৫১ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি
লিবিয়ায় মাফিয়া চক্রের হাতে বন্দি সুনামগঞ্জের ৩ যুবক

দৈনিকসিলেট ডেস্ক :
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারের তিন যুবক- সুমন, নোমান ও সৌরভ। উন্নত জীবনের লক্ষ্যে দালালের মাধ্যমে ইতালি পাড়ি দিতে গিয়ে লিবিয়াতে এখন মাফিয়া চক্রের হাতে বন্দি ওই তিন যুবক। গত দুই মাস ধরে তারা বন্দি রয়েছে। তাদের পেতে হলে ৫১ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে মাফিয়ারা।
ইতালি দেশটিতে যাওয়ার স্বপ্নের আশায় লেখাপড়া ছেড়ে দালালের প্ররোচনায় পাড়ি জমান লিবিয়ায় বাংলাবাজারের তিন যুবক। এরপর শুরু হয় মাফিয়া চক্রের হাতে বন্দিদশা। হাতে, পায়ে শিকল পরিয়ে বেধড়ক মারধর করা হচ্ছে তিন যুবককে। পরিবারের লোকজনের কাছে উল্টোকরে বেঁধে মারধরের ছবি পাঠাচ্ছে মাফিয়া চক্র। এমনকি মারধরের সময় পরিবারের লোকজনের মোবাইল ফোনে কান্নার হাউমাও ভয়েজও পাঠায় মাফিয়ারা। একদিকে মারধর করছে অন্যদিকে তাদের বাবা-মায়ের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলাচ্ছে নির্দয় মাফিয়া চক্র। তোমরা তাড়াতাড়ি তাদের ১৭ লাখ টাকা পাঠিয়ে দাও, না হয় আমাকে মেরে ফেলবে। এভাবেই তিন পরিবারের বাবা-মায়ের সঙ্গে মোবাইল ফোনে আর্তনাদ শুনাচ্ছে মাফিয়া চক্র। সে সঙ্গে মাফিয়া চক্রের বেধড়ক প্রহারে অনাহারে দিন কাটাচ্ছে তিন যুবক। এদিকে ছেলেদের কান্নাকাটি আর মারধরের ছবি দেখে এখন দুশ্চিন্তায় আছে তিনটি পরিবার। গত দুই মাস তাদের আটকে রেখে বেধড়ক মারধরের ছবি এখন ফেইসবুক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভুক্তভোগী ওই তিন পরিবার জানায়, গত বছরের অক্টোবর থেকে লিবিয়া থাকেন সুমন, নোমান ও সৌরভ। খবর পায় দোয়ারাবাজার উপজেলার বাংলাবাজার
ইউনিয়নের বরখাল গ্রামের আবদুল বারেক। পরে তাদের ইতালি নেওয়ার প্রস্তাব দেন আবদুল বারেক। তিনি দীর্ঘদিন ধরে লিবিয়ায় থাকেন। তিন যুবককে লিবিয়া থেকে ইতালি পর্যন্ত পৌছে দেওয়া হবে এই চুক্তি করেন আবদুল বারেকের স্ত্রী রাজিয়া বেগম ও পুত্র রেজাউল করিমের সঙ্গে। টাকা-পয়সাও লেনদেন হয় তাদের মাধ্যমে। তিনজনের পরিবারে পক্ষ থেকে সাড়ে সাত লাখ টাকা করে জমা দেন আবদুল বারেকের আত্মীয়-স্বজনের কাছে। ওই মাফিয়া চক্র বলে এই টাকায় তাদের ইতালি পাঠানো সম্ভব হবে না। মাফিয়ার হাত থেকে ছাড়ানিসহ আর তিন লাখ টাকা করে প্রত্যেককে দিতে হবে। পরে তারা গত ৩ এপ্রিল আবদুল বারেকের স্ত্রী রেজিয়া খাতুনের সঙ্গে কথা বলে প্রত্যেক পরিবারের লোকজন তিনশ টাকা মূল্যের স্ট্যাম্পের মাধ্যমে চুক্তি করে। তারপর প্রত্যেকে তিন লাখ টাকা জমা করেন বারেকের স্ত্রীর হাতে। দুই মাস অতিবাহিত হলেও তাদের তিনজনকে ছাড়িয়ে আনেননি আবদুল বারেক। এখন আরও ৭ লাখ টাকা করে দাবি করছে মাফিয়া চক্র।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আবদুল বারেকের পরিবারের লোকজন তাদের ঘরে তালা ঝুলিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে। এদিকে বারেকের মোবাইল ফোনেও যোগাযোগ করতে পারছে না ওই তিন যুবকের পরিবার। বাড়িতে গিয়ে আবদুল বারেকের লোকজনদেরও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
এ ব্যাপারে দোয়ারাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেব দুলাল ধর জানান, পুলিশ ফেসবুক যোগাযোগ মাধ্যমে খবর পায়। এরপর তিন পরিবারের লোকজনকে থানায় আসার জন্য ডাকা হয়। তাদের সঙ্গে পরামর্শ করি কীভাবে মাফিয়ার হাতে আটক তিনজনকে ছাড়িয়ে আনা যায়। আবদুল বারেকের পরিবারের লোকজন বাড়িতে নেই। বাড়িতে থাকলে বারেকের সঙ্গে যোগাযোগের ব্যবস্থা করা যেত।