সিলেট-৩, সংসদ সদস্যের ‘গলার কাঁটা’ দলের সাত নেতা
দৈনিকসিলেট ডেস্ক :
সিলেটের ছয়টি সংসদীয় আসনের মধ্যে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তৎপরতা সবচেয়ে বেশি সিলেট-৩ (দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ) আসনে। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বাদে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের তৎপরতা সে অর্থে নেই বললেই চলে। এখানে আওয়ামী লীগ দলীয় বর্তমান সংসদ সদস্যের পাশাপাশি দলটির আরও সাত নেতা মনোনয়ন পেতে তৎপর। এসব নেতাকে ঘিরে এরই মধ্যে আলাদা আলাদা বলয়ও তৈরি হয়েছে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় প্রতিদিনই আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা বিভিন্ন এলাকায় সভা-সমাবেশ করে প্রার্থিতার বিষয়টি জানান দিচ্ছেন। এ ছাড়া অনেকে এলাকাবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বিলবোর্ড-ফেস্টুন সাঁটিয়ে নিজেদের প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন।
২০২১ সালের ১১ মার্চ করোনায় আক্রান্ত হয়ে সিলেট-৩ আসনের আওয়ামী লীগদলীয় সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস মারা যান। এরপর এ আসনের উপনির্বাচনে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া হাবিবুর রহমান। আসছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন দৌড়ে দলটির আরও সাত নেতা রয়েছেন। স্থানীয় রাজনীতিকেরা বলেন, যাঁরা মনোনয়ন চাইছেন, তাঁদের অনেকের আওয়ামী লীগে গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে। ফলে বর্তমান সংসদ সদস্যের ‘গলার কাঁটা’ হয়ে দাঁড়িয়েছেন অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা।
যোগাযোগ করলে বর্তমান সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি বড় রাজনৈতিক দল। স্বাভাবিকভাবেই এখানে মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যাও বেশি থাকবে। তবে নির্বাচিত হওয়ার পর অনেক বড় প্রকল্পের কাজের অনুমোদন করিয়েছি। অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি। সেতু, কালভার্ট, রাস্তা, পার্ক, স্টেডিয়াম নির্মাণ থেকে শুরু করে অনেক কাজ করেছি, এখনো অনেক কাজ চলমান। এরই মধ্যে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির অন্তত ৯০ শতাংশ আমি পূরণ করতে পেরেছি। ভোটাররাও আমার কাজ নিয়ে সন্তুষ্ট।’
সিলেট-৩ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্যের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের তিনবারের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন নাম মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে উচ্চারিত হচ্ছে।
এ বিষয়ে মিসবাহ উদ্দিন বলেন, ‘আমি মূলত দলের কর্মী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে তৃণমূল থেকে নিয়ে কেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব একাধিকবার দিয়েছেন। দল যাঁকে প্রার্থী করবে, তাঁর পক্ষেই আমার অবস্থান।’
এ ছাড়া আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ইহতেশামুল হক চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ শমসের জামাল এবং ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কফিল আহমদ চৌধুরী, বাংলাদেশ অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রকিব, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ ও সর্ব-ইউরোপীয় বঙ্গবন্ধু পরিষদের উপদেষ্টা মুহাম্মদ মনির হোসাইন এবং ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ মুজিবুর রহমান আলোচনায় আছেন।
সংসদ সদস্য ছাড়া আওয়ামী লীগের সাতজন মনোনয়নপ্রত্যাশীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি তৎপর ইহতেশামুল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের মধ্য দিয়ে আমার রাজনীতিতে হাতেখড়ি। দায়িত্বশীল অনেক পদেও ছিলাম। পরে পেশাগত জীবনে ঢুকেও বিএমএর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম। এখন অবসর জীবনে এসে এলাকার মানুষের জন্য কাজ করছি। দলীয় প্রধান চাইলে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব।’
এদিকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী আট প্রার্থীর বাইরে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা আতিকুর রহমানের সমর্থনে এলাকায় বিলবোর্ড-ফেস্টুন দেখা গেছে। এর বাইরে বিএনপি নির্বাচনে এলে এখানে জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী মনোনয়ন পাবেন বলে জোর প্রচারণা আছে। তিনি ছাড়া যুক্তরাজ্য বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার এম এ সালামও এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে আছেন। এ ছাড়া জামায়াতে ইসলামীর সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে এখানে দক্ষিণ সুরমা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান লোকমান আহমদের নাম শোনা যাচ্ছে।
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ‘বিএনপির এখন নির্বাচন নিয়ে কোনো চিন্তাভাবনা নেই। সরকার পতনের এক দফা দাবিতে বিএনপি এখন আন্দোলন-সংগ্রাম করছে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া কোনো নির্বাচনেই বিএনপি যাবে না। তবে বিএনপি যেহেতু গণমানুষের দল, তাই জনগণকে সঙ্গে নিয়েই আমরা আন্দোলন করছি। তাই নির্বাচন নিয়ে কোনো চিন্তাভাবনা না থাকলেও আমরা এলাকার মানুষ থেকে কোনোভাবেই বিচ্ছিন্ন নই। সুত্র: প্রথম আলো