গণজাগরণ সাংস্কৃতিক উৎসবে সুনামগঞ্জের ৩ মরমী সাধক উপেক্ষিত!
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
গণজাগরণের সাংস্কৃতিক উৎসবে সুনামগঞ্জের প্রধান ৩ মরমী সাধক উপেক্ষিত হয়েছেন। তাঁরা হলেন-মরমী কবি হাছন রাজা, গানের সম্রাট বাউল কামাল পাশা (কামাল উদ্দিন) এবং জ্ঞানের সাগরখ্যাত দূর্বিণ শাহ। জেলার ৫ প্রধান লোককবির গান সরকারী অনুষ্ঠানে পরিবেশনের জন্য জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সিদ্বান্ত থাকলেও এবার উপেক্ষিত হলেন তাঁরা।
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) বেলা চারটায় জেলা শিল্পকলা একাডেমির হাছন রাজা মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠান শুরু হলে রাত পৌনে ৯টা পর্যন্ত চলে। অনুষ্ঠানে বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের তিনটি গান, নৃত্য-কবিতা আর বৈষ্ণব কবি রাধারমণ দত্ত এর বেশ কয়েকটি গান পরিবেশন করা হয়।
বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা জেলা কালচারাল অফিসার আহমেদ মঞ্জুরুল হক চৌধুরী পাভেল’কে অনুরোধ জানানোর পরও অনুষ্ঠানটি করেন তার ইচ্ছেমতো।
জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে ভার্চুয়ালী মাধ্যমে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী।
এ প্রসঙ্গে জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী শামছুল আবেদীন বলেন, আমি অন্যকাজে ব্যস্ত থাকায় প্রোগ্রামে থাকতে পারিনি। তবে জেলার ৫ প্রধান মরমী সাধকদের জাগরনী গান পরিবেশনের পাশাপাশি তাঁদের নামে পরিচালিত সংগঠনগুলোকে প্রাধান্য দেয়া উচিত ছিল।
বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি বাউল শাহজাহান বলেন,জেলা গীতিকার ফোরামকে মাত্র একটি দলীয় গান পরিবেশনের সুযোগ দেয়া হলেও স্থানীয় কোন বাউল সংগঠন এবং বাউল শিল্পীদের গান পরিবেশনের কোন সুযোগ দেয়া হয়নি উৎসবে। বিশেষ করে ৩ মরমী সাধকদের উপেক্ষা করার বিষয়টি দুঃখজনক।
তিনি বলেন, উৎসবটি শিল্পকলা একাডেমির হাছনরাজা মিলনায়তনে হয়েছে। হাছনরাজা পরিবারের একজন লোক অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেছেন অথচ পৌনে ৫ ঘন্টাব্যাপী অনুষ্ঠানটিতে হাছনরাজার একটি গানও পরিবেশন করা হয়নি।
বাউল কামাল পাশা সংস্কৃতি সংসদ এর প্রতিষ্ঠাতা ও সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি সাংবাদিক বাউল আল-হেলাল বলেন, আমি একজন সক্রিয় গীতিকার ও জেলা গীতিকার ফোরামের সহ-সভাপতি পদটিতে সক্রিয় থাকায় প্রবীণ বাউল তছকীর আলীর নেতৃত্বে আমরা বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের একটি গানকে দলীয় সংগীত হিসেবে পরিবেশন করেছি। কিন্তু ৫ প্রধান লোককবির মধ্যে অনুষ্ঠানে উপেক্ষিত ৩ মরমী সাধক জনগনকে জাগরণের অগ্নিমন্ত্রে উজ্জীবিত করতে অনেক গান লিখেছেন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই তাদের গান পরিবেশন করা উচিত ছিল কারণ তাঁদের নামেই সুনামগঞ্জের পরিচয় হয়েছে সারাবিশ্বে। তাঁদের গান বাদ দিয়ে কোন সরকারী অনুষ্ঠান করার চাইতে না করাই ভালো বলে আমি মনে করি। এখানে আরেকটা বিষয় না বললেই নয়,সেটি হচ্ছে এই যে,আমাদের মরমী সাধকরা শারীরিকভাবে হয়তো দুনিয়াতে নেই কিন্তু তাই বলে আমরা এসব মরমী মহাজনদের সাথে বেয়াদবী করতে পারি না। ইতিমধ্যে আমাদের সামনে অনেক উদাহরণ সৃষ্টি হয়েছে যে বা যারা মরমী মহাজনদের সাথে বেয়াদবী করেছে তাদের পরিণতি মানুষ দেখেছে।
প্রসঙ্গত,শিল্প সংস্কৃতিঋদ্ধ সৃজনশীল মানবিক বাংলাদেশ গড়ার অভিলক্ষ্যে ‘অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় শিল্প নিয়ে পৌঁছে যাবো আমরা উন্নতির শিখরে’এই প্রতিপাদ্য নিয়ে গণজাগরণের শিল্প আন্দোলন কর্মসূচি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। শিল্পের সকল শাখার সমন্বয়ে দেশব্যাপী বহুমুখী সাংস্কৃতিক কর্মযজ্ঞের বাস্তবায়িত রুপ ‘গণজাগরণের সংগীত’এই সামগ্রিক উন্নয়ন পক্রিয়ায় সর্বসাধারণকে সম্পৃক্ত ও অনুপ্রাণিত করতে ৫ শতাধিক শিল্পীদের অংশগ্রহণে চলতি মাসের ২-১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলছে এ অনুষ্ঠান।