আরব আমিরাতে ক্যাম্পাস খুলতে চায় বাংলাদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো

মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন আমিরাত থেকে
সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাণিজ্যিক রাজধানী দুবাইয়ে শেষ হওয়া দুদিনের বাংলাদেশ এডুকেশন ফোরাম ২০২৩-এর কর্মকর্তারা বলেছেন, উপসাগরীয় অঞ্চলে লাভজনক শিক্ষার বাজার ব্যবহার করতে ইউএইতে কার্যক্রম শুরু করার জন্য বেশ কয়েকটি বাংলাদেশি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি চেয়েছে।
বাংলাদেশের স্বনামধন্য চারটি বিশ্ববিদ্যালয়– ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ও নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি এখন টাইমস হায়ার এডুকেশনের ১০০০ র্যাংকিংয়ের আওতায় এসেছে। কঠোর প্রতিযোগিতার কারণে পাঠদান ও পাঠ্যক্রমের মানে দ্রুত উন্নতি করায় আরও বেশি সংখ্যক বাংলাদেশি বিশ্ববিদ্যালয় র্যাংকিংয়ে অন্তর্ভুক্ত হতে চলেছে।
আয়োজকরা জানান, গত ১৪ ও ১৫ অক্টোবর দুবাইয়ের দেরা ক্রাউন প্লাজায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ এডুকেশন ফোরাম ২০২৩-এর দ্বিতীয় সংস্করণে শত শত শিক্ষার্থী ও অভিভাবক অংশগ্রহণ করেছিলেন। এটি ১৬৩টি বাংলাদেশি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১৩০টি মেডিকেল ও ডেন্টালের জন্য একমাত্র আন্তর্জাতিক শিক্ষা রোড শো। বাংলাদেশের এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১৪ হাজারের বেশি বিদেশি এবং ৪০ লাখ বাংলাদেশি ছাত্র স্নাতক ও স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামে অধ্যয়ন করে।
আমিরাতে ৬৩৯টি পাবলিক, ৫৮০টি প্রাইভেট স্কুলে মোট ২৫,০০০ অনাবাসিক বাংলাদেশি (এনআরবি) শিক্ষার্থী এবং ১০ লাখেরও বেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের কাছে বাংলাদেশের সাশ্রয়ী মূল্যে বিশ্বমানের শিক্ষার সুযোগকে ছড়িয়ে দেওয়া এবং উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করাই ছিল এবারের আয়োজনের মূল লক্ষ্য।
বিশ্বের অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান থেকে চার বছর মেয়াদি অনার্স (সম্মান) ডিগ্রি পেতে একজন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সেমিস্টার প্রতি সর্বনিম্ন ৫০০ মার্কিন ডলার খরচ হবে। অর্থাৎ চার বছরের কোর্সে ৬ হাজার থেকে ৮ হাজার মার্কিন ডলার খরচ হবে। আবার ৩৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার ডলারে পাঁচ বছর মেয়াদি এমবিবিএস ডিগ্রি সম্পন্ন করা যাবে, যা বর্তমান আন্তর্জাতিক মানের এমবিবিএস ডিগ্রিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সাশ্রয়ী।
এ বিষয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আবু জাফর বলেন, বাংলাদেশ সরকার শিক্ষা খাতকে উচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে এবং প্রতি বছর এ খাতে বার্ষিক বাজেট বরাদ্দ বাড়ছে। এ কারণেই আমরা শিক্ষা ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখতে পাচ্ছি, যা ভালো মানের মানব সম্পদ তৈরি করছে।
‘তবে আমাদের শিক্ষার মান আরও উন্নত করতে হবে এবং আমাদের শিক্ষার্থীদের আরও প্রতিযোগিতামূলক করে তুলতে হবে, যাতে তারা সমাজের সব ক্ষেত্রে তাদের অবদানকে শক্তিশালী করতে পারে। এটা দেখে আনন্দ লাগছে, অনেক বাংলাদেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিদেশি শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করছে এবং আমি আশা করি, তারা জিসিসি দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে পারবে, যেখানে লাখ লাখ শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষায় ভর্তি হতে চায়।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য ড. বিশ্বজিৎ চন্দ্র শিক্ষা খাত সম্প্রসারণে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের তৈরি করার ক্ষেত্রে তাদের পরিষেবাগুলোতে আরও বেশি মাত্রার সম্মতি এবং উন্নতি অনুভব করছি। আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আমাদের সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত করতে সজাগ রয়েছি, যিনি শিক্ষার মান উন্নত করতে আগ্রহী।
ড. বিশ্বজিৎ চন্দ্র বলেন, আমরা আরও আন্তর্জাতিক ফোরাম এবং ফোকাসযুক্ত আলোচনা দেখতে চাই, যাতে আমরা তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে পারি এবং তাদের বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে পারি।
অনেক বাংলাদেশি বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ার স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অংশীদারিত্ব অর্জন করেছে। তারা এখন সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অংশীদারিত্ব খুঁজছে।
আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশের (এআইইউবি) চেয়ারম্যান ইশতিয়াক আবেদিন সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে এআইইউবিতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি ঘোষণা করে বলেন, আমরা জিসিসির শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশে স্বাগত জানাতে চাই। আমি ঘোষণা করতে চাই, যেকোনো শিক্ষার্থী যারা ভর্তি হবে ইউএই থেকে এবং স্কলারশিপের জন্য যোগ্যতা অর্জন করবে, তাদের আমরা আমাদের উচ্চ মানের শিক্ষা থেকে উপকৃত হতে সহায়তা করতে চাই।
বাংলাদেশি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজগুলোকে সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষাবিদ এবং শিক্ষা পরামর্শদাতাদের কাছাকাছি নিয়ে আসার লক্ষ্যে ২০২২ সালে বাংলাদেশ এডুকেশন ফোরাম চালু করা হয়।
অ্যাসোসিয়েশন অব ইউনিভার্সিটিস অব এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিকের (এইউএপি) প্রেসিডেন্ট এবং ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ডা. মো. সবুর খান বলেন, বাংলাদেশ একটি ভালো মানের উচ্চশিক্ষার বাজারের একটি কেন্দ্র হিসেবে উদীয়মান। আগামী বছরগুলোতে বিদেশি ছাত্র বহু গুণ হবে। আমরা চাই, জিসিসি দেশগুলোর ছাত্ররা আমাদের উচ্চ মানের শিক্ষার সুবিধা গ্রহণ করুক, যা সবচেয়ে সাশ্রয়ী।