইরাস আসবে, কাপড়ের ওপর ধূলার মতো, আপনি কী করবেন? টোকা দিয়ে ফেলে দেবেন। যদি নিজের বল ঠিক থাকে।
আর যদি আপনার বল না থাকে এই ছোট্ট ব্যাকটেরিয়া যেটা চোখে দেখা যায় না ভাইরাস চোখে দেখা যায় না সেটাতে এই বিরাট বিরাট সমস্ত মানুষ কাবু হয়ে চিৎ হয়ে পড়ে আছে! কেন? ভেতরে বল নাই ফাঁপা। ফাঁপা থাকলে হবে না, বল থাকতে হবে। যত আপনার ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী থাকবে, তত আপনি রোগব্যাধি থেকে মুক্ত থাকবেন।
পুষ্টিবিজ্ঞানীরা তিনটা খাবার নিয়ে তারা খুব আশাবাদী। এই তিনটা খাবারকে তারা বলছে সুপার ফুড। একটা হচ্ছে পাতা, একটা ফল এবং আরেকটি হচ্ছে খাবার।
সজনে পাতা পৃথিবী তোলপাড় করা পাতা। পাতার মধ্যে পৃথিবীতে এখন যেটা নিয়ে তোলপাড় হচ্ছে সেটা হচ্ছে সজনে পাতা। যদি শুকনো সজনে পাতার গুঁড়া নেন এটা কত হবে? দুইশ তিনশ টাকা কেজি হবে? আর মরিঙ্গা (সজনে পাতার ইংরেজি নাম হচ্ছে মরিঙ্গা) ‘মরিঙ্গা’ নামে যদি গুঁড়া কিনতে যান তাহলে এটা তিন থেকে চার হাজার টাকা পড়বে এক কেজি। পাঁচ হাজার টাকাও পড়তে পারে এক কেজি।
অতএব বুঝতে পারছেন ঘরের পাশে সজনে গাছ এত অবহেলা করবেন না। খুব দামি গাছ। আমাদের দেশকে স্রষ্টা খুব ভালবাসেন এবং যে কারণে এই দেশে এমন কিছু নাই যা দেন নাই। এখানে বিচি পড়লে গাছ হয়ে যায়। যত্ন লাগে না।
সজনে পাতার গুণাগুণ
সজনে পাতা কাঁচা পাতার চেয়ে শুকনো পাতায় উপকারটা বেশি। এই পাতা এমন একটা পাতা তার মধ্যে কত গুণ! এতে প্রোটিন আছে ২৭ শতাংশ, ২৭ শতাংশ হচ্ছে প্রোটিন। শর্করা ৩৮ শতাংশ, ফাইবার ১৯ শতাংশ, চর্বি দুই শতাংশ এবং নয় ধরনের এমিনো এসিড এই সজনে পাতায় রয়েছে।
এমিনো এসিড খুব উপকারি এসিড শরীরের জন্য। রুই মাছে যে এমিনো এসিড পাওয়া যায় তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি হচ্ছে সজনে পাতায়। বুঝতে পারছেন রুই মাছের চেয়েও সজনে পাতার মূল্যমান কত বেশি!
এবং ১০০ গ্রাম সজনে পাতায় ৫০ হাজার মাইক্রোগ্রাম বিটা-ক্যারোটিন এটা এন্টি-অক্সিডেন্ট বিটা-ক্যারোটিন। এটা শরীরের ঢুকলেই ভিটামিন এ-তে রূপান্তরিত হয়।
এবং আপনার পুষ্টির দিক থেকে কাঁচা পাতাও উপকারি। শুকিয়ে অত ধৈর্য না ধরলে কাঁচাও বেটে খেতে পারেন একটু বেশি পরিমাণে খেতে হবে। কিন্তু বেশি পরিমাণে মানে অনেক বেশি পরিমাণে না।
শুকনো সজনে পাতা কী পরিমাণে খাবেন এটা আমরা একটু পরে বলছি। তার মধ্যে কাঁচা পাতা এবং শুকনো পাতার মধ্যে তফাৎ কোথায়?
