চুনারুঘাটে গাঁজা পাচারের অভিযোগ: গ্রেপ্তার অটোরিকশা চালক

চুনারুঘাট প্রতিনিধি :
হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে মাদকের বিষবাষ্প মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। চুনারুঘাট সীমান্ত এলাকায় এখন হাত বাড়ালেই মিলছে মরণনেশা মাদক। তা ছাড়া প্রায় প্রতিদিনই পুলিশ, বিজিবি ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হাতে ধরা পড়ছে মাদকের চালান। টাকার বিনিময়ে মাদক বহনকারী যান ও চুনোপুঁটি কারবারিরা ধরা পড়লেও মাদকের মূল হোতারা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। রাঘব বোয়ালরা মাদক আইনের বাইরে থাকায় চুনারুঘাটে মাদকের প্রসার রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে সচেতন মানুষের ধারণা। চুনারুঘাটে গাঁজা পাচারের অভিযোগে মো: বাহার মিয়া(২৫) নামে এক টমটম অটোরিকশা চালককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার যুবক হলেন- উপজেলার কালামন্ডল এলাকার মৃত জলিল মিয়ার ছেলে । এদিকে গাঁজা বহনকারীকে গ্রেপ্তার করলেও গাঁজার মুল কারবারিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই ) মাদক ব্যবসায়ীকে বিকেলে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এরআগে ১৯ জুলাই বিকেল ৩ টায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চুনারুঘাট থানার উপ- পরিদর্শক (এসআই ছদরুল আমীনের নেতৃত্বে এএসআই মহসিন, ইমরুক কায়েস ও এএসআই মনির সহ একদল পুলিশ উপজেলার ৩নং দেওরগাছ ইউনিয়নের ইনাতাবাদ গ্রামে অভিযান পরিচালনা করে বিশেষ চেকপোস্ট স্থাপন করে সেখানে গাড়ি তল্লাশি করা হয়। এসময় পুলিশের চেকপোস্টের দিকে আসা একটি টমটম অটোরিকশার গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হলে চালককে তা থামানোর সংকেত দেওয়া হয়। এসময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদকের মুল মালিক পালিয়ে গেলেও রক্ষা পায়নি অটোরিকশা চালক । পরে ধাওয়া দিয়ে মো. বাহার মিয়া (২৫ ) কে আটক করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অটোরিকশায় তল্লাশি চালিয়ে ১টি প্লাস্টিক ব্যাগের ভিতর থেকে ৬ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয় এবং অটোরিকশা জব্দ করা হয়। এ তথ্য নিশ্চিত করে এসআই ছদরুল আমীন জানান, আটক বাহারসহ তার সহযোগির বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়েছে। গোপন সুত্রে জানা যায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাদক ব্যবসার অনেক গডফাদার চিহ্নিত করতে পারলেও তাদের সঙ্গে মাদক না থাকায় তাদের গ্রেফতার করতে পারা যাচ্ছে না। চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হলেও তারা কিছুদিন পর বের হয়ে আসে। কোনোভাবেই ধরে রাখা যায় না। সরকার মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিচ্ছে। মজার কথা হচ্ছে এর সঙ্গে যারা গ্রেফতার হচ্ছে এরা মূলত ক্যারিয়ার। নেপথ্যেও গডফাদাররা বরাবরই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। জেলার অন্যান্য উপজেলায় মাদক নির্মূলে নিয়মিত অভিযান অব্যাহত থাকলেও । চুনারুঘাটে ইদানিং নামমাত্র অভিযান চালানো হয়। এতে করে চুনারুঘাটে নির্বিঘ্নে চলছে মাদকের কারবার। মাঝেমধ্যে থানা পুলিশের অভিযানে মাদকসহ পাচারকারীরা ধরা পড়লেও মূল হোতা ও নিয়ন্ত্রণকারীরা থেকে যাচ্ছে অধরা। রহস্যজনক কারণে মামলার এজাহার থেকে তাদের নামও বাদ পড়ছে। সীমান্তবর্তী চুনারুঘাট উপজেলার সবখানে এখন হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক। মাদকের সহজ লভ্যতায় ক্রমেই বাড়ছে মাদকাসক্তের সংখ্যা। এ কারণে সন্তানদের নিয়ে উদ্বিগ্ন রয়েছে অভিভাবকসহ সচেতন মহল। প্রায় ৩৭ কিমি সীমান্ত এলাকার কাঁটাতার ভেদ করে পার্শ্ববর্তী ভারত থেকে ফেনসিডিল, গাঁজা, ইয়াবাসহ সব প্রকার মাদকদ্রব্য চুনারুঘাটে প্রবেশ করে। পরে সড়কপথে দেশের বিভিন্ন এলাকায় তা পাচার করা হয়। মাদক কারবারিদের নিয়ন্ত্রণে শতাধিক মাদকের স্পট ছাড়াও এখানে ভ্রাম্যমাণ মাদক বিক্রেতার সংখ্যা রয়েছে কয়েকশ । মাদক কারবারিদের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উপজেলাব্যাপী তাদের দাপটও বাড়ছে। উপজেলার গাজিপুর ইউনিয়ন ও আহাম্মদাবাদ ইউনের সীমান্ত এলাকায় মাদক বিক্রেতাদের সিন্ডিকেট ও স্পট বেশি। উপজেলার সরকারি সভা বা অনানুষ্ঠানিকভাবে মাদকের সরবরাহ বাড়ার কথা জানালেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে যোগাযোগ করা হলে মাদক বাড়ার বিষয়টি স্বীকার করেনি তারা।