হাড়ক্ষয় এবং এর প্রতিকার
ডা. মোহাম্মদ ইয়াকুব আলী
অস্টিওপোরোসিস বা হাড়ের ক্ষয় রোগ বলতে শরীরের হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়াকে বোঝায়। এতে হাড় অনেকটা মৌচাকের মতো হয়ে যায়। এতে হাড় ঝাঁজরা বা ফুলকো হয়ে যায়। এতে অতি দ্রুত হাড় ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। মারাত্মক হাড়ক্ষয়ে হাঁচি বা কাশি দিলেও ভেঙে যেতে পারে। বয়স বেড়ে গেলে বা বয়স চল্লিশের বেশি হয়ে যাওয়ার পর থেকে শরীরের হাড়ক্ষয় বা এর লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে থাকে। কারও কারও এর আগেও হয়। যাদের ক্ষেত্রে হাড়ের ক্ষয়ের ঝুঁকি বেশি, তাদের দ্রুত হাড়ের ঘনত্ব কমতে থাকে। নারীদের পিরিয়ডের পর হাড়ক্ষয়ের হার দ্রুতগতিতে বেড়ে যায়।
লক্ষণ : শুরুতে হাড়ক্ষয়ের কোনো শারীরিক লক্ষণ প্রকাশ না-ও থাকতে পারে। কোমরে বা পিঠে বা অন্য কোথাও ব্যথা, বিশেষ করে তা ব্যথানাশক ওষুধে কমছে না- এমন ধরনের ব্যথা। কারও কারও দৈহিক উচ্চতা কমে যায়, কুঁজো হয়ে যায় বা সামনে ঝুঁকে থাকে। তবে গোপনে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে মারাত্মক বিষয় হলো, মেরুদণ্ডে ফাটল বা চিড় ধরা এবং ঠুনকো আঘাতেই হাড় ভেঙে যাওয়া।
যাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বেশি : যারা বয়স্ক, ট্রান্সজেন্ডার যারা, যাদের জিনগত ত্রুটি আছে, যাদের অপারেশন করে ডিম্বাশয় ফেলে দেওয়া হয়েছে, হায়পোগোনাডিজমে আক্রান্ত যারা, যাদের উচ্চতা খুবই কম, তারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন।
এছাড়া যাদের শরীরে ভিটামিন-ডি’র ঘাটতি রয়েছে, যারা ধূমপান করে থাকেন, ক্যালসিয়াম, জিঙ্ক, ভিটামিন-এ, কের ঘাটতি রয়েছে যাদের শরীরে, আমিষ-নির্ভর খাদ্যাভ্যাস যাদের, বেশি বয়সে অতিরিক্ত চা, কফি ও চকোলেট গ্রহণের অভ্যাস রয়েছে যাদের, খাবার ও বাতাসে ভারী ধাতু গ্রহণ করেন যারা, অতিরিক্ত কোমল পানীয় ও মদ্যপানের অভ্যাস আছে যাদের, যারা দীর্ঘদিন ধরে অচল, যারা দীর্ঘদিন স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ সেবন করে থাকেন, তাদের এ রোগ হতে পারে। অন্যান্য হরমোনজনিত রোগ, যেমনÑ হাইপারথাইরয়িডিজ, হাইপারপ্যারাথাইরয়িডিজম, কুসিং সিনড্রোম, ডায়াবেটিস, অ্যাডিসন রোগ, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, এসএলই, কিডনি অকার্যকারিতা ইত্যাদি রোগে আক্রান্তরা এই রোগও আক্রান্ত হতে পারেন।
প্রতিকার : হাড়ের ক্ষয় একবার শুরু হয়ে গেলে প্রকারের সম্ভাবনা তেমন বেশি আর থাকে না। তাই প্রতিরোধের চেয়ে প্রতিকারই উত্তম। এক্ষেত্রে করণীয় হলো-
নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। তাতে হাড়ের শক্তি বাড়বে। এ ছাড়া ব্যায়াম করলে হাড়ের রক্ত চলাচলের গতি বেড়ে যাবে। জয়েন্টগুলো সচল থাকবে। শরীরের ভারসাম্য ঠিক রাখার জন্য ব্যায়াম একটি উত্তম পদ্ধতি।
ডাক্তারের পরামর্শে ক্যালসিয়ামথ ও ভিটামিন-ডি জাতীয় খাবার নিয়মিত গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনে সাপ্লিমেন্ট নিতে হবে। ক্যালসিয়ামের জন্য নিয়মিতভাবে মাছ, মাংস, দুধ, ডিম ও দুধজাতীয় খাবার বেশি বেশি খেতে হবে। ভিটামিন-ডির ৯০ শতাংশ উৎস হচ্ছে সূর্যের আলো। তাই প্রতিদিন ১৫ থেকে ৩০ মিনিট সূর্যের আলোয় থাকুন। পাশাপাশি বেশি বেশি সামুদ্রিক মাছ খান। এতে হাড় ভালো থাকবে।
ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করতে হবে। কারণ এগুলো হাড়ক্ষয়ের জন্য বিশেষভাবে দায়ী। ডায়াবেটিস, লিভার, কিডনি রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। তবেই এ রোগ থেকে দূরে থাকা সম্ভব হবে। হাঁটুর হাড়ের ক্ষয় বা অস্টিওআর্থ্রাইটিসের সঠিক পর্যায়ে লেজার মাক্রোফ্র্যাকচার ও স্টেম সেল প্রয়োগে হাঁটু প্রতিস্থাপন বা ছাড়াই সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ সম্ভব।
লেখক : ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ইনস্টিটিউট অব লেজার সার্জারি এবং হাসপাতাল