কঠিন হয়ে গেল সিলেট-৩ আসনের নির্বাচনের হিসাব-নিকাশ
![](https://dainiksylhet.com/images/icon.jpg)
দৈনিকসিলেট ডেস্ক :
আপিলে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন সিলেট-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল। গতকাল নির্বাচন কমিশন থেকে তাকে বৈধ প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়।
এতে কঠিন হয়ে গেল সিলেট-৩ আসনের ভোটের হিসাব। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান এমপি হাবিবুর রহমান। তিনি ২০২১ সালে উপনির্বাচনে জয়ী হয়ে এমপি হয়েছেন। নৌকা প্রতীকে এবার দ্বিতীয় বারের মতো নির্বাচন করছেন। উপনির্বাচনেও নৌকা চেয়েছিলেন ডা. দুলাল। কিন্তু দল থেকে মনোনয়ন পাননি। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে ছিলেন। কিন্তু সিলেটের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে বাছাইয়ে তার মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা করেন।
পরে নির্বাচন কমিশনে আপিল করেন ডা. দুলাল। গতকাল ইসি থেকে তিনি প্রার্থিতা ফিরে পান।
প্রার্থিতা ফিরে পেয়ে সাংবাদিকদের তিনি জানিয়েছেন- ‘আমি সিলেট-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলাম। কিন্তু দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় এবং দল থেকে যখন জানানো হয় স্বতন্ত্র প্রার্থীরা উন্মুক্ত তখন আমি নির্বাচন করার ঘোষণা দিই ও যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই মনোনয়নপত্র জমা দিই। কিন্তু এক শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর সঠিক নয় বলে পারস্পরিক যোগসাজশে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় স্থানীয় সংসদ সদস্য আমার বিরুদ্ধে এখানে একটি প্রত্যয়নপত্র দিয়েছিল। কিন্তু আপিল শুনানিতে নির্বাচন কমিশন আমার মনোনয়নপত্রের বৈধতা দিয়েছেন।’ মাঠে অনেক স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছে, দলীয় প্রার্থী রয়েছে, শেষপর্যন্ত নির্বাচনে থাকবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি শেষপর্যন্ত অবশ্যই নির্বাচনে থাকবো, তবে দল যদি কোনো নির্দেশনা দেয় তা মেনে নেবো।’
ডা. এহতেশামুল বলেন, ‘কোনো মার্কা বা কোনো প্রার্থী আমার প্রতিদ্বন্দ্বী তা নিয়ে আমি কোনো চাপে নেই। আমার কাছে কোনো প্রার্থী বা কোনো মার্কা বিবেচ্য নয়। আমার বিবেচ্য হচ্ছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে থাকা। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আমি যে মার্কাই পাই না কেন, নির্বাচনে থাকবো। এদিকে, ডা. দুলালের প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ায় নির্বাচনের হিসাব কঠিন হয়ে গেছে বলে মনে করেন ভোটাররা। তারা জানিয়েছেন, এমপি হওয়ার পর থেকে সাবেক এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েসের অনুসারীদের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে বর্তমান এমপির। ডা. দুলালের সঙ্গে কয়েসের অনুসারীদের সম্পর্কের উন্নতি ঘটেছে। এ কারণে এবারের নির্বাচনের শুরু থেকে ভোটের মাঠে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন ডা. দুলাল। তাকে নিয়ে তৃৃণমূলের নেতারা ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন। প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ায় ফের তারা ভোটের মাঠে নামতে যাচ্ছেন। এ আসনে এবার হাবিব, দুলাল ছাড়াও প্রার্থী হয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিকুর রহমান আতিক। এ ছাড়া ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) আনোয়ার হোসেন আফরোজ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের জাহেদুর রহমান (মাসুম)। জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক বর্তমান এমপি হাবিবুর রহমান হাবিবের বিরুদ্ধে ইসিতে দ্বৈত নাগরিকত্বের অভিযোগে আবেদন করেছেন। আতিকুর রহমান আতিক জানিয়েছেন, তিনি ইসি’র নজরে বিষয়টি উত্থাপন করেছেন।
আগামীকাল এ নিয়ে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। আতিকের দাবি; দ্বৈত নাগরিকত্ব বিষয়টির সুরাহা না করে হাবিব প্রার্থী হতে পারেন না। আইন সেটা বলে না। সিলেট-৩ আসনে ২০০৮ থেকে পরপর তিনবার এমপি নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের প্রয়াত সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস। শেষদিকে এসে তিনি ছিলেন এ আসনের অপ্রতিদ্বন্দ্বী নেতা। মাঠপর্যায়ে তার জনসমর্থন ছিল। তার মৃত্যুর পর নৌকার টিকিট পান হাবিবুর রহমান হাবিব। তিনি এমপি হওয়ার পর থেকে আওয়ামী লীগের সাবেক প্রয়াত সংসদ সদস্যের ঘনিষ্ঠ নেতাকর্মীরা অসহায় হয়ে পড়েছিলেন। তখন মাঠে নামেন সিলেটের পরিচিত মুখ ডা. দুলাল। ফলে মাহমুদ উস সামাদ বলয়ের নেতারা তার সঙ্গে মাঠে রয়েছেন। আর জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান উপনির্বাচনে প্রার্থী হয়ে ২৪ হাজার ভোট পেয়েছিলেন। তার দিকেও এবার নজর আছে ভোটারের। ফলে ত্রিমুখী লড়াই কী হয়; সেটি বলা মুশকিল বলে জানিয়েছেন ভোটাররা।