একশ গ্রাম কাঁচা পাতায় প্রোটিন থাকে ৬.৭ গ্রাম। শুকনো পাতায় হচ্ছে ২৯.৪ গ্রাম। তাহলে ৬ থেকে কতগুণ বেশি? প্রায় পাঁচ গুণ। চর্বি থাকে কাঁচা পাতায় ১.৭ গ্রাম। শুকনো পাতায় থাকে ৫.২ গ্রাম। কার্বোহাইড্রেট কাঁচা পাতায় ১২.৫ গ্রাম এবং শুকনো পাতায় ৪১.২ গ্রাম। ফাইবার আঁশ এটা থাকে কাঁচা পাতায় ০.৯ গ্রাম। শুকনো পাতায় ১২.৫ গ্রাম।
সজনে পাতার উপকারিতা
সজনে পাতা কোষ্ঠ পরিষ্কারক শক্তিবর্ধক এবং শক্তির একটা বড় উৎস। এটা আপনার দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেবে।
খেজুর
খেজুর হচ্ছে, ইনস্ট্যান্ট এনার্জির ভাণ্ডার! নিমিষেই প্রাণশক্তি। অনেক পরিশ্রম করেছেন ক্লান্ত হয়েছেন, কী করবেন? রোদে ক্লান্ত, পরিশ্রম করেছেন দুটো খেজুর।
খেজুর কীভাবে খাবেন?
চিবিয়ে খাবেন। একটু বেশিক্ষণ ধরে চিবাবেন। একদম মানে ছাতু করে ফেলবেন! যেন কোনোকিছু না থাকে চিবাতে চিবাতে। তো এটার মজাটা কী? মানে এই যে অনেকক্ষণ ধরে দাঁত নাড়ছেন চিবাচ্ছেন, ব্রেন মনে করছে আরে বাপরে বাপ অনেক খাচ্ছি অনেক খাচ্ছি অনেক খাচ্ছি।
তো ব্রেনের ইনফরমেশন হলো যে, অনেক হয়ে গেছে ওহ অনেক হয়ে গেছে আরে বাপরে বাপ খালি চিবাচ্ছে দেখি। অনেক হয়ে গেছে।
তো দুটো খেজুর আপনি দুই মিনিট তিন মিনিট ধরে চিবান। তারপরে পানি খান। ইনস্ট্যান্ট এনার্জি। নিমিষে প্রাণশক্তি। নিমিষে তাজা আপনি।
আমরা ইনস্ট্যান্ট এনার্জির জন্যে অনেক সময় গ্লুকোজ খাই। আসলে ইনস্ট্যান্ট এনার্জির জন্যে এই খেজুর হচ্ছে ন্যাচারাল প্রাকৃতিক গ্লুকোজ ফ্রুক্টোজ এবং সুক্রোজের ভাণ্ডার।
খেজুরে ফ্ল্যাভোনয়েড রয়েছে। এই ফ্ল্যাভোনয়েড এন্টি-অক্সিডেন্ট, এটা প্রদাহজাতীয় ভেতরে প্রদাহ জাতীয় যত রোগ আছে এই রোগটাকে সারাতে উপকারি এবং ক্যারোটিনয়েডস খেজুরে আইসোফ্ল্যাভনস এবং এই এন্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে যেটা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং ফেনোলিক এসিড রয়েছে, এটাও এন্টি-অক্সিডেন্ট। এটা ক্যান্সার প্রতিরোধক।
খেজুরের ভালো মাত্রায় পটাশিয়াম রয়েছে যেটা রক্তচাপ যাদের বেশি আছে, এই রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে এবং খেজুরে যেটা হচ্ছে সেলেনিয়াম ম্যাঙ্গানিজ কপার ম্যাগনেসিয়াম এবং অন্যান্য খনিজ উপাদান রয়েছে যেটা হাড়কে মজবুত করে এবং খেজুরে প্রচুর ভিটামিন এ এন্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে। যেটা দৃষ্টিশক্তির জন্যে উপকারি। এবং খেজুরে থাকা বিভিন্ন ধরনের এন্টি-অক্সিডেন্ট এটা মস্তিষ্ককে শাণিত করে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয় মস্তিষ্ক উজ্জীবিত রাখে।
খেজুরে যেহেতু প্রচুর ফাইবার আছে, আঁশ আছে এজন্যে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্যে কাজ করে। এবং যাদের পাইলস আছে তারা নিয়মিত খেজুর খাবেন। এতে আপনার পাইলসের কষ্ট কমে যাবে।
খেজুর এমন একটা ফল যাতে যেহেতু প্রচুর ভিটামিনস রয়েছে। এটা যেমন প্রাণশক্তি বাড়ায় সেরকম ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়ায় ত্বককে নমনীয় আকর্ষণীয় করে এবং রক্তশূন্যতা দূর করে এবং তারুণ্যের শক্তিকে অক্ষুণ্ন রাখে। অর্থাৎ কর্মক্ষমতা বাড়ায় খেজুর।
ছাতু
আরেক সুপার ফুডের নাম ছাতু। ১০০ একশ গ্রাম ছাতুতে এনার্জি পাওয়া যায় ৪০০ কিলোক্যালরি। প্রোটিন পাওয়া যায় ১৬.৮৯ গ্রাম ওটসে আর ছাতুতে হচ্ছে ২১.১৯ গ্রাম প্রোটিন। কার্বোহাইড্রেট ওটসে হচ্ছে ৬৬.২৭ গ্রাম আর ছাতুতে হচ্ছে ৬৪.৬৩ গ্রাম! মাত্র দুই গ্রাম কম। ফাইবার ওটসে হচ্ছে ১০.৬ গ্রাম ছাতুতে হচ্ছে ১৪.৩ গ্রাম। ফ্যাট হচ্ছে ওটসে ছয় দশমিক নয় গ্রাম ছাতুতে ছয় দশমিক ৩৪ গ্রাম।
ছাতু হচ্ছে গরীবের ওটস! ছাতু দামে কম উপকার বেশি। ওটস খেতে হলে অনেক দাম দিয়ে কিনতে হবে আর ছাতুর দাম অনেক কম।
ছাতুর প্রোটিন হচ্ছে ফার্স্টক্লাস প্রোটিন। ছাতু প্রোটিন কার্বোহাইড্রেট এবং মিনারেলস খনিজদ্রব্যে ভরপুর। ১০০ গ্রাম মাছে প্রোটিন পাওয়া যায় ১৬-২০ গ্রাম। একশ গ্রাম ছাতুতে পাওয়া যায় ২০-২৫ গ্রাম প্রোটিন। তাহলে মাছের চেয়েও ছাতুর প্রোটিন হচ্ছে বেশি।
ছাতুর সবচেয়ে বড় উপকার হচ্ছে, এতে ১৪.৩ গ্রাম ফাইবার আঁশ থাকে। এই আঁশটা আমাদের পাকস্থলীর জন্যে খুব উপকারি এবং এটা আপনার কোলনের মধ্যে যত গ্রিজি তৈলাক্ত জিনিস লেগে থাকে এগুলোকে ওখান থেকে সরিয়ে দেয় এবং ক্লিন করে পরিষ্কার করে এবং যাদের কনস্টিপেশন আছে যাদের পেট ফাঁপা থাকে, যাদের এসিডিটি আছে এই ছাতুটা তাদের জন্য খুব উপকারি।
আমরা প্রত্যেকদিন এক চামচ বা দুই চামচ ছাতু যদি নিয়মিত খাই, তাহলে আমাদের পাকস্থলীটা পরিষ্কার থাকবে এবং পেটের যে অণুজীবের সাম্রাজ্য এটা ঠিক থাকবে এবং আপনার দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। আপনি সুস্থ সবল এবং সুঠাম থাকবেন।