হবিগঞ্জে স্কুলছাত্রী হত্যা মামলায় দুই যুবকের মৃত্যুদণ্ড
দৈনিকসিলেট প্রতিবেদক :
হবিগঞ্জে চাঞ্চল্যকার এসএসসি পরীক্ষার্থী মদিনাতুল কুবরা জেরিন হত্যার ঘটনায় জাকির হোসেন ও নুর হোসেন নামের দুই যুবককে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে হবিগঞ্জের নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক জেলা ও দায়রা জজ সুদীপ্ত দাস এই দণ্ডাদেশ দেন।
জাকির হোসেন হবিগঞ্জ সদর উপজেলার ধল গ্রামের দিদার হোসেন এর ছেলে এবং নুর হোসেন একই উপজেলার পাটলী গ্রামের আব্দুল হাইর ছেলে। রায় প্রদানকালে আসামি জাকির হোসেন আদালতে উপস্থিত ছিল।তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ১৮ জানুয়ারী সকাল ৮টায় নূর আলম নামে একজনের অটোরিক্সার উঠে বিদ্যালয়ে যাচ্ছিল হবিগঞ্জ সদর উপজেলার ধল গ্রামের আব্দুল হাইয়ের মেয়ে জেরিন। এর আগেই অটোরিক্সাতে ছিলেন জাকির ও তার সহযোগী। অটোরিক্সাটি জেরিনের স্কুল পেরিয়ে গেলেও তাকে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছিল না।
নামার চেষ্টা করলে জেরিনের সাথে ধস্তাধস্তি শুরু হয় অপহরণকারীদের। এক পর্যায়ে সে অটোরিক্সা থেকে লাফ দিলে মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত পায়। পরবর্তীতে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আশঙ্কাজনক অবস্থায় সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৯ জানুয়ারী সকালে মারা যায় জেরিন।
ওইদিন রাতেই থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন জেরিনের বাবা। এ ঘটনায় নুর হোসেন ও জাকিরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আদালতে ১৬৪ ধারায় তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেয় সে। পরে সবুজ নামে আরো এক যুবককে গ্রেপ্তার করলে সেও হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তি প্রদান করে। প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় সিএনজি অটোরিকশা থেকে ফেলে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয় জেরিনকে।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হবিগঞ্জ সদর থানার তৎকালীন ওসি মাসুক আলী দণ্ডিত দুইজনের নামে অভিযোগ পত্র দাখিল করেন। শিশু সবুজ মিয়ার নামেও পৃথক অভিযোগ পত্র দাখিল করা হয়। ২১ জনের স্বাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আজ বৃহস্পতিবার বিজ্ঞ বিচারক অপহরণ এর অপরাধে উভয় আসামিকে যাবজ্জীবন ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং হত্যার অপরাধে উভয় আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও এক লাখ টাকা করে জরিমানার আদেশ প্রদান করেন। শিশু মামলাটি এখনও বিচারাধীন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী স্পেশাল পিপি এডভোকেট আবুল হাশেম মোল্লা মাসুম এই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এতে ন্যায় বিচার নিশ্চিত হয়েছে। ভবিষ্যতে অপরাধীরা এধরনের কাজ করতে সাহস পাবে না।
মামলার বাদী ও স্কুল ছাত্রী জেরিনের পিতা আব্দুল হাই মৃত্যু বরন করায় তার ভাই আব্দুল মতিন আদালতে উপস্থিত থেকে এই রায় শুনে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি দ্রুত রায় বাস্তবায়নের দাবি জানান।
আসামি পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট নিলাদ্রী শেখর পুরকায়স্থ এই রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, তারা এর বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল দায়ের করবেন